কেমন আছেন বিএনপির পদত্যাগী নেতারা?

 In বিশেষ প্রতিবেদন, রাজনীতি, শীর্ষ খবর

 

কেমন আছেন বিএনপির পদত্যাগী নেতারা?

সদ্য ঘোষিত বিএনপির নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে ‘প্রত্যাশিত’ পদ না পেয়ে ‘অভিমানে’ পদত্যাগ করেছেন দলটির বেশ কিছু নেতা। পদত্যাগ করা দলীয় নেতাদের মধ্যে সবচাইতে আলোচনায় আছেন নতুন কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদ পাওয়া মোসাদ্দেক আলী ফালু, সহপ্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম ও আশিফা আশরাফি পাপিয়া।

তাছাড়া দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের পদত্যাগের গুঞ্জন শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত তিনি পদত্যাগ করেননি। তবে নতুন কমিটি ঘোষণার আগে বিভিন্ন সভা সেমিনারে তার উপস্থিতি নিয়মিত ছিল। কিন্তু এখন তিনি রয়েছেন প্রায় নিশ্চুপ।

বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের অনেকের প্রশ্ন- কেমন আছেন দলটির পদত্যাগকারী নেতারা? সেই সব নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের জানার আগ্রহের জায়গা থেকে অনলাইন নিউজ পোর্টাল পরিবর্তন ডটকম গত কয়েকদিন ধরে ওইসব নেতাদের হাল-হকিকত জানার চেষ্টা করেছে।

মোসাদ্দেক আলী ফালু
বিএনপির রাজনীতিতে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পরই ‘অদৃশ্য দ্বিতীয় শক্তি’ বলা হয়ে থাকে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে। দলটির রাজনীতিতে সরাসরি সম্পৃক্ত না হলেও দলে তার অবস্থান অনেক শক্ত। আবার কেউ কেউ বলে থাকেন বিএনপির ‘রহস্যপুরুষ’ তিনি।

বিএনপির গত কমিটিতে ফালু ছিলেন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। এর আগে ২০০১ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সে সময় খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন হওয়ায় অনেকেই তাকে দিয়ে প্রয়োজনীয় ফাইলে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। এভাবেই ধীরে ধীরে বিএনপির রাজনীতিতে প্রভাবশালী উঠেন ফালু। পরবর্তীতে ঢাকার তেজগাঁও উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবেও নির্বাচিত হন তিনি। কিন্তু সেই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠে। পরবর্তীতে দলে তার অবস্থান আরো শক্ত থেকে শক্ত হয়ে উঠে।

সদ্য ঘোষিত বিএনপির নতুন কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদ পাওয়ার ৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করে ফের আলোচনায় আসেন ফালু। তার পদত্যাগ নিয়ে দলটির অনেক সিনিয়র নেতাকেও নিশ্চুপ থাকতে দেখা গেছে। দলটির অনেক সিনিয়র নেতা এ ব্যাপারে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির এক শীর্ষ নেতা পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘‘যেভাবেই বলি, এক কথায় বিএনপির রাজনীতিতে ‘আসল পুরুষ’ মোসাদ্দেক আলী ফালু। কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সকল কমিটিতে পদ পেতে তার সুপারিশের কোনো বিকল্প নেই। কারণ সকল সংগঠনেই তার একক আধিপত্য রয়েছে। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল সকল পর্যায়ের নেতার কাছে তার গুরুত্ব অন্যরকম।’’

দলটির আরেক নেতা বলেন, ‘মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপির রাজনীতি করলেও তিনি সাংগঠনিকভাবে মূলত সক্রিয় নন। এ ক্ষেত্রে সদ্য ঘোষিত বিএনপির নতুন কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদটি সরাসরি রাজনৈতিক। তাই তিনি নতুন এই পদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। কারণ তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম মূল হওয়ার রাজনৈতিক সংগঠন থেকে দূরে থাকতে চান। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন তাকে কোনো দায়িত্বে রাখলে পুনরায় দেখা যেতে পারে।’

এ ব্যাপারে ফালুর বক্তব্য জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে তার অফিসের টেলিফোন নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তার একান্ত সহকারী ফারিয়া এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘স্যার একটা মিটিংয়ে  ব্যস্ত আছেন। কী বিষয়ে কথা বলবেন- এ ব্যাপারে জানতে চান তার ওই সহকারী?

উত্তরে এই প্রতিবেদক জানান, রাজনৈতিক ব্যাপারে কথা বলতে চাই। তখন তিনি বলেন, ‘আপনার সঙ্গে পরবর্তীতে যোগাযোগ করা হবে।’

সূত্র জানায়, মোসাদ্দেক আলী ফালু তার মালিকানাধীন একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নিয়েই ব্যস্ত আছেন। মূলত ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চান এই ‘রহস্যপুরুষ’। তাই আপাতদৃষ্টিতে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি।

শামীমুর রহমান শামীম
সদ্য ঘোষিত বিএনপির নতুন কমিটির সহপ্রচার সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করে রাজনৈতিক মাঠে আলোচনায় ছিলেন দলটির আগের কমিটির সহ দফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম। পদত্যাগ করার পর তিনি পরিবর্তন ডটকমকে বলেছিলেন, বিএনপির আগের কমিটিতে আমি ছিলাম ১ নম্বর সহ দফতর সম্পাদক। কিন্তু নতুন কমিটিতে আমাকে তিন নাম্বার সহ প্রচার সম্পাদক করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মূলত আমার প্রতি সাংগঠনিকভাবে চরম অবিচার করা হয়েছে। তাই আমি মহাসচিবের বরাবর চিঠি দিয়ে অব্যাহতি চেয়েছি।

এখন কেমন আছেন সাবেক বিএনপি নেতা শামীমুর রহমান শামীম? পরিবর্তন ডটকমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ঢাকা-খুলনা আসা যাওয়ার মাঝে আছি। পরিবারকে খুলনায় রেখে আসলাম। নিজের কিছু বিজনেস আছে সেগুলো দেখভাল করছি। এছাড়া পরিবার-পরিজনকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

তাহলে কী রাজনীতিতে আর সক্রিয় হচ্ছেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপির কর্মী হিসেবে কাজ করে যাব। কারণ আমি তো পদত্যাগ করিনি। নতুন কমিটিতে আমাকে যে পদ দেওয়া হয়েছে তা আমার জন্য অপমানজনক। কারণ আমি বিএনপির জন্য এতো কাজ করলাম তার প্রতিদান এটা হতে পারে না। বিএনপির জন্য জেল খেটেছি। অনেক মামলা এখনো চলমান। তাই আমি মাত্র নতুন পদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছি। কিন্তু বিএনপি থেকে তো পদত্যাগ করিনি।’

চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বা শীর্ষ নেতার সঙ্গে পদত্যাগের পর কোনো যোগাযোগ হয়েছে কিনা? প্রশ্নের জবাবে শামীমুর রহমান বলেন, ‘চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বা শীর্ষ কোনো নেতার সঙ্গে এখন পর্যন্ত আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি। তবে আশা করি শিগগিরই হবে।’

শিরীন সুলতানা
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিভিন্ন কর্মসূচিতে সার্বক্ষণিক ‘সহচর’ বলে পরিচিত আগের কমিটির মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা পদত্যাগ করে কম আলোচনায় আসেননি। নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে শিরিন সুলতানাকে করা হয়েছে স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক। পদত্যাগপত্রে শিরিন সুলতানা বলেন, নতুন পদ সম্পর্কে আমি কিছুই বুঝি না। সে জন্য এ পদ থেকে আমি পদত্যাগ করেছি। এছাড়া এক ব্যক্তির একাধিক পদ না রাখার সিদ্ধান্ত বিএনপির সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মহিলা দলেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

বিএনপির এ নেত্রীর সঙ্গে শনিবার বিকেলে এ প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি তো বিএনপি থেকে পদত্যাগ করিনি। বিএনপির সঙ্গে আছি, ছিলাম ও থাকব। কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হয়েছে এক নেতার এক পদ। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমি একটি পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছি মাত্র। আমি মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক পদে কাজ করে যাচ্ছি। এই পদে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।’

আবদুল্লাহ আল নোমান
দলের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে ‘পদত্যাগ’ করছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। তবে এখনো পদত্যাগ না করলেও নিজেকে অনেকটা আড়াল করে রেখেছেন রাজনীতি থেকে। সদ্য ঘোষিত নতুন কমিটিতে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়ার সারিতে ছিলেন এই নেতা। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পদত্যাগ করেছেন শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করেননি নোমান।

কেমন আছেন আবদুল্লাহ নোমান? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘শরীরটা বেশি ভালো নেই। আছি কোনো রকম। পদ নিয়ে কিছুটা হতাশ হলেও দলের জন্য কাজ করে যাব।’

আশিফা আশরাফি পাপিয়া
বিএনপির সদ্য ঘোষিত কাউন্সিলে নতুন পদ পেলেও সেই পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন অ্যাডভোকেট আশিফা আশরাফ পাপিয়া। নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে মানবাধিকার বিষয়ক সহ-সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন তিনি। এছাড়া তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপিরও সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন। কিন্তু সর্বশেষ তিনি দুই পদ থেকেই অব্যাহতি চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। যদিও এখন পর্যন্ত বিএনপির কোনো নেতার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি।

হঠাৎ দুই পদ থেকে পদত্যাগ কেন? পরিবর্তন ডটকমের এমন প্রশ্নের জবাবে পাপিয়া বলেন, ‘আমি পদের জন্য রাজনীতি করি না। পদ ছাড়াই আমি বিএনপির সঙ্গে আছি, ছিলাম ও থাকব। পদ নিয়েই যে রাজনীতি করতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই। আমার শৈশব, যৌবন সবই তো বিএনপিকে নিয়ে। এখন তো ইচ্ছে হলেই বিএনপি ছেড়ে যেতে পারি না।’

অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়ে পাপিয়া বলেন, ‘দলের জন্য তো আর কম ত্যাগ স্বীকার করিনি। তার পরেও যোগ্যতা অনুযায়ী আমার সম্মান দেওয়া হয়নি। আমার চাইতে অনেক জুনিয়রকে বড় পদ দেওয়া হয়েছে। এভাবে তো আর যাইহোক কাজ করা যায় না। তাই এখন থেকে পদ ছাড়াই কাজ করে যাব। আরো বেশি কাজ করব।’

এ ব্যাপারে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রেস উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরিবর্তন ডটকমকে জানান, এখন পর্যন্ত বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা কোনো নেতার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি। শুধুমাত্র যেসব নেতা একইসঙ্গে দুই বা একাধিক পদে ছিলেন তাদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে।

সূত্র : পরিবর্তন ডট কম।

Recent Posts

Leave a Comment