হাজীগঞ্জে হত্যা মামলায় তিমেতাল অবস্থা!

 In চাঁদপুর, লিড নিউজ, হাজীগঞ্জ উপজেলা

স্টাফ রিপোর্টার॥



গত এক বছরে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানায় বেশ কয়েকটি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বেশীর ভাগ হত্যার ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। হত্যা মামলার মধ্যে অধিকাংশগুলো পুলিশ তদন্ত করছে। গুটি কয়েকটি সিআইডি তদন্ত করছে। আর অজ্ঞাত পাওয়া লাশগুলোর পরিচয় না পাওয়ার কারনে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে দেয়া হয়েছে আর এ তথ্য থানা পুলিশ সূত্রের।



জানা যায়, গত ১ বছরে হাজীগঞ্জে বেশ কয়েটি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তবে হাজীগঞ্জে কোন রাজনৈতিক হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়নি । হত্যা মামলা পারিবারিক বা সম্পত্তিগত বিরোধীয় হত্যা। এর মধ্যে গত বছরের জুন মাসে পারিবারিক বিরোধে স্ত্রীকে আকলিমাকে হত্যা করে উপজেলার এনায়েতপুর এলাকার ফারুক। ঐ মামলায় তালিকাভূক্ত আসামী ৩জন হলে ও অতিসহসায় স্বামী ফারুককে একমাত্র আসামী করে চার্জশীট দেয়া হবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক বিল্পব সিংহ জানিয়েছে। ফারুক বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে আর বাকী দুই আসামী জামিনে রয়েছে।

হাজীগঞ্জ ৫ নং সদর ইউনিয়নের মাতৈন এলাকার এক ব্যক্তিকে পানিতে ডুবিয়ে মারার অভিযোগে হাজীগঞ্জ থানায় গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর মাসে ১২নং হত্যা মামলাটি দায়ের করেন ডা: মনিরুল নামের একজন। ঐ মামলাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে।
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর খোদ হাজীগঞ্জ বাজারের ভিতরে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) ও সদ্য প্রয়াত হারুন আল মনসুর কাঞ্চনের মালিকানাধীন ভবন দীপা ম্যানশনের ভিতরে হত্যাকান্ডের শিকার হন একই এলাকার মকিমাবাদ গ্রামের জুলফু মিস্ত্রী নামের এক ব্যক্তি। জুলফু মিস্ত্রীর লাশ উদ্ধারের সময় তার লাশটি ঐ ভবনের সিড়ির মধ্যে পাওয়া গেছে। এ মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ। মামলা নং ২১। তারিখ ২৫/১২/১৫ইং।

চলিত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারী হাজীগঞ্জের ৫নং সদর ইউনিয়নের মাতৈন গ্রামের একটি বাড়ির বাগান থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় কামরুল নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে রশিতে ঝুলে আত্মহত্যার বিষয়টি সামনে আসলে সম্পত্তিগত বিরোধে কামরুলকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলে পারিবারিকভাবে শুরু থেকেই বলা হচ্ছে। এ মামলায় পুলিশ ইতিমধ্যে ১জনকে আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে । তবে ময়না তদন্ত রিপোর্টে হত্যার সুস্পষ্ট আলামত পাওয়া গেছে বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক আঃ রাজ্জাক চাঁদ নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।

গত মে মাসের উপজেলার ৫ নং সদর ইউনিয়নের অলিপুর গ্রামের ডাকাতিয়া নদী থেকে ২ সন্তানের জনক নিখিল দাসের(৪২) লাশ উদ্ধার করে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ। উদ্ধারের সময় লিখিলের হাত বাঁধা ও মাথা নিচের দিকে করে বাঁশের সাথে ডুবিয়ে রাখে হত্যাকারীরা। উদ্ধারের পর দেখা যায় নিখিলের গলা প্রায় ৩ ইঞ্চি কাটা। এ ঘটনায় লাশ উদ্ধারের দিন সন্ধ্যায় নিখিলের স্ত্রী বাদী হয়ে আপন ২ দেবরকে প্রধান আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঐ মামলায় পুলিশ ১জনকে আটক করে রিমান্ড এনে জিঞ্জাসাবাদ করে জেলহাজতে পাঠালে ও প্রধান দুই আসামী ঘটনার দিন থেকেই পলাতক রয়েছে। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক আঃ মান্নান(২) বলেন তাদের পারিবারিকভাবে সম্পত্তিগত বিরোধ রয়েছে আমরা জেনেছি। আর এ কারনে নিহতের ভাইদের আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা শুধু তাদের পারিবারিক বিষয়ে তদন্ত করছি না ভিন্ন বিয়য়ে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে কিনা তা মাথায় রেখে ও তদন্তকাজ চলছে।

গত ১৯ মে সর্বশেষ হাজীগঞ্জে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন মকিমাবাদ গ্রামের হোমিও চিকিৎসক আবুল কাসেমের স্ত্রী মোবাশে^রা(৫২)। মোবাশে^রা বেগমের স্বামীর বাড়ি মকিমাবাদ হলে ও স্বামীর সাথে ধেরার এলাকার চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে নতুন বাড়িতে থাকতেন। আবুল কামেস পুলিশকে দেয়া তথ্য সূত্রে জানা যায় ঘটনার দিন তিনি সকাল বেলা চেম্বারে চলে যান আর বিকেল ৩টার দিকে বাসায় এসে বাড়ির পাশের ডোবায় স্ত্রীর লাশ ভাষতে দেখে পুলিশে খরব দেন। লাশ উদ্ধারের পর নিহতের পিঠে বেশ কয়েকটি গভীর কাটা দাগ পাওয়া গেছে। মোবাশে^রা হত্যা মামলার বাদী স্বামী আবুল কাসেম হলে ও হত্যার পর থেকে স্থানীয়রা বলছে নিতান্ত একজন বয়স্কনারীকে কেন হত্যা করা হলো। এই হত্যাকান্ডে আবুল কাসেমের ২য় বিয়ে কিংবা সম্পত্তিগত বিরোধ বা ভিন্ন কোন কারন থাকতে পারে বলে স্থানীয়রা বলতে শুনা গেছে। এ মামলায় নিহতের এক আত্বীয়কে জিঞ্জাসাবাদ করলে ও মামলার মোড় ভিন্নখাতে যাচ্ছে বলে চাঁদ নিউজকে নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হাজীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক মনিরুল হক।

২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে উপজেলার ৪ নং কালোচোঁ দক্ষিন ইউনিয়নের সিদলা বিল থেকে অজ্ঞাত এক নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সিদলা বিলের লাশ উদ্ধারের কয়েকদিন পরে ডাকাতিয়া নদীর টোরাগড় এলাকা থেকে ভাসমান অবস্থায় হাত-পা বাঁধা ও গলা কাটা এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। পুলিশ এ দুটি লাশ উদ্ধার করতে পারলে লাশের পরিচয় নিশ্চিত করতে না পারার কারনে আঞ্জুমান মফিদুলের মাধ্যমে লাশ দাফন করা করে।

হত্যা মামলা গুলোর অগ্রগতির বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ আলম বলেন অধিকাংশ মামলা গুলোর তদন্তকাজ শেষ হবার পথে। আমরা বিশেষ করে হত্যা মামলা গুলো অধিকগুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। আরেক প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন অজ্ঞাত পরিচয় লাশ দুটির পরিচয় না পাওয়ার কারনে আমরা চুড়ান্ত রিপোর্ট দিয়ে দিয়েছি।

Recent Posts

Leave a Comment