চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনায় থেমে নেই জাটকা নিধন
চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনায় থেমে নেই জাটকা নিধন। অসাধু জেলেদের হাত থেকে দুই-তিন ইঞ্চি আকারের ইলিশের পোনা রক্ষা পাচ্ছে না । একদিকে জাটকা রক্ষা কার্যক্রম অপর দিকে জাটকা নিধন চলছে সমান তালে। এর পেছনে সম্পৃক্ত রয়েছে একটি প্রভাবশালী চক্র ও পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী। ধৃত এ জাটকা বিভিন্ন কাভার্ড ভ্যানে করে পাচার হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। আর কিছু বিক্রি হচ্ছে খুব গোপনে চাঁদপুর শহরের অলিগলি ও গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে। অথছ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি জাটকা রক্ষা কার্যক্রম অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেক ভালো ভাবে চলছে।
চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনায় (১মার্চ-৩০ এপ্রিল) দুই মাস সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ। ইলিশ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত ২০০৬ সাল থেকে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর ১শ কিলোমিটার এলাকায়সহ দেশের ৫টি অঞ্চলে এ কর্মসূচি চলে আসছে। মেঘনা ও পদ্মা নদীর চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত একশ’ কিলোমিটার এলাকায় চলে এ কার্যকম। জাটকা ইলিশের পাঁচটি প্রধান বিচরণ ক্ষেত্র নিন্ম পদ্মা ও মেঘনা নদী, শাহবাজপুর চ্যানেল, তেতুলিয়া নদী ও আন্দার মানিক নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ।
চাঁদপুরের সীমানায় এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য জেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, কোষ্টগার্ড, নৌ-পুলিশ, নৌ-বাহিনীকে বিশেষ ভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। যদিও নৌ পুলিশ আর মৎস্য বিভাগাগের বিরুদ্ধে রয়েছে নানান অভিযোগ। কোন কোন ক্ষেত্রে তারা নিজেরাই জাটকা শিকারী ও জাটকা ব্যবসায়ী দাদনদারদের সাথে মিলে-মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। ফলে সরকারের এ কর্মসূচি ভেস্তে যেতে বসেছে।
বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য চাঁদপুর জেলার হাইমচরে মেঘনা নদীতে জেলেরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে জাটকা মাছ নিধন করছে। হাইমচরের তেলির মোড়ের খোকন ও মমিন দালালসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে প্রায় অর্ধশতাধীক জেলে নৌকা নদীতে মাছ শিকার করে। এই দুই দালাল প্রশাসনকে নৌকাপ্রতি ১০ হাজার টাকা দিয়ে টোকেন মাধ্যমে নির্ধারিত জেলে নৌকা নদীতে মাছা শিকার করতে দেয় বলে জানা গেছে।
মো. সাহেব আলী, নাহিদ ও আবদুর রবসহ কয়েকজন জেলে জানান, যত কিছুই হোক আগে কারেন্ট জাল উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। তারা জানায়, চাঁদপুর পুরান বাজারের জাল বিক্রি দোকান গুলোর গোডাউনে প্রচুর কারেন্ট জাল রয়েছে। আমরা কিনতে গেলে পেছন থেকে বা অন্য কোথাও থেকে এনে দেয়। তারা আরো জানান, মুন্সিগঞ্জে মুক্তারপুর ব্রিজের কাছে কয়েকশ কারেন্ট জালের ফ্যাক্টরী রয়েছে।
চাঁদপুর সদর নৌ পুলিশের ইনচার্জ মোশারফ হোসেন জানান, নৌ পুলিশের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। এতো বড় নদী নজরদারিতে রাখা সত্যিই অনেক কঠিন কাজ। এদিকে অসাধু চক্র শিশুদেরও এ কাজে নামাচ্ছে তাই প্রশাসনেরও একটু বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। তার পরেও নজর দারির কামতি নেই বলে দাবি করেন তিনি।
জেলা মৎস্য কর্মকতা মো. সফিকুর রহমান জানান, অন্যান্য বছরের চাইতে এ বছর সফল ভাবে কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩শ ৫২জন জেলেকে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া আরো প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা জরিমানা আদায় করে সরকারি কোষাগারে জামা দেয়া হয়েছে। একর্মসূচি ৮০ভাগ সফল দাবি করে তিনি আরো বলেন, বিগত বছরের চাইতে আগামীতে অনেক বেশি ইলিশ উৎপাদন হবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত
করেন। এছাড়া জেলেরা সরকারি সহায়তাও (৪০ কেজি চাল) পেতে শুরু করেছে।
সরকারি হিসেবে চাঁদপুরে নিবন্ধতি জেলের সংখ্যা ২৮ হাজার ৯শ ৬৭জন। অভয়াশ্রম চলাকালে প্রথমবার কেউ নদীতে জাল ফেললে এক মাস হতে সর্বোচ্চ ছয় মাস সশ্রম কারাদন্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা এবং পরবর্তী প্রতিবার আইন ভঙ্গের জন্য কমপক্ষে ২ মাস হতে ১ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং ২ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।