উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও বিরোধ চরমে
হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম সারোয়ার কামালের মধ্যকার বিরোধ চরমে পেঁৗছেছে। উভয়ের মধ্যে চরম বাগ্বিত-াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করে। এ নিয়ে উপজেলা পরিষদে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের কাছে জানা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের ২ কোটি ২২ লাখ টাকার এডিবি বরাদ্দের প্রকল্প বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম সারোয়ার কামালের সাথে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূর হোসেন পাটওয়ারীর মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের বরাদ্দের টাকা যা উপজেলা উন্নয়ন তহবিলে রাখা আছে। তা ঠিকাদারদের মধ্যে পরিশোধ করার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চাপ দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটি নীতিমালা বহির্ভূত বলে তাতে স্বাক্ষর করতে রাজি না হওয়ায় তাদের মধ্যে বাগ্বিত-া হয়। এক পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে হাইমচর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরিস্থিতির অবনতি হলে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের উপস্থিতে জেলা প্রশাসক বিরোধের সাময়িক মীমাংসা করলেও ইউএনও ছুটির অজুহাতে কর্মস্থলে অনপুস্থিত থাকেন। দীর্ঘ সময় কাগজ চালাচালির পর ইউএনও কর্মস্থলে যোগ দিলেও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটেনি।
গতকাল ১৭ অক্টোবর সোমবার বিকেল ৪টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ৩নং আলগী (দঃ) ইউপি চেয়ারম্যান এমএ বাশার ইউএনওর কাছে ২ লাখ টাকা পায় বলে ফেরৎ চায়। বিষয়টি হাইমচর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মাহ্বুবুর রহমানকে জানালে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে ইউএনও তা অস্বীকার করেন এবং বাশার চেয়ারম্যানকে সামনা সামনি জিজ্ঞাসা করতে অনুরোধ করেন। এ সময় ইউএনওর অফিসে হাইমচর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ২নং আলগী (উঃ) ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেন দুলাল, ৩নং আলগী (দঃ) ইউপি চেয়ারম্যান সর্দার আব্দুল জলিল মাস্টার, হাইমচর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান পাটওয়ারী উপস্থিত ছিলেন। তখন বিরোধ মীমাংসার জন্য যুবলীগ আহ্বায়ক আতিকুর রহমান পাটওয়ারী, এমএ বাশার চেয়ারম্যানকে ইউএনও কার্যালয়ে ডেকে নেন। তিনি বিগত ৩১ মার্চের ইউপি নির্বাচনে নিজের বিজয়ে সহযোগিতা করার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ইউএনওকে ২ লাখ টাকা উৎকোচ দিয়েছেন বলে দাবি করেন। ইউএনও এসএম সারোয়ার কামাল তাৎক্ষণিক তা অস্বীকার করলে হাইমচর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফোনে উপজেলা চেয়ারম্যানকে ইউএনও অফিসে আসতে অনুরোধ করেন। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও সকলের সামনে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান ইউএনওকে ঘাড় ধরে বের করে দেবার হুমকিসহ অশ্লীল মন্তব্য করেন বলে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান। বিষয়টি ইউএনও সরোয়ার কামাল স্বীকার করেছেন। তিনি এ নিয়ে আর বেশি কিছু বলতে রাজি নন তবে তিনি গতকাল দুপুরে রিলিজ অর্ডার নিয়ে চলে এসেছেন বলে জানান। এদিক গতকাল বিকেলে উত্তপ্ত পরিস্থিতির এক পর্যায়ে ইউএনও পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে ফোন করেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিকেল ৫টায় হাইমচর এসে বিষয়টি শুনবেন বলে উপজেলা চেয়ারম্যানকে জানালে আপাতত তর্কের সমাপ্তি ঘটে। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে বিপুল পরিমাণ লোক উপজেলায় সমবেত হয়।
ঘটনার কিছুক্ষণ পর ইউএনও বাসার উদ্দেশ্যে বের হলে উপজেলা পরিষদ থেকে কিছু লোক চিৎকার করে ইউএনওকে গালমন্দ করলে, নিচতলা থেকে অন্যরা আবার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন মন্তব্য করে চিৎকার করতে শুনা যায়। বিকেল ৫টার দিকে ইউএনও চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে চলে গেলে কিছুক্ষণ পর উপজেলা চেয়ারম্যানও চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে চলে যান। তবে এসময় উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়ির পিছনে পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাইমচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতালেব জমাদার এ প্রতিনিধিকে জানান, আগামী ৩০ অক্টোবর ত্রাণ অধিদপ্তরের কিছু ব্রিজের টেন্ডার রয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান টেন্ডার গুপছি করার জন্য ১০% টাকা নিয়ে কোন কোন ঠিকাদারের কাছে কাগজ বিক্রি করা শুরু করছেন। এই ইউএনও এখানে থাকলে তার পক্ষে টেন্ডার গুপছি করা সম্ভব নয় বলে মনে করে টেন্ডারকে নির্ভেজাল করতে ইউএনওকে গালমন্দ শুরু করে পরিকল্পিতভাবে উৎকোচের অভিযোগ তুলে পরিস্থিতি সৃষ্টি করাতে চাচ্ছে। তবে উপজেলা চেয়ারম্যানের এ খায়েশ পূরণ হবে না। তিনি এ বিষয়ে মাননীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
৩নং আলগী (দঃ) ইউপি চেয়ারম্যান সর্দার আব্দুল জলিল মাস্টার ও উপজেলা যুবলীগ আহ্বায়ক আতিকুর রহমান পাটওয়ারী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা আবুল বাসার জানান, আমার কাছ থেকে ইউএনও দুই লাখ টাকা উপজেলা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে নিয়েছেন। কিন্তু আমার প্রতিপক্ষের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা নিয়ে তাকে জয়ী করিয়েছেন। পরবর্তীতে আমার টাকার জন্যে আমি ইউএনও সাহেবের কাছে বললে তিনি দেই দিচ্ছি করে আমাকে বেশ কয়েকবার তারিখ দিয়েছেন। কিন্তু টাকাটি দেননি। বিষয়টি আমি প্রায় মাসখানেক আগে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে মৌখিকভাবে জানিয়েছি। কিন্তু ইউএনও টাকা পরিশোধ করার