অনন্য উচ্চতায় চঞ্চল
- রুহুল আমিন ভূঁইয়া
চঞ্চল চৌধুরী বহুমাত্রিক অভিনয়শিল্পী হিসেবে দর্শকের কাছে সুপরিচিত। চলচ্চিত্র, নাটক, মঞ্চনাটক, মডেলিং প্রতিটি ক্ষেত্রে তার সমান জনপ্রিয়তা। তিনি যে কাজেই হাত দিয়েছেন, তাতেই হয়েছেন শতভাগ সফল । দর্শকনন্দিত অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী একের পর এক জনপ্রিয় নাটক ও সফল চলচ্চিত্র দর্শকদের উপহার দিয়ে চলেছেন। ছোট-বড় দুই পর্দাতেই নিয়মিত অভিনয় করছেন। চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে কখনও তিনি হাস্যোজ্জ্বল কমেডিয়ান, কখনও বা জায়গির মাস্টার আবার কখনও ‘মনপুরা’র সোনাইয়ের মতো চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত সবক’টি চরিত্রই অগণিত দর্শকদের ভালবাসা ও প্রশংসা কুড়িয়েছে। ২০০৯ সালে চঞ্চল চৌধুরী গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত ‘মনপুরা’ ছবিতে অভিন করেন। এ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। চঞ্চল চৌধুরীর প্রথম চলচ্চিত্র ‘রূপকথার গল্প।’ এছাড়া তিনি অভিনয় করেছেন গৌতম ঘোষের ‘মনের মানুষ’ এবং মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘টেলিভিশন’ ছবিতে। এরমধ্যে ‘টেলিভিশন’ ছবিটি ১৭তম পুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়েছিল। মুক্তির আগেই ছবিটি ‘এশিয়ান সিনেমা ফান্ড ফর পোস্ট প্রোডাকশন’ পুরস্কার জিতে নিয়েছিল।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর সারাদেশে মুক্তি পেয়েছে আয়নাবাজি ছবিটি। আয়নাবাজি ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন মনপুরাখ্যাত অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। ইতিহাস সৃষ্টকারী সেই মনপুরায় মুগ্ধ করেছিলেন দর্শকদের। এবার আয়নাবাজি ছবিতে দর্শকদের মুগ্ধ করলেন। চঞ্চল অভিনীত ‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রটি ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা লাভ করেছে। সিনেমাপ্রেমী দর্শকরা বেশ আগ্রহ নিয়ে এটি উপভোগ করছেন। সংস্কৃতি অঙ্গনসহ দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা আলোচনায় উঠে আসছে ‘আয়নাবাজি’র প্রশংসা। বিশেষ করে চলচ্চিত্রে চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয় প্রশংসিত হচ্ছে। গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত ‘মনপুরা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে যেমন দর্শককে মুগ্ধ করেছিলেন। ঠিক তেমনি ‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রেও চঞ্চল ছয়টি ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে সাত বছর পর আবারও দর্শককে মুগ্ধ করেছেন। ছোট পর্দায় চঞ্চলতা ফিরিয়ে দিতে এক অনবদ্য নাম চঞ্চল চৌধুরী। তিনি যে তার আয়না চরিত্রকে আয়নার মতই স্বচ্ছ করে তুলেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ, অভিনয় ভাল লাগার নিশ্চয়তা যে চঞ্চল নিজেই, সে কথার প্রমাণ ইতোমধ্যেই দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম মেধাবী এই অভিনেতা। চঞ্চল চৌধুরীর অভিনীত চলচ্চিত্র ‘আয়নাবাজি’র ভেলকি চলছেই। ছোট পর্দার নির্মাতারা ব্যবসা সফল ছবি বানাতে পারেন না, এই ধারণাকে অনেক আগেই বদলে দিয়ে ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ, গিয়াস উদ্দিন সেলিমরা। নতুন করে সেই বদলে দেয়ার দেয়ালে সোনালি পেরেক ঠুকলেন গল্পে বৈচিত্র্য এনে গুণী নির্মাতা সৃষ্টিশীল কারিগর অমিতাভ রেজা চৌধুরী। ‘আয়না’ চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরীতে মুগ্ধ সারা দেশের দর্শক। প্রথম কিস্তিতে অল্পসংখ্যক সিনেমা হলে ছবিটি মুক্তি পেলেও পরের সপ্তাহ হল দখলের চমক দেখিয়েছে ‘আয়নাবাজি’ ছবিটি। ব্যবসায়িক সাফল্যে বাজিমাত করেছে আয়নাবাজি। প্রথম শো থেকেই প্রতিটি হল হাউস ফুল ছিল। দিনে পাঁচ থেকে সাতটি করে শো চলেছে ‘আয়নাবাজি’র। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শক টিকেট না পেয়ে মন খারাপ করে ফিরে যাওয়ার কথা শোনা গেছে। ছবির এমন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত চঞ্চল চৌধুরী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আয়নাবাজির টিমকে অভিনন্দন, দর্শকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। তাদের আমি বিশেষ করে ধন্যবাদ দিতে চাই। কারণ, দর্শক নিজে ছবিটি দেখছেন এবং কাছের মানুষদেরও উৎসাহিত করছেন। আমার এবং আয়নাবাজির জন্য এটা আনন্দের খবর বটে। আমি সত্যি ভীষণ আনন্দিত। ছবিটি বেশ আলোচিত হয়েছে। রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যাপক দর্শক সাড়া পাচ্ছি। সত্যিই ভাবনার চেয়েও অনেক বেশি রেসপন্স পাচ্ছি। প্রায় প্রতিটি হলেই আয়নাবাজি দেখতে দর্শকদের উপচে পড়া ভীড় আর তুমুল চাহিদার কথা শুনছি। এটা শুধু আমার মুখের কথা না। আপনারাও শুনেছেন ও দেখছেন। ফোনে ফেসবুকে সবাই খুব প্রশংসা করছেন ছবিটির। আয়নাবাজির পুরো টিমের পক্ষ থেকে সকল দর্শকের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
চঞ্চল চৌধুরী মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী, গৌতম যোষ, অমিতাভ রেজার মতো কয়েকজন গুণী নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। গুণী নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে কার সঙ্গে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেছেন, এমন প্রশ্নে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘তারা প্রত্যেকেই ভাল মানের পরিচালক। তাদের একেক জনের সঙ্গে একেক রকম অভিজ্ঞতা’। বর্তমান ব্যস্ততা কি নিয়ে জানতে চাইলে চঞ্চল বলেন, ‘এরই মধ্যে আমার কাছে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু এসবের একটিরও গল্প আমার ভাল লাগেনি বলে কাজ করা হচ্ছে না। আর এমনভাবে কোন নতুন ছবির প্রস্তাব ভাল না লাগলে আগামী দু-চার বছরে নতুন কোন চলচ্চিত্রে আমাকে দেখা যাবে না। কারণ, মনপুরা’র পর আমার অভিনীত ‘আয়নাবাজি’ দেখে দর্শক মুগ্ধ হয়েছেন। ঠিক একই উচ্চতার চলচ্চিত্রের গল্প নিয়ে যদি চলচ্চিত্র নির্মাণ না হয় তাহলে আমি কাজ করব না । ‘মনপুরা’ কিংবা ‘আয়নাবাজি’তেই না হয় মুগ্ধ হয়ে থাকুক আমার দর্শক।’
এদিকে প্রায় দুই মাস ধরে ছোট পর্দার কোন কাজ করছেন না চঞ্চল চৌধুরী। ‘আয়নাবাজি’র শূটিংয়ের সময়ও তিনি পাঁচ-ছয় মাস নাটকের জন্য শূটিং করতে পারেননি। আর এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, ঠিক কবে তিনি ছোটপর্দার জন্য কাজ শুরু করবেন। উল্লেখ্য, সর্বশেষ তিনি গত ৯ সেপ্টেম্বর নিয়াজ মাহবুবের নির্দেশনায় ‘মার্কামারা’ ঈদ ধারাবাহিকে অভিনয় করেছিলেন।