চাঁদপুরে অস্তিত্ব সংকটে বিএনপি
স্টাফ রিপোর্টার:
চাঁদপুরের রাজনীতিতে গভীর সংকটে পড়েছে বিএনপি। এক সময় ‘চাঁদপুরের মাটি বিএনপির ঘাটি’ বলে বিবেচিত হলেও আজ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে দলটি। এ থেকে উত্তরণে কোন পথও দেখা যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরেই জেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দ নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়েই বেশি ব্যস্ত। যার প্রমান সদ্য সমাপ্ত চাঁদপুর পৌর নির্বাচনে অনেকটা হাত ধরে আওয়ামী লীগকে মেয়র পদে বসিয়ে দিয়েছে তারা।
ক্ষমতাসীন দলের নির্দেশে সরকারি মামলা-হামলার শিকার নেতাদের আতœগোপন, দলীয় গ্রুপিং, অঙ্গ সংগঠনগুলোতে পুতুল নেতৃত্ব বসানো, প্রকৃত রাজনীতিবিদদের হাতে নেতৃত্ব না থাকাসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত চাঁদপুর জেলা বিএনপি। এসব কারনে হতাশায় ভুগছে মধ্যম সারির নেতারা। তবে তৃণমূলের নেতাকর্মী, বিএনপিপন্থী বিভিন্ন পেশাজীবী ও সমর্থকরা হতাশ হলেও মনের মধ্যে আশা জিইয়ে রেখেছে সুদিনের অপেক্ষায়।
বিগত হরতাল-অবরোধের সময় জেলা বিএনপি নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে ব্যর্থ হয়। সাংগঠনিক দুর্বলতার কারনে প্রথমদিকে দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া অল্প সময়ে স্বাভাবিক হয়ে আসে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনসহ জনজীবন। অপরদিকে চাঁদপুরে আন্দোলন নিষ্ক্রিয় করতে পুলিশ ২২টি মামলায় প্রায় ৭ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করে। ক্রমান্বয়ে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা-কর্মীরা ২২ মামলায় আসামি হয়ে আতœগোপনে চলে যায়। ফলে আন্দোলনের একপর্যায়ে নেতাশূন্য হয়ে পড়ে জেলা বিএনপি। এরই সুযোগে গত ২৯ এপ্রিল চাঁদপুর পৌর নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করে সরকার। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান সরকার বিএনপিকে হতাশায় ডুবিয়ে পৌর মেয়রের পদটি নিজেদের ঘরে তুলে নেয়।
এদিকে গত ২৯ মার্চের পৌর নির্বাচন বিবৃতির মাধ্যমে জেলা বিএনপি বর্জন করায় পৌরবাসীসহ বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে চরম হতাশার জন্ম দিয়েছে। তাদের মতে কতটা খাঁদের কিনারে দাঁড়ালে বা দল অস্তিত্ব সংকটে পড়লে নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে আওয়ামী লীগ নেতার বিজয়ে অভিনন্দন বার্তা দেয়া হতে পারে- তা কেবল রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাই ভালো বলতে পারেন।
এসব কারনেই জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনের সর্বত্রই চাউর রয়েছে- শেষ পর্যন্ত বিপর্যস্ত জেলা বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কী? একের পর এক মাঠ পর্যায়ে কোনঠাসা হয়ে পড়া বিএনপি সরকারি দল আ’লীগের পূর্ণশক্তির সাথে মাঠের রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান করতে পারবে কি-না এ নিয়ে খোদ বিএনপির মধ্যেই এখন চলছে হিসেব-নিকেশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা-কর্মী জানায়, জেলার রাজনীতিতে বিএনপি পিছু হটাকে গভীর সংকট হিসেবেই মনে করছেন তারা। তাদের মতে, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে যে সষ্পৃতির বন্ধন ছিল তা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। আর এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে চাঁদপুরের বিএনপি’র রাজনীতিতে শূন্যতা সৃষ্টি হতে পারে।
অপরদিকে চাঁদপুর পৌর নির্বাচনে জোর করে জয় ছিনিয়ে নিয়েও জেলা আ’লীগ এখন অনেকটাই ফুরফুরে আমেজে রয়েছে। এছাড়াও জেলার ৫টি সংসদীয় আসন, ৬টি উপজেলা চেয়ারম্যান পদসহ অন্যান্য স্থানীয় সরকার পদগুলো নিজেদের আয়ত্বে রাখতে পেরে আ’লীগ অনেকটাই শক্ত অবস্থান করে নিয়েছে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে। এমনকি আরেকটি সুত্রে জানা গেছে, বিএনপিপন্থী ইউপি চেয়ারম্যানদের সরিয়ে দেয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহবুব আনোয়ার বাবলু জানান, পুলিশের মামলা-হামলায় নেতাকর্মীরা স্বস্তিতে নেই। অনেকেই এখন এসব মিথ্যা ও হয়রানীমূলক মামলায় পালিয়ে থাকছেন। তিনিবলেন, জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকও ঘটনাস্থলে না থেকেও ২টি বিপজ্জনক মামলার আসামি হয়েছেন। তিনি মন্তব্য করে বলেন, সুদিন একদিন আসবেই, গণতন্ত্রের বিজয় হবেই হবে ইনশাল্লাহ।