মর্গের ৭০ শতাংশ জঙ্গি লাশের দখলে

 In আইন আদালত, জাতীয়, শীর্ষ খবর

 

মর্গের ৭০ শতাংশ জঙ্গি লাশের দখলে

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গের ৭০ শতাংশ জায়গা দখল করে আছে জঙ্গিদের মরদেহ। যারা সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ও নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে। সরেজমিনে বুধবার ঢামেক ঘুরে এমনটিই জানা গেছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ঢামেক হাসপাতাল মর্গে একসঙ্গে ২০টি লাশ রাখা যায়। বর্তমানে এখানে ১৪ জন জঙ্গির লাশ রাখা আছে। শতকরা হিসাব করলে মর্গের প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গা দখল করে রয়েছে জঙ্গির লাশ।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান ডা. আ.খ.ম. শফিউজ্জামান  বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে একসঙ্গে ২০টি লাশ রাখার ব্যবস্থা আছে। গত ২৬ জুলাই থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেড় মাসে নিহত জঙ্গিদের মধ্যে ১৪ জনের মরদেহ এখনো পড়ে আছে ঢামেক মর্গে। এছাড়াও আদালতের নির্দেশে একজন ভারতীয় ও একজন আফ্রিকানসহ তিনজনের লাশ দীর্ঘদিন ধরে আছে এই মর্গে।

তিনি আরো জানান, প্রতিদিন ৫ থেকে ৭টি মরদেহ আসে এই মর্গে। সে হিসেবে লাশ হস্তান্তরের পরেও সচরাচর ৫/৭ টি লাশ মর্গে রাখতে হতো। কিন্তু গত দুই মাসে সেভাবে লাশ রাখা যাচ্ছে না। কারণ জঙ্গিদের লাশগুলো কেউ নিচ্ছে না। তিনি বলেন, আমাদের মর্গে পাঁচটি ফ্রিজ আছে। প্রতিটি ফ্রিজে চারটি ট্রে আছে, যার প্রতিটিতে একটি করে লাশ রাখা যায়।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে দুটো ফ্রিজ নষ্ট ছিল। ফলে মরদেহ রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। এখন আর কোনো সমস্যা নেই। নষ্ট ফ্রিজগুলো মেরামত করা হয়েছে।

মর্গের ফ্রিজ নষ্ট ও জঙ্গিদের লাশ পড়ে থাকায় কোনো সমস্যা হচ্ছিল কিনা জানতে চাইলে মর্গ সহকারী সিকান্দার আলী বলেন, জঙ্গিদের লাশ হস্তান্তর না হওয়ায় এবং সেই সময় মর্গের ফ্রিজ নষ্ট থাকায় ঢামেক মর্গে মরদেহ গাদাগাদি করে রাখতে হচ্ছিল। ফ্রিজের কোনো কোনো চেম্বারে (ট্রে) একাধিক মরদেহও রাখতে হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এতে মরদেহের আলামত নষ্ট হয়। তিনি জানান, নষ্ট ফ্রিজগুলো সচল করার উদ্যোগ নেওয়ায় এখন সেই সংকট নেই। বর্তমানে (বুধবার দুপুর পর্যন্ত) ঢামেক মর্গে ১৭টি লাশ আছে। চারটি ফ্রিজে লাশগুলো রাখা আছে। একটি ট্রেতে ডাবল লাশ রাখা হয়েছে।

সিকান্দার আলী আরো জানান, সচরাচর ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আর অজ্ঞাতনামাদের ক্ষেত্রে ৭২ ঘণ্টা অপেক্ষা করে বেওয়ারিশ লাশ দাফনকারী সংস্থা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশের বিশেষ অনুরোধে অজ্ঞাতনামা লাশ ৭ দিন পর্যন্ত মর্গে রাখা হয়। এছাড়া আদালতের নির্দেশ থাকলে সে লাশও রাখা হয় মর্গে। এসব ক্ষেত্রে জটিলতায় পড়ে কিছু লাশ অনেক দিন মর্গে থেকে যায়।

মর্গ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সদ্যবিদায়ী বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চক্রবর্তী দায়িত্বে থাকাকালে কলেজ অধ্যক্ষকে এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘গত ২৬ জুলাই নিহত জঙ্গিদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মৃতদেহ ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ মর্গে সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু বিগত কয়েকদিন ধরে মরচুয়ারিকুলার নষ্ট হওয়ায় মৃতদেহ সংরক্ষণ করা এবং প্রতিদিন মর্গে আসা মৃতদেহ সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না বিধায় মৃতদেহগুলো হস্তান্তর করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ্যা গ্রহণ করতে আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ মো. ইসমাইল খান এ বিষয়ে  বলেন, আমরা পুলিশের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে সমস্যার কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। তারা জানিয়েছে, জঙ্গিদের লাশের ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পরই কী করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ততদিন এসব জঙ্গির মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখার জন্য তারা অনুরোধ করেছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশর (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ঢাকা ও ঢাকার পাশের জেলা নারায়ণগঞ্জে একাধিক অভিযানে ১৯ জঙ্গি ও এক সন্দেহভাজন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিসান হামলায় নিহত পাঁচ জঙ্গি ও এক সন্দেহভাজনের লাশ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) রাখা হয়েছে। এছাড়া ২৬ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুর অভিযানে নিহত ৯ জঙ্গির লাশ, ২ সেপ্টেম্বর মিরপুরের রূপনগরে নিহত জঙ্গি মেজর জাহিদ ও ২৭ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে নিহত জঙ্গিদের মাস্টারমাইন্ড তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ তিন জঙ্গি এবং সর্বশেষ আজিমপুরের আস্তানায় আত্মহত্যাকারী ১ জঙ্গির লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

Recent Posts

Leave a Comment