গণ্ডামারা গোলবাহার শামছুল হক নূরানিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ।। সাফল্যের সাথে অর্ধযুগের পথচলা
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান।। হাইমচরের অন্যান্য গ্রামের তুলনায় গণ্ডামারা একটি উন্নয়নশীল গ্রাম। শিক্ষার হার, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিক দিয়ে গণ্ডামারা গ্রামটি অন্য গ্রামের তুলনায় খানিক এগিয়ে। কারণ, গণ্ডামারা গ্রামে রয়েছে স্বনামধন্য ও ঐতিহ্যবাহী অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গণ্ডামারা এবিএস ফাজিল মাদ্রাসা, গণ্ডামারা উচ্চ বিদ্যালয়, মোয়াজ্জেম হোসেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, গণ্ডামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এ গ্রামের উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ ২০১০ সালে এ গ্রামেই প্রতিষ্ঠিত হয় গণ্ডামারা গোলবাহার শামছুল হক নূরানিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা।
মাদ্রাসা সম্পর্কে জানতে চাইলে মাদ্রাসার প্রধান হাফেজ মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা চেষ্টা করি আমাদের শিক্ষার্থীদের জাগতিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা দিতে। আমাদের শিক্ষকরা খুবই আন্তরিক। যার ফলে আমরা ভালোভাবে পাঠদান করতে পারছি এবং এলাকাবাসীর কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। যদি শিক্ষার্থী অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টদের সার্বিক সহযোগিতা পাই তাহলে প্রতিষ্ঠানটি আরো এগিয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
গণ্ডামারা গোলবাহার শামছুল হক নূরানিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার প্রথম পথযাত্রা স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হলেও পরবর্তীতে সুনাম ও ভালো ফলাফল অর্জনের বর্তমানে এর ছাত্র–ছাত্রী সংখ্যা দেড় শতাধিক। মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব নূর হোসেন পাটওয়ারী। তিনি তাঁর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বলেন, আশে পাশে কোনো হাফেজিয়া মাদ্রাসা না থাকায় মূলত আমি মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেই। এখানকার শিক্ষার্থীরা দূরে গিয়ে হাফেজিয়া পড়া পড়তো। যা অনেকের জন্য ব্যয়বহুলও বটে। ফলে অধিকাংশ লোকজনই তাদের ছেলেমেয়েদের হাফেজিয়া পড়াতে চাইলেও তা আর সম্ভব হতো না। চেষ্টা করেছি মানুষের জন্য কিছু করতে। এখানকার শিক্ষার্থীদের আমি সব ধরণের সুযোগ সুবিধা দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করি সকলের সহযোগিতায় এ প্রতিষ্ঠানটি আরো এগিয়ে যাবে। আলোকিত করবে এলাকাবাসীকে।
প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সম্পূর্ণ খরচ ও অর্থায়ন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ্ব নূর হোসেন পাটওয়ারী বহন করে আসছেন। অভাবী গরিব ছাত্র–ছাত্রীদের প্রতিষ্ঠান থেকে বিনামূল্যে বই, শিক্ষা উপকরণ, মাদ্রাসা ড্রেস প্রদান করা হয়। মাদ্রাসাটির রয়েছে দুই রুম বিশিষ্ট নিজস্ব বোর্ডিং। প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী এখানে থেকে মাদ্রাসাটিতে অধ্যয়ন করছে। থাকা–খাওয়া বাবদ আর্থিক সচ্ছ্বল পরিবারের কাছ থেকে অর্থ নেয়া হলেও গরিব ও অসহায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো অর্থই নেয়া হয় না।
তিনজন স্থায়ী শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটিতে হাফেজিয়া ও নূরানি পদ্ধতিতে পড়ার পাশাপাশি বাংলা ও অন্যান্য বিষয়ও পড়ানো হয়। চলতি বছর অনেক শিক্ষার্থীই এখন হাফেজ হওয়ার দ্বার প্রান্তে রয়েছে। মাদ্রাসাটিতে সার্বক্ষণিক একজন ডাক্তারও নিয়োগ আছেন।
মাদ্রাসাটির রয়েছে একটি শক্তিশালী পরিচালনা কমিটি। মাদ্রাসা সম্পর্কে কমিটির অন্যতম
সদস্য বিশিষ্ট সমাজেসেবক মোঃ আমির হোসেন পাটওয়ারী ও মোঃ মহসিন পাটওয়ারী বলেন, মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় অনেক সুবিধা বঞ্চিত শিশু–কিশোরও পড়ালেখার সুযোগ পায়। পূর্বে হাফেজি পড়তে বহু দূর দূরান্তে শিক্ষার্থীদের যেতে হলেও মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার পর অনেকেই হাফেজি পড়তে সুযোগ পাচ্ছে। মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার পর এলাকায় ধর্মীয় ব্যাপক সংহতি লাভ করেছে বলে তারা জানান।
গণ্ডামারা গোলবাহার সামছুল হক হাফেজিয়া নূরানিয়া মাদ্রাসা এখন গণ্ডামারাবাসীর গর্বের প্রতিষ্ঠানের নাম। এলাকাবাসীর মত শিক্ষক–শিক্ষার্থী–অভিভাববকসহ সকলের কামনা, এগিয়ে চলুক গোলবাহার সামছুল হক মাদ্রাসা, বিলিয়ে যাক জ্ঞানের আলো।