দেশে মাটিতে টানা চতুর্থ সিরিজ জয়: হেঁসে খেলে আফ্রিকা বধ
কাদের পলাশ ॥ হেঁসে খেলে আফ্রিকা বধ করে সিরেজ নিজেদের করে নিলো বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা। এ নিয়ে দেশের মাটিতে টানা চতুর্থ সিরিজ জয়ে স্বাদ পেলে বাংলাদেশ। এর আগে জিম্বাবুয়ে, পাকিস্তান, ভারতের সাথে সিরিজ জিতে নেয় টিম বাংলাদেশ। গতকাল বিকেলে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ৭৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে দক্ষিণ আফ্র্রিকা যখন দিশেহারা ঠিক তখন বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ। সিরিজ জয়ের স্বপ্ন ভেস্তে যাচ্ছে বৃষ্টিতে এ আতঙ্ক হানা দিয়েছিল বাংলাদেশের
কোটি কোটি ক্রিকেট আনুরাগীদের মনে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত সাড়ে ৭টায় খেলা শুরু হয়। যদিও ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ১০ ওভার কাটা হয়। বাংলাদশে চলছে বর্ষা মৌসুম। বিষয়টি মাথায় রেখে ভারত বাংলাদেশ সিরিজে রিজার্ভ ডে ছিল। কিন্ত এ ম্যাচে কোনো রিজার্ভ ডে ছিল না। তাই ম্যাচ পরিত্যক্তের সঙ্কাটা একটু বেশি দানা বেঁধে ছিল বাংলাদের ক্রিকেট পাগলদের মনে। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৪০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৬৯ করতে সামর্থ হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বোচ্চ ৫১ রান করেন ডুমিনি। বাংলাদেশের পক্ষ্যে সাকিব ৩৩ রানে ৩, মোস্তফিজুর রহমান ২৪ রানে ২ রুবেল হোসেন ২৯ রানে ২ এবং মাহমুদুল্লাহ ও অধিনায়ক মাশরাফি পেয়েছেন একটি করে উইকেট। পুরো খেলা দক্ষিণ আফ্রিকা যেখানে ওভার প্রতি গড়ে ৪রান করতে হিমশিম খাচ্ছিল সেই পিচে বাংলাদেশ কত স্বাবলীলভাবে ৬ রান করে তুললো। বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন বিজ্ঞাপন সৌম্য সরকার আর অভিজ্ঞ তামিম ইকবালের পিটুনিতে নাস্তানুবুদ আফ্রিকার বোলাররা। অবশ্য এ লে স্কোরের এ সিরিজে সৌম্য সরকারের খেলা দেখে মনে হয়েছে রান তোলা একে বারে সহজ। যদিও নার্ভাস নাইনটিতে এসে দূর্ভাগ্যবশত ইমরান তাহিরের বলে ক্যাচ আউট হন সৌম্য। অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকা কোনো উদযাপন-ই করলো না। সৌম্য মাত্র ৭৫ বলে করেন ৯০রান। তামিম ৭৭ বলে ৬১ রান ও লিটন দাস ৫ বলে ৫রান করে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশ পায় ৯ উইকেটের বিশাল জয়। বলা চলে দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের উপহার দিলেন বাংলার টাইগাররা। টাইগারদের প্রতি দেশবাসীর আবেগ, চাওয়া, ভালোবাসা অপরিসীম। সেই টাইগাররাই দেশবাসীকে দিলেন অতুলনীয়, অমূল্য ঈদ উপহার। বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তি দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথমবার সিরিজ জয়ের অর্জনে ভাসলো বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের সিরিজ বাংলাদেশ জিতেছে ২-১ ব্যবধানে। চলতি বছরে এটি টানা তৃতীয় সিরিজ জয় মাশরাফির দলের। সিরিজ জয়ের ম্যাচটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে মাশরাফি ও সাকিবের ২০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করার রেকর্ড। এদিন বৃষ্টি বিঘিœত ৪০ ওভারের ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে দক্ষিণ আফ্রিকা ৯ উইকেটে ১৬৮ রান করে। জবাবে ২৬.১ ওভারে ১ উইকেটে ১৭০ রান তুলে ম্যাচ জিতে নেয় টাইগাররা। সাগরিকার স্লো, লো উইকেটে ১৬৯ রানের টার্গেট খুব সহজ ছিল না। কিন্তু তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের আধিপত্য মার্কা ব্যাটিংয়ে প্রোটিয়াদের স্কোরটা মামুলি হয়ে যায় বাংলাদেশের জন্য। ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন সৌম্য। প্রোটিয়াদের শক্তিশালী বোলিং লাইনটাও নেমে আসে সাধারণের কাতারে। দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো বোলারই সুবিধা করতে পারেননি। ৭.৪ ওভারেই আসে বাংলাদেশের পঞ্চাশ রান। যেই উইকেটে আমলা-ডু প্লে সিসরা সংগ্রাম করেছেন সেখানে সৌম্য সাজিয়েছেন উইকেটের চারপাশে দৃষ্টিনন্দন শটের পসরা। ১৫.৩ ওভারে একশো রান তোলো বাংলাদেশ। ৪১ বলে ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরিটাও পূর্ণ করে ফেলেন সৌম্য। যা বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকা লড়াইয়ে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড। ইনিংস জুড়ে সৌম্যর পাশে ম্লান হয়েই ছিলেন তামিম। তিনি ৩১তম হাফ সেঞ্চুরিটা পূর্ণ করেন ৭০ বলে। দলকে জয় থেকে ১৬ রান দূরে রেখে আউট হন সৌম্য। ১৫৪ রানে বিচ্ছিন্ন হয় তামিম-সৌম্য জুটি। ইমরান তাহিরের বলে শর্ট কভারে আমলার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন সৌম্য। ৭৫ বলে ৯০ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলেন এই তরুণ। যেখানে ছিল ১৩টি চার ও ১টি ছয়। পরে তামিম-লিটন দলকে জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন। প্রোটিয়াদের পক্ষে ইমরান তাহির নেন ১ উইকেট। এর আগে টসে হেরে বোলিং করতে নামা বাংলাদেশকে শুরুতেই উল্লাসের উপলক্ষ এনে দেন মুস্তাফিজ। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ডি ককের (৭) লেগ স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলেন এই বাঁহাতি পেসার। নিজের দ্বিতীয় ওভারে আঘাত হানেন সাকিব। সুইপ খেলতে গিয়ে ডু প্লেসিস (৬) ক্যাচ দেন। তৃতীয় উইকেট জুটিতে হাশিম আমলা-রুশো প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। আমলাকে নিজের ২০০তম শিকার বানিয়ে সেই চেষ্টা থামিয়ে দেন সাকিব। আমলার (১৫) ব্যাটে চুমো দিয়ে বল জমা পড়ে মুশফিকের গ্লাভসে। রাজ্জাকের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি বোলার হিসেবে সাকিব ২০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন। দলীয় ৫০ রানে রুশো (১৭) মাহমুদউল্লাহর শিকার হলে চার উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। পঞ্চম উইকেটে মিলার-ডুমিনি ২৮ রান যোগ করতেই নামে বৃষ্টি। খেলা বন্ধ হওয়ার সময় ২৩ ওভারে প্রোটিয়াদের সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেটে ৭৮ রান। বৃষ্টির কারণে প্রায় তিন ঘন্টা পরে শুরু হওয়া ম্যাচে ব্যাট হাতে আক্রমণ শুরু করেন মিলার-ডুমিনি। তাদের ৬৩ রানের জুটি ভাঙেন মাশরাফি। ৩০তম ওভারে মিলারকে নিজের ২০০তম শিকার বানান তিনি। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে উড়ন্ত পাখি হয়ে মনোলোভা ক্যাচ নেন সাব্বির। রাজ্জাক, সাকিবের পর তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ২০০ উইকেট নেন নড়াইল এক্সপ্রেস। ওয়ানডে ক্রিকেটে একম্যাচে দুজন বোলারের ২০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করার ঘটনা এটিই প্রথম। মিলার ৪৪ রান করেন। ষষ্ঠ উইকেটে বেহারডিনের সঙ্গে ডুমিনির ৩৬ রানের জুটি থামান সাকিব। লং অনে শূন্যে ভেসে বেহারডিনের (১২) দুর্দান্ত ক্যাচ তালুবন্দী করেন সাব্বির। ৩৭তম ওভারে মুস্তাফিজের স্লোয়ার অফ কাটারে রাবাডা বোল্ড হন। ৬৭ বলে ২১তম হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ডুমিনি। ইনিংসের শেষ ওভারে লক্ষ্যভেদী ইয়র্ককারে অ্যাবোটের স্ট্যাম্প ছত্রখান করেন রুবেল। শেষ বলে ডুমিনিও রুবেলের শিকার হন। ডুমিনি ৫১ রান করেন। সাকিব ৩টি, মুস্তাফিজ-রুবেল ২টি, মাশরাফি-মাহমুদউল্লাহ ১টি করে উইকেট পান।