নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘর গোছাচ্ছেন এরশাদ
প্রতিবেদক।। গত ১৬ মে জাপার অষ্টম জাতীয় সম্মেলনের পর থেকেই দলকে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে মাঠে নেমেছেন জাপার শীর্ষ নেতারা। আগাম নির্বাচনকে মাথায় রেখে সারাদেশে তিনশ প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়াও শুরু করেছে দলটি। ইতিমধ্যে জাপার কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এবার অপেক্ষাকৃত তরুণ, সাবেক ছাত্রনেতা, প্রবাসী এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পার্টির পক্ষে যারা পজেটিভ প্রচার চালাচ্ছেন তাদের প্রাধান্য দিয়ে কমিটি সাজিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। জাপার গঠনতন্ত্রে (২০)-এর ক ধারার ক্ষমতাবলে কমিটির পরিধি বাড়িয়ে নির্বাহী কমিটির বাইরে আরও শতাধিক কেন্দ্রীয় সদস্য করা হয়েছে। এবিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় বিবার্তাকে বলেন, নেতাকর্মীদের মূল্যায়নের কথা চিন্তা করেই দলের চেয়ারম্যান এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জাপা সূত্রে জানা গেছে, ১ অক্টোবর সিলেটে হযরত শাহজালালের (রাঃ) মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করার জন্য মাঠে নামবেন। তার সিলেট আগমন উপলক্ষে দলের মহাসচিবের নেতৃত্বে সিনিয়র নেতাদের একটি টিম ৯ সেপ্টেম্বর সিলেট সফর করেছে। জেলা ও বিভাগীয় সফর এবং জনসভা শেষে ডিসেম্বরে রাজধানীতে বড় ধরণের একটি শোডাউন করতে চায় দলটি। পার্টিকে শক্তিশালী করতে আগামী ডিসেম্বরে ঢাকায় মহাসমাবেশ করারও চিন্তাভাবনা করছে দলটি। এই মহাসমাবেশ থেকে আগামী নির্বাচন এককভাবে করার ঘোষণা দেবে বলে দলের নীতিনির্ধারকরা জানান। জাতীয় পার্টির ৭৬টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে এখনো যে ১৫টি জেলায় সম্মেলন বাকি রয়েছে, শোডাউনের আগেই এসব জেলার সম্মেলন শেষ করতে চায় দলটি। এসব জেলায় পরীক্ষিত নেতাদের নেতৃত্ব আনার কথা ভাবছেন দলের নীতিনির্ধাকরা। ইতিমধ্যে প্রতিটি জেলায় সিনিয়র নেতাদের নেতৃত্বে সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়েছে। টিমের প্রধানকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জেলার বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থা কেন্দ্রকে অবহিত করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই হিসেবে ২০১৮ সালের শেষ অথবা ২০১৯ সালের শুরুতে সংসদ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কোনো কারণে যদি আগাম নির্বাচন হয় বা না-ই হয়, তারপরও একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে এখন থেকেই মাঠে কাজ শুরু করে দিয়েছে দলটি। দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দুইটি লক্ষ্য নিয়ে সামনে এগোচ্ছেন। প্রথমটি হচ্ছে দলকে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী করা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে আগামী নির্বাচনে এককভাবে অংশ নিয়ে জয়লাভ করে সরকার গঠন করা। এ দুটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে এখন থেকে মাঠে নেমেছে দলটি। এ লক্ষ্যে ঈদের আমেজ কাটতে না কাটতেই মাঠে নেমে পড়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা। ১৭ সেপ্টেম্বর দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপির নেতৃত্বে প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান রত্না এমপি, ভাইস-চেয়ারম্যান অধ্যাপক মহসিন ইসলাম হাবুল, যুগ্ম-মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসেন মানিকসহ সিনিয়র নেতারা বৃহত্তর বরিশালে তৃণমূল পর্যায়ে সভা-সমাবেশ করছেন। এছাড়া প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সল চিশতির নেতৃত্বে কুমিল্লা দক্ষিণ, ভাইস-চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান খান ও আব্দুস সালামের নেতৃত্বে গাজীপুর, ১৮ সেপ্টেম্বর ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নুরুর নেতৃত্বে কক্সবাজারে কর্মীসভায় যোগ দিচ্ছেন। চলতি মাসেই প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইদুর রহমান টেপা বৃহত্তর ফরিদপুর অর্থাৎ গোপালগঞ্জ, মাদারিপুর, শরিয়তপুর, রাজবাড়ি সফর করবেন। এছাড়া আগামী মাসে প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক, এ.টি.ইউ তাঁজ রহমান, মো. সেলিম উদ্দিন এমপি, ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এমপি, মুনিম চৌধুরী বাবু এমপি, পীর ফজলুর রহমান মিছবাহ এমপির নেতৃত্বে বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা সফর করবেন। কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি ও সোলাইমান আলম শেঠ যাবেন তিন পার্বত্য জেলায়। অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ সিরাজুল ইসলাম ও যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু যাবেন মুন্সিগঞ্জে। প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম আব্দুল মান্নান, ভাইস-চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নুরু, সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল আলম রুবেল, সুলতান মাহমুদ এবং ছাত্রসমাজের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিরুর নেতৃত্বে একটি টিম যাবে মানিকগঞ্জে। জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা রিন্টু আনোয়ার, ভাইস-চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, যুগ্ম-মহাসচিব মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক ও নাজমা আকতারের নেতৃত্বে ফেনী এবং শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ এমপি, নুরুল ইসলাম ওমর এমপি, আলতাফ হোসেন এমপি ও তিতাস মোস্তফা যাচ্ছেন জয়পুরহাট ও বগুড়ায়। হঠাৎ করে জাপার এই সরব কর্মসূচি প্রসঙ্গে দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি বিবার্তাকে বলেন, দলটি দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে। জাতীয় পার্টির স্বার্থান্বেষী অনেক বড় নেতা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেও মাঠপর্যায়ের কোনো নেতা বা কর্মী আমাদের ছেড়ে যায়নি। এরাই আমাদের প্রাণ। আমরা চাই আমাদের এই কর্মসূচির মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে ঝিমিয়ে থাকা কর্মীদের জাগ্রত করা। ইতিমধ্যে আমাদের এই কর্মসূচিতে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। পাশাপাশি আগামী নির্বাচন যখনই অনুষ্ঠিত হোক, আমরা আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাই।