অস্ট্রেলিয়ার হোয়াইটওয়াশ লজ্জা

 In খেলাধুলা

অস্ট্রেলিয়ার হোয়াইটওয়াশ লজ্জা

অস্ট্রেলিয়াকে ‘লজ্জাজনক’ পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করার জন্য প্রাণপণ লড়েছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে একাই দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এই অজি ওপেনার। কিন্তু পারলেন না তিনি। ওয়ার্নারের প্রতিরোধ ভেঙে পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষটিতে অস্ট্রেলিয়াকে ৩১ রানে হারিয়ে উৎসবে মেতে ওঠে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই হারের মধ্য দিয়ে নিজেদের ৪৫ বছরের ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হলো অস্ট্রেলিয়া।

কেপটাউনের নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত ম্যাচে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩২৭ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সেটির পেছনে ছুটতে গিয়ে নির্ধারিত ওভারের ১০ বল বাকি থাকতেই ২৯৬ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। ফলে ৩১ রানের হার ও হোয়াইটওয়াশের লজ্জা সঙ্গী করে মাঠ ছাড়ে অজিরা।
পাঁচ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ম্যাচেই যা একটু প্রতিরোধ গড়ে অস্ট্রেলিয়া। ইনিংসের শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে ৪ উইকেট হাতে রেখেই ম্যাচটি জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এছাড়া ৬ উইকেটের ব্যবধানে দুটি জয় পাওয়া ম্যাচে যথাক্রমে ৮২ ও ৮৭ বল হাতে রেখেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যায় প্রোটিয়ারা। অন্য ম্যাচটিতে ৩৬১ রানের পাহাড় গড়ে ১৪২ রানের বিশাল জয় পায় স্বাগতিকরা।

অস্ট্রেলিয়াকে জেতাতে প্রাণপণ চেষ্টা করা ওয়ার্নার ১৭৩ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেন। ১৩৬ বলের ইনিংসে ২৪টি চারের সাহায্যে এই রান করেন তিনি। এরই মধ্য দিয়ে রিকি পন্টিংকে (১৬৪) পেছনে ফেলে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস খেলার রেকর্ড গড়েন ওয়ার্নি।

এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার হয়ে মিচেল মার্শ ৩৮ বলে ৩৫ ও ট্রাভিস হেড ৪৩ বলে সমান রানের ইনিংস খেলেন। বাকি ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হওয়ায় লজ্জাজনক হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে অজিরা।

দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে কাইল অ্যাবট, ইমরান তাহির ও ক্যাগিসো রাবাদা নেন দুটি করে উইকেট। আন্দিলে প্যালুকাওয়ে নেন একটি উইকেট। তিন অজি ব্যাটসম্যান রানআউটের শিকার হন।
জয়ের জন্য ৩২৮ রানের বিশাল লক্ষ্য নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে অ্যারন ফিঞ্চ ও ওয়ার্নার ৮২ বলে ৭২ রানের দারুণ জুটি গড়ে অস্ট্রেলিয়াকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন। তবে ৭২ থেকে ৭৫- এই ৩ রানের ব্যবধানে ফিঞ্চ (১৯), স্টিভেন স্মিথ (০) ও জর্জ বেইলিকে (২) হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে অজিরা।

চতুর্থ উইকেটে মিচেল মার্শকে নিয়ে ৬৪ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে প্রাথমিক বিপদ সামাল দেন ওয়ার্নার। দলীয় ১৩৯ রানের মাথায় মার্শ ফিরে গেলে ট্রাভিস হেডকে নিয়ে ৭৭ বলে ৯০ রানের দুর্দান্ত এক জুটি গড়ে অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন ওয়ার্নার।

দলীয় ২২৯ রানের মাথায় হেড ৪৩ বলে ৩৫ রান করে কাইল অ্যাবটের বলে ডি ককের হাতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলে ফের ব্যাকফুটে চলে যায় অস্ট্রেলিয়া। এরপরের গল্পটুকু অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা ও দক্ষিণ আফ্রিকান বোলারদের আধিপত্যের।

দলীয় ২৪৮ রানের মাথায় ম্যাথু ওয়েড (৭) অ্যাবটের বলে ডি কককে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরলে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় অস্ট্রেলিয়া। এক রানের ব্যবধানে জো ম্যানি শূন্য রানে বিদায় নিলে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় সময়ের ব্যবধানে পরিণত হয়।

বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ক্রিস ট্রেমেইনও। দলীয় ২৬২ রানের মাথায় রানআউট হয়ে ফিরে গেলে অস্ট্রেলিয়ার হার সময়ের ব্যাপারে পরিণত হয়। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে ঠিকই আক্রমণাত্মক খেলা অব্যাহত রাখেন ওয়ার্নার। নবম উইকেটে অ্যাডাম জাম্পাকে নিয়ে ১৬ বলে ২৭ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে হঠাৎ ম্যাচে রোমাঞ্চ ফিরিয়ে আনেন ওয়ার্নার।

তবে ৪৮তম ওভারের প্রথম বলে সব প্রতিরোধ ভেঙে যায় অস্ট্রেলিয়ার। পেলুকওয়ার বল ডিপ কভারে ঠেলে দিয়ে দুই রান নেয়ার জন্য ছুটছিলেন ওয়ার্নার। তবে ইমরান তাহির দ্রুত বল তুলে নিয়ে ডি ককের কাছে পাঠান। দক্ষতার সঙ্গে বল লুফে নিয়ে স্ট্যাম্প ভেঙে দেন ডি কক। ফলে ইতি ঘটে ওয়ার্নারের মহাকাব্যিক ইনিংসের। এরপর ৪৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে জাম্পা রানআউট হলে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লজ্জাজনক হোয়াইটওয়াশকে সঙ্গী করে মাঠ ছাড়ে অস্ট্রেলিয়া।

এর আগে রিলে রুশোর সেঞ্চুরি এবং জেপি ডুমিনির হাফসেঞ্চুরির সুবাদে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩২৭ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় দক্ষিণ আফ্রিকা। মাত্র ৫২ রান তুলতেই তিন শীর্ষ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চাপে পড়া প্রোটিয়াদের উদ্ধার করেন রুশো ও ডুমিনি। চতুর্থ উইকেটে এই দুজন ১৭৮ রানের অনবদ্য জুটি গড়লে মজবুত ভিত পায় স্বাগতিকরা।

দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে রুশো ১১৮ বলে ১৪টি চার ও ২টি ছক্কার সাহায্যে ১২২ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন। ডুমিনি ৭৫ বলে ৮টি চারের সাহায্যে করেন ৭৩ রান। এছাড়া ডেভিড মিলার ২৯ বলে ৩৯ রানের ‘ঝোড়ো’ ইনিংস উপহার দেন।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ক্রিস ট্রেমেইন ও জো ম্যানি তিনটি করে উইকেট নেন। স্কট বোল্যান্ড নেন দুটি উইকেট।

প্রসঙ্গত, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ শেষে বৃহস্পতিবারই দেশে ফিরবে অস্ট্রেলিয়া। ফিরতি সফরে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকা।

Recent Posts

Leave a Comment