সাম্প্রতিক সময়ের উঠতি সন্ত্রাসী লেংটা খোকন জামিনে বেরিয়েই শহরজুড়ে শোডাউন

 In চাঁদপুর, দেশের ভেতর, প্রধান খবর, শীর্ষ খবর




চাঁদপুর শহরের সাম্প্রতিক সময়ের উঠতি সন্ত্রাসী লেংটা খোকন জেল থেকে জামিনে বেরিয়েই শহরজুড়ে শোডাউন করায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে তার এমন আচরণে চরম ক্ষুব্ধ সচেতন পৌরবাসী। পৌর মেয়র কর্তৃক আটক এই সন্ত্রাসী জামিনে বেরিয়ে এসে তার এমন মহড়া যেনো পৌর মেয়রকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলো। গতকালের শোডাউনের ঘটনায় লেংটা খোকনের যাবতীয় অপকর্মের আস্তানা ‘লেংটা বাড়ি’ উচ্ছেদের দাবি আরো তীব্র হয়েছে। শুধু তাই নয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সচেতন নেতা-কর্মী-সমর্থকরা এই সন্ত্রাসীকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবি করেছেন।


২০১২ সালে চাঁদপুর শহরের নাজিরপাড়ায় প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রী বিল্লাল দেওয়ানকে হত্যা করেছিল সন্ত্রাসী লেংটা খোকনের বাহিনী। তখন সে ছাত্রলীগের নগণ্য পদধারী ছিল। এ ঘটনার পর তার বিভিন্ন অপকর্ম প্রকাশ পেতে থাকে। বিভিন্ন হামলায় সন্ত্রাসী ভাড়া দেয়া, দখল বাণিজ্য, রাস্তার পাশের ফুটপাত দখল করে ভাড়া দেয়া, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে তার সম্পৃক্ততার কথা জানতে পারে চাঁদপুরবাসী। ওই হত্যাকাণ্ডের পর শহরবাসীর তীব্র দাবির প্রেক্ষিতে তৎকালীন জেলা ও পুলিশ প্রশাসন লেংটা খোকনের অপকর্মের আস্তানা সরকারি জমিতে গড়ে উঠা ‘লেংটা বাড়ি’ উচ্ছেদ করে। এতে শহরবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে।




ওই ঘটনার পর কিছু দিন আড়ালে ছিল লেংটা খোকন ও তার বাহিনী। কিন্তু সম্প্রতি আবারো তার সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, দখলদারিত্ব, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্ম ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে। হঠাৎ করে চাঁদপুর শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক পদ পাওয়ার পর থেকে সে হয়ে উঠে ক্ষমতাধর এক সন্ত্রাসী। এতে সরকারি দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হতে থাকে। তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং তাকে কতিপয় নেতা শেল্টার দেয়ায় স্বয়ং আওয়ামী লীগে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা হয়।


সর্বশেষ গত ২৪ জুন চাঁদপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে যেয়ে লেংটা বাড়ির সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন পৌরসভার কর্মচারীরা। লেংটা খোকন ও তার ভাই সুমন, রাশেদের নেতৃত্বে পরিচালিত ওই সন্ত্রাসী হামলার সময় সেখানে উপস্থিত থেকে নীরব দর্শনের ভূমিকা পালন করেন চাঁদপুর মডেল থানার এসআই সাঈদ। ওই ঘটনার খবর পেয়ে পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহম্মেদ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সন্ত্রাসী লেংটা খোকন এবং তার দুই সহযোগী রাবি্ব ও জাহাঙ্গীরকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। পৌর মেয়রের সেই ভূমিকা দলমত নির্বিশেষে চাঁদপুর শহরবাসীর কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। পৌর কর্মচারীর দায়ের করা মামলায় ওইদিনই তাদের আদালতে প্রেরণ করলে আদালত তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় শহরবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু পুলিশ ওই ঘটনার অন্যতম হোতা লেংটা খোকনের ভাই রাশেদ, সুমন কিংবা অন্য কাউকে আর আটক না করায় পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।


এদিকে গতকাল সোমবার চাঁদপুরের আদালত থেকে জামিন পেয়ে শেষ বিকেলে চাঁদপুর শহরে মোটর সাইকেলের ব্যাপক শোডাউন করে লেংটা খোকন বাহিনী। এ সময় শহরবাসীর মধ্যে ভীতি ও চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। একজন সন্ত্রাসীর এমন নির্বিঘ্ন শোডাউনে পুলিশের কোনো বাধা না থাকায় হতাশ শহরবাসী। শহরের মানুষ অচিরেই লেংটা খোকনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি এবং সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাত লেংটা বাড়ি আবারো উচ্ছেদের দাবি করেছে। সেই সাথে বিল্লাল দেওয়ান হত্যা মামলায় লেংটা খোকনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে। লেংটা খোকনের পক্ষে আদালতে জামিন আবেদন করা আইনজীবীদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল।


এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা লেংটা খোকনকে আওয়ামী লীগ তথা শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়কের পদ থেকে অপসারণের দাবি তুলেছেন। বেশ ক’জন সিনিয়র নেতা বলেন, এমন সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগে থাকলে ভবিষ্যতে সচেতন বা ভদ্র মানুষ আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ভোট দেবে না। তাছাড়া দল ও কর্মী-সমর্থকদের পরিবর্তে সন্ত্রাসী নির্ভর হয়ে পড়বে। লেংটা খোকনকে বহিষ্কারের পাশাপাশি তাকে আর শেল্টার না দিতে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলের ত্যাগী নেতারা।


Recent Posts

Leave a Comment