পরিবারেই নির্যাতনের শিকার শিশু!
পড়ালেখা, দুষ্টামি এমনকি খাওয়া দাওয়া নিয়ে পরিবারে হরহামেশা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয় শিশুরা।
সম্প্রতি এ বিষয়ে রাজধানীর একটি স্কুলের শিশুদের সঙ্গে কথা বলে হ্যালো।
স্কুলটির অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে রাইয়ান হাসান।
ও বলে, “পড়ালেখায় একটু খারাপ করলে বা পরীক্ষায় কম নম্বর পেলেই মা-বাবা বকাঝকা করেন। কথায় কথায় গায়ে হাত তোলাও এখন স্বাভাবিক ব্যাপার।
“আম্মু আমাকে বিছানার ঝাড়ু ও লাঠি দিয়ে মারেন।
এসব কারণে নিজের বাড়িতেই ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় তাকে।
বড় হয়ে যাওয়ায় এখন আর সাফওয়ানের গায়ে হাত তোলেন না তার মা বাবা।
ও বলে, “আগে মারধর করতেন মা বাবা। এখন করেন না। তবে কারণে অকারণে প্রায়ই বকাঝকা শুনতে হয় আমাকে।”
পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল, পড়া না শেখা, বাড়ির কাজ না করার করার কারণেই বেশি বকা শুনতে হয় তাকে।
এ ব্যাপারে কথা হয় লিপু আহমেদ নামের একজন অভিভাবকের সঙ্গে।
তিনি বলেন, “বাচ্চাকে মারধর করলেই ভালো করে পড়াশোনা করে। নয়তো তারা পড়াশোনা করে না। তাই বাধ্য হয়েই গায়ে হাত তুলতে হয়।”
এই পারিবারিক নির্যাতনের ব্যাপারে হ্যালোর সঙ্গে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মিজানুর রহমানের সঙ্গে।
তিনি বলেন, “লেখাপড়া কেন, কোনো কারণেই সন্তানকে মারধর করা ঠিক নয়। বাবা মার উচিত সন্তানকে বুঝিয়ে বলা।
“তারা যদি নিজেদের ছোটবেলার কথা মাথায় রাখেন তবে সন্তানদের সঙ্গে এমন করতে পারবেন না। তারা এখন ছেলে মেয়েদের চাপ দিচ্ছেন। একসময় তারাও এ অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছেন।
“এ বিষয়টি অনুধাবন করে সন্তানরা কোনো ভুলক্রটি করলে বা পরীক্ষায় খারাপ করলে, তাদের বুঝিয়ে বলতে হবে। শাসনের মাধ্যমে শুধরে দেয়া যেতে পারে কিন্তু মারধর নয়।”
তিনি আরও বলেন, “প্রত্যকেটি শিশুকে নিজের মতো করে বাড়তে দিতে হবে। সন্তানকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন থেকে মুক্তি দিতে হবে।”
শাসন করতে বেশিরভাগ মা-বাবাই শিশুদের পিটুনি দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে উঠে এসেছে এর ব্যাপকতা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এই জরিপে বলা হয়, দেশে ৭৩ দশমিক ছয় শতাংশ শিশু বাবা-মার হাতে নির্যাতনের শিকার হয়। সেখানে বলা হয় খাওয়াতে, পড়াতে আর শৃঙ্খলা শেখাতে গিয়ে মা-বাবারা বেশি মারধর করে থাকেন।
পাঁচ মাস ধরে ৫৯ হাজার ৮৯৫টি পরিবারের ৭৫ হাজার ৯০৭ জন শিশুর উপর এ জরিপ করা হয়।