এমপির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ।। আইন যেন নিজের গতিতে চলে

 In খোলা কলাম



এমপির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ

সংসদ সদস্যরা শুধু জনপ্রতিনিধি নন, আইন প্রণেতাও। দেশের নীতিনির্ধারকও তাঁরা। তাই সার্বভৌম জাতীয় সংসদের মাননীয় সদস্যদের কাছে মানুষের প্রত্যাশাও থাকে অনেক বেশি। মানুষ স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের কর্মকাণ্ডে দায়িত্ববোধ, কর্তব্যবোধ, রাজনীতি ও সমাজসচেতনতা, ব্যক্তিত্ব, উত্তম আচরণ, সততা, নিষ্ঠা, ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, পরোপকারিতা ইত্যাদি সৎ গুণ দেখতে চায়। কিন্তু বাস্তবে কোনো কোনো সংসদ সদস্যের কর্মকাণ্ডে আমরা মানুষের প্রত্যাশার সম্পূর্ণ বিপরীতটাই দেখতে পাই। কক্সবাজারের সংসদ সদস্য বদির বিরুদ্ধে অতীতে শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা, আইনজীবী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ অনেককেই পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। ফেনীর সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ উঠেছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বিরুদ্ধে এক শিশুকে গুলি করার অভিযোগে মামলা হয়েছে। এমন অভিযোগ রয়েছে আরো অনেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে। তাঁদের স্ত্রী-পুত্র বা আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধেও অভিযোগের কমতি নেই। ঢাকার ইস্কাটনে এক সংসদ সদস্যের পুত্র যানজটে বিরক্ত হয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল এবং তাতে রিকশাচালক, সিএনজিচালক গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। গতকালের সংবাদপত্রেও এমন দুটি ঘটনার খবর এসেছে। মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর টাঙ্গাইল-৩ আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা গত রবিবার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। অন্য খবরটি হলো, সাতক্ষীরার সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রিফাত আমিনের ছেলে রাশেদ সারোয়ার সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাদক সেবন, অবৈধ নারীসম্ভোগ, চাঁদাবাজি, রাহাজানি, লুটপাটসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তা ছাড়া সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপপ্রয়োগ, বলপ্রয়োগ, সরকারি সম্পত্তি দখলসহ প্রচুর অভিযোগ পাওয়া যায়। অথচ তাঁদের কাছে এমনটা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত ছিল না।

দেশে রাজনীতিচর্চার মান দিন দিন নিম্নমুখী হচ্ছে। সে কারণে রাজনীতি থেকে আদর্শ দূরে সরে যাচ্ছে এবং ব্যক্তিস্বার্থ ও অপরাধপ্রবণতা ক্রমেই প্রবল হয়ে উঠছে। এ জন্য বহুলাংশে দায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর অদূরদর্শিতা ও দেশে বিদ্যমান বিচারহীনতার সংস্কৃতি। জানা যায়, এমপি রানার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মোট ৪৬টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে বিচার ছাড়াই ৪৪টি মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা’ আখ্যা দিয়ে গণহারে মামলা প্রত্যাহারের সংস্কৃতি একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। এ সংস্কৃতির কারণে কয়েক দশক ধরে রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বড় ধরনের অপরাধ করেও পার পেয়ে গেছেন। এভাবে অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ায় তাঁদের অপরাধের মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকে। আর সেভাবেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যা করার মতো ঘটনা ঘটে চলেছে।

বাংলাদেশ উন্নয়নের ধারায় নানা দিক থেকেই এগিয়ে চলেছে। কিন্তু এই দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির পরিবর্তন করা না গেলে কোনো উন্নয়নই অর্থবহ হবে না। আমরা আশা করি, বর্তমান সরকার উন্নয়নকে অর্থবহ করতে ক্ষমতাসীন দলের ছত্রচ্ছায়ায় কেউ যেন অপরাধ করতে না পারে, সে ব্যাপারে দৃঢ় ভূমিকা পালন করবে। এমপি রানাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে আইন যেন নিজের গতিতে চলতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

সূত্র: কালের কণ্ঠের সম্পাদকীয়।

Recent Posts

Leave a Comment