জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, জনপ্রশাসনমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, ঢাকার দুই মেয়র এরপর শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, তিনি দেশপ্রেম ও মানুষের প্রতি ভালবাসাকে উপজীব্য করে তার সাহিত্যকর্ম রচনা করেছেন। নাটক কবিতা উপন্যাস ছোটগল্পে তিনি সব সময় দেশপ্রেমের বিষয়কে ফুটিয়ে তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, তার প্রয়াণে অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তা পরিশোধ করা সম্ভব না। তবে নতুনরা যেন তাকে অনুসরণ করে।
নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, তার সাহিত্যে যেভাবে দেশপ্রেম ফুটে ওঠেছে, তা তার সময়ে আর কারও মধ্যে ছিল না। তবে বিদায়ে বাংলা সাহিত্যের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।
তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, মানুষের প্রতি তার অফুরন্ত ভালবাসা ছিল। তিনি তার সাহিত্যের মাধ্যমে সেটি ফুটিয়ে তুলেছেন। মানুষের প্রতি তার ভালবাসা, তার উদ্ভাবনী শক্তিই তাকে বাঁচিয়ে রাখবে।
এর আগে সকাল ১০ টার দিকে তেজগাঁওয়ে চ্যানেল আই চত্বরে প্রথম সৈয়দ হকের প্রথম জানাজার জন্য লাশ নেওয়া হয়। সেখানে কবির প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সেখানে থাকা অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। শোকগ্রস্ত ভক্ত-অনুরাগীরা কফিন খুলে দেখেন কবির মুখ।
বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে হবে কবির চতুর্থ জানাজা। সেখান থেকে তার মরদেহ দাফনের উদ্দেশে গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে কুড়িগ্রামের সরকারি কলেজ মাঠে তার শেষ জানাজার পর ওই চত্বরে দাফন করা হবে লেখককে।
মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সৈয়দ শামসুল হক মারা যান। তিনি ফুসফুস ক্যান্সারে ভুগছিলেন।
চার মাস আগে লন্ডনে চিকিৎসা করাতে গিয়ে তার ফুসফুসের ক্যান্সার ধরা পড়ে। সেখানকার চিকিৎসকরা তার জীবনসীমা বেঁধে দেন। দেশে ফিরে গত ১ সেপ্টেম্বর জ্বর নিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।
হাসপাতালের কেবিনে শুয়ে ‘শেষ যোদ্ধা’ নাটক রচনা করছিলেন সৈয়দ শামসুল হক। রোগ জর্জরিত শেষ দিনগুলোতে কেবিনের বেডে শুয়ে তিনি বলতেন আর সে কথা লিখে নিচ্ছেলেন তার স্ত্রী আনোয়ারা সৈয়দ হক।
ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সৈয়দ শামসুল হকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত সোমবার তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর জন্ম নেওয়া সৈয়দ শামসুল হক কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্পসহ সাহিত্যের সব শাখায় সফল, দীপ্ত পদচারণা করেছেন। এ যোগ্যতা তাকে বাংলা সাহিত্যের জীবিত কিংবদন্তিতে পরিণত করে। এনে দেয় ‘সব্যসাচী লেখক’-এর মর্যাদা।
সৈয়দ হক মাত্র ২৯ বছর বয়সে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। সবচেয়ে কমবয়সে এ পুরস্কার পাওয়ার মর্যাদা অর্জন করেন তিনি।
সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ১৯৫১ সালের মে মাসে। ফজলে লোহানী সম্পাদিত ‘অগত্যা’ পত্রিকায় ‘উদয়াস্ত’ নামে তার একটি গল্প প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে জন্ম নেওয়া সৈয়দ হক কুড়িগ্রাম মাইনর স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে সৈয়দ হক মাধ্যমিকে পড়ার সময় লেখালেখিতে সম্পৃক্ত হন। বাবা সিদ্দিক হুসাইন ছিলেন পেশায় হোমিওপ্যাথি ডাক্তার, মা হালিমা খাতুন। আট ভাই বোনের মধ্যে তিনিই সবার বড় ছিলেন তিনি।
১৯৪৯-৫০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার পরে ব্যক্তিগত খাতায় লিখে ফেলেন দুইশ’ কবিতা। ১৯৫২ সালে জগন্নাথ কলেজে মানবিক শাখায় ভর্তি হন এবং ১৯৫৪ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। কিন্তু স্নাতক পাসের আগেই পড়ালেখা ছেড়ে দেন ১৯৫৬ সালে। এরপর লেখালেখিকে একমাত্র ব্রত করে নেন।