এ এক নতুন বাংলাদেশ, বদলে যাওয়া বাংলাদেশ

 In খেলাধুলা, খোলা কলাম, প্রধান খবর, লিড নিউজ

কাদের পলাশ



তামিম আউট তাতে কী? সাকিব আছে না? সাবিক আউট তাকে কী? মুশফিক আছে না? দেশের সব চেয়ে বড় ক্রিকেট বিজ্ঞাপনগুলো আউট তাতে কী? নওজোয়ান নাছির, সাব্বির, সৌম্য, লিটন তো আছে। আমরা এখন সবার মাঝেই ভরসা খুঁজে পাই। বিশ্বাস নির্ভরতা আর আস্থার প্রতীক জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রতিটি খেলোয়াড়। একসময় পেস বোলার সংকেট ভোগলেও এখন বিশ্ব মানের অনেক বোলার আছে আমাদের। এখন রির্জাভ বেঞ্চেও বসে থাকে অনেক দাপটি ব্যাটসম্যান ও বোলার। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অন্যতম ক্রিকেট পরাশক্তির দল অনেক আগেই বুঝে গেছেন ক্রিকেটের মোড়লরা। বাংলাদেশকে নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের দিন অতীত হয়েছে আরো দুই তিন বছর আগেই। বাংলাদেশ এখন অনেক ধারবাহিক। একসময় একটা জয়ের জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষায় থাকতো বাংলার ক্রিকেট পাগলা মানুষগুলো। এখন আমরা প্রত্যেক ম্যাচ জেতার জন্য মুখিয়ে থাকি। এখন একটা ম্যাচ নয়, সিরিজ জিতেও হোয়াইটওয়াশ করতে মরিয়া হয়ে থাকি। বিশ্বের ক্রিকেট বোদ্ধারাও স্বীকার করে নিচ্ছে এ বাংলাদেশ নতুন এক বাংলাদেশ। বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।



চলতি সিরিজে ভারত র‌্যাংকিং এ ২ নাম্বারে থেকেও যেভাবে হারছে তাতে বুঝানোর উপায় নেই বাংলাদেশ কত ভালো খেলছে। গত ১৬ ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশ জিতেছে ১৩টিতে। আর ভারত ১৬ ম্যাচের মধ্যে জিতেছে মাত্র ৬টি ম্যাচ। ভারত যে হোয়াইটওয়াশ হচ্ছে এটা একটা বড় ইঙ্গিত। যদি নাও হয় তাতে সমস্যা নেই। বাংলাদেশ যা অর্জন করেছে, বাংলার ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্জন গুলোর মধ্যেও অন্যতম এ সিরিজ জয়। আর বিশ্বকাপের সেই ম্যাচের জবাবটাও দেয়া হয়েছে গেছে।



তবে চলতি বছর বাংলাদেশ দলের প্রাপ্তির খাতায় অনেক কিছুই যোগ হয়েছে। সিরিজ জয়, হোয়াইটওয়াশ, র‌্যাংকিংয়ে উন্নতি আরো কত কী! রোববার ভারতের সঙ্গে তিনম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ৬ উইকেটে জয়ের মধ্য দিয়ে আরো একটি অর্জন ঘরে তুললো। ঘরের মাঠে টানা দশ ম্যাচ জয়ের কৃতিত্ব গড়ে নিজেদের অভিজ্ঞতার ঝুলি আরো সমৃদ্ধ করলো টাইগার বাহিনী।



ঘরের মাটিতে ২০১৪ সালটা বাংলাদেশের জন্য এতটা সুখকর ছিল না। কিন্তু, বছর ঘুরতেই হোম সিরিজে ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে টাইগাররা। এক ম্যাচ হাতে রেখেই ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জেতার মধ্য দিয়ে নিজেদের মাঠে টানা ১০ ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ।



ভারতের বিপক্ষে চলমাল তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতেই ৭৯ রানের দাপুটে জয় পায় বাংলাদেশ। ৩০৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে অভিষিক্ত মুস্তাফিজুর রহমানের বোলিং তোপে ২২৮ রানেই গুটিয়ে যায় টিম ইন্ডিয়া। তাসকিন আহমেদের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি বোলার হিসেবে অভিষেক ওয়ানডেতেই পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন তরুণ তুর্কি মুস্তাফিজ।



রোববার (২১ জুন) সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও বিধ্বংসী মুস্তাফিজের কাছে মাথা নত করে ভারত। দু’বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা ২০০ রানেই অলআউট হয়। সফরকারীদের ছয় ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নে ফেরান এ তরুণ। এর মধ্য দিয়েই দ্বিতীয় অভিষিক্ত বোলার হিসেবে টানা দুই ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়ের রায়ান ভিটোরির পাশে নাম লেখান ১৯ বছর বয়সী এই বাঁহাতি বোলার।



৬ উইকেটে জিতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করেছে টাইগাররা। তৃতীয় ও সিরিজের শেষ ওয়ানডে ম্যাচ জিতে পাকিস্তানের পর ভারতকেও হোয়াটওয়াশের লজ্জা দেওয়াটাই এখন বাকি। সেই সঙ্গে ঘরের মাঠে মাশরাফিদের টানা জয়ের সংখ্যাটা ১১-তে গিয়ে ঠেকবে। আসছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে এই সাফল্যধারা অব্যাহত থাকলে তো কথাই নেই।



২০১৪ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোম সিরিজের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের জয়রথ শুরু হয়। পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে মাসাকাদজা-চিগ্ম্বুুরাদের রীতিমত উড়িয়ে দেয় টাইগাররা।



আর বিশ্বকাপের পর বদলে যাওয়া বাংলাদেশ যে এখন আরো পরিণত সেটি তো পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেই জানান দেয় টাইগাররা। রীতিমতো বলে কয়ে ৯২’র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হারানোসহ হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দেয় মাশরাফি-সাকিবরা।



১৭ এপ্রিল প্রথম ওয়ানডেতে ভারতের মতোই ৭৯ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচের জয়টা তো আরো দাপুটে। তামিম ইকবালের অপরাজিত শতকে ভর করে পাকিস্তানকে সাত উইকেটে হারায় টাইগাররা। আর সিরিজের শেষ ম্যাচে সৌম্য সরকারের সেঞ্চুরিতে আট উইকেট হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় স্বাগতিকরা। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের কাছ থেকে হোয়াইটওয়াশের তিক্ত স্বাদ নেয় আজহার-হাফিজরা।



তবে ভারত সিরিজে বাংলাদেশের একক নৈপূর্ণ খুব একটা নেই বললেই চলে। জয়ের পেছনে সবার ভূমিকা প্রায় সমান। শুধু আলাদা করে বলতে হবে দুই ম্যাচেই সাতক্ষিরা এক্সপ্রেস খ্যাত মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে। প্রথম পাকিস্তপানের বিরুদ্ধে একমাত্র টি-টুয়েন্টি ম্যাচেই দুই উইকেট নিয়ে নিজের সামর্থের প্রমাণ রাখেন। এতো তাড়াতাড়ি একদিনের ম্যাচে সুযোগ পাবে তার তার কল্পনায় ছিল না তার। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকদের পছন্দের এমন জবাব দিলেন যে কোটি কোটি ক্রিকেট ভক্ত প্রশংসায় মত্ত মোস্তাফিজের। মাঠে ধোনী বৈরী আচরণ মোস্তাফিজকে যেন আরো ধারালো করলো, করলো শানিত। যাই হোকে, এগিয়ে যাও বাংলাদেশ। টাইগারদের জন্য রইলো অকৃত্রিম ভালোবাসা আর শুভকামনা নিরন্তর।


Recent Posts

Leave a Comment