বিদায় ১৪২১। স্বাগত ১৪২২

 In জাতীয়, প্রধান খবর, লিড নিউজ, শীর্ষ খবর




বাঙালির হাজার বছরের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, উত্সব, নৃত্য, নাট্য, গীত, বাউল গান, পালাগান, লোকাচার, প্রাত্যহিক জীবনযাপন প্রতিক্ষেত্রেই রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। সেই ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে ঝাঁকে ঝাঁকে থাকা ঐতিহ্যের সারাত্সার গ্রহণ করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি সামনের দিকে। বর্তমানকে মেলাবার আর ভবিষ্যতের সুখস্বপ্ন দেখার, ছবি আঁকার। মুসলিম, হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এক পঙক্তিতে দাঁড়িয়ে উচ্চকণ্ঠে গাইবে, তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে। একাকী ঘরে ফিরবে, তখন তার কণ্ঠে থাকবে স্বরূপ অন্বেষার গান,

মনের মানুষ খুঁজে ফেরার গান।



মধ্যযুগে বাংলায় পয়ার ছন্দে কবিতা লিখে কবি সৈয়দ সুলতানকে বিশ্বাসঘাতক নামের কলঙ্কিত উপাধি মাথা পেতে নিতে হয়েছিল। আবার সেই মধ্যযুগেই বিপুল উত্সাহেই আরাকানের রোসাং রাজসভায় গভীর দেশপ্রেমের চেতনায় বাংলা চর্চা হতে দেখেছি। এই ভাষার জন্য জীবন দিয়ে এদেশের তরুণেরা ইতিহাস রচনা করেছে। তারই পথ বেয়ে স্বাধীনতা এসেছে। ভাষার কারণেই পৃথিবীর সব জাতির মধ্যে ব্যতিক্রম এবং ভাগ্যবান আমরা। বাংলাভাষাকে কেন্দ্র করেই আমাদের জাতিতে জাতিতে, বর্ণে বর্ণে, ধর্মে ধর্মে মিলন। বটের ঝুরিতে সুতো বাঁধা, দলবেঁধে পীরের দরগায় চেরাগ জ্বালার ইতিহাস বাঙালির সার্বজনীনতার বহিঃপ্রকাশ। অমৃত দীপিত চন্দ্র সূর্যের আলোয় বাংলার মাটিতে তাই আমরা পাই আনন্দ আশ্চর্যের সাক্ষাত্কার।



আমাদের প্রাণের প্রিয় বাংলাকে চিনতে বুঝতে এবং তার স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশকে খুঁজতে, হূদয়াঙ্গম করতে আমাদের বারবার দাঁড়াতে হয় পহেলা বৈশাখের কাছে। ডাক দিয়ে বলতে হয়, এসো হে বৈশাখ, উড়িয়ে নাও বত্সরের জমে থাকা আবর্জনা, মলিনতা। আলোকের ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও, স্নাত হয়ে শুদ্ধ হই।



বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বর্ষবরণ উৎসবটি অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর রমনার বটমূলে। এটি প্রায় ৫০ বছর ধরে আয়োজন করে আসছে দেশের শীর্ষস্থানীয় সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। কৃষির সঙ্গে বাংলা নববর্ষের ঘনিষ্ঠতা জড়িয়ে আছে এ সন প্রবর্তনের সূচনা থেকেই। মোগল সম্রাট আকবর প্রচলন করেন বাংলা সনের। এর আগে মোগল বাদশাহরা রাজকাজে ও নথিপত্রে ব্যবহার করতেন হিজরি সন। হিজরি চান্দ্র বছর, যা ন্যূনধিক ৩৫৪ দিনে পূর্ণ হয়। কিন্তু সৌর বছর পূর্ণ হয় ন্যূনধিক ৩৬৫ দিনে। বছরে প্রায় ১১ দিনের পার্থক্য হওয়ায় হিজরি সন আবর্তিত হয় এবং ৩৩ বছরের মাথায় সৌর বছরের তুলনায় এক বছর বৃদ্ধি পায়। কৃষকের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করতে হলে সারা দেশে একটি অভিন্ন সৌর বছরের প্রয়োজন। আর এ ধারণা থেকেই সম্রাট আকবর ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ বা ১১ই মার্চ থেকে বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। তা কার্যকর হয় তার সিংহাসন আরোহণের সময় অর্থাৎ ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই নভেম্বর থেকে। আকবরের নবরত্ন সভার আমির ফতেউল্লাহ খান সিরাজী বাংলা সন প্রবর্তনের কাজটি সম্পন্ন করেন।



প্রথমে এর নাম ছিল ফসলি সন। পরে তা বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত হয়। বৈশাখ নামটি নেয়া হয়েছিল নক্ষত্র বিশাখার নাম থেকে। আর সেই থেকে ক্রমান্বয়ে নববর্ষের ব্যাপ্তি আরও বিস্তৃত হয়েছে। এখন এটি রূপান্তর হয়েছে বাঙালি লোকজ উৎসবে। কালের বিবর্তনে নববর্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক পুরনো উৎসবের বিলুপ্তি ঘটেছে, আবার সংযোগ ঘটেছে অনেক নতুন উৎসবেরও। বাংলা সন। বৈশাখ। এ দুটির সঙ্গে হালখাতা জড়িয়ে আছে ঐতিহ্য হয়ে। তবে পুরনো এ হালখাতার ঐতিহ্য এখন খুব কমই দেখা যায়। যদিও অতীতে বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। চিরাচরিত এ অনুষ্ঠানটি আজও পালিত হয়। তবে তা কম।



রাজধানীতে বর্ষবরণকে ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। দিনটিকে নির্বিঘ্নে উদযাপন করতে শহরজুড়ে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা। রমনা উদ্যানসহ বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। রমনা বটমূলে মূলমঞ্চ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে গতকালই। মঙ্গল শোভাযাত্রার সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে এদিন।



বিকালে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নববর্ষের শুভেচ্ছাসংবলিত ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে রমনা উদ্যান। বটতলায় তৈরি করা হয়েছে পহেলা বৈশাখের মূলমঞ্চ। ছায়ানটের শিল্পীদের সম্মিলিত পরিবেশনা থাকবে এখানে। মূলমঞ্চ ছাড়াও বেশ কয়েকটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। নববর্ষকে ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে নবরূপে সাজানো হয়েছে। এখানে উন্মুক্ত অনুষ্ঠান পরিবেশনা ছাড়াও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বর, হাকিম চত্বর, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়ও চলবে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। ক্যাম্পাসের প্রবেশপথসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো রাস্তায় আঁকা হয়েছে বৈশাখের আলপনা। সকাল থেকে শুরু হয়ে সারা দিনই চলবে নানা অনুষ্ঠান। বাংলা একাডেমি বর্ষবরণের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে। একইভাবে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন সকালে বেলুন উড়িয়ে নববর্ষ উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করবে।
তথ্য সূত্র : অনলাইন

Recent Posts

Leave a Comment