খাদিজার সুসংবাদ পাওয়ার অপেক্ষায় আছি : তুষার আবদুল্লাহ

 In খোলা কলাম
খাদিজার সুসংবাদ পাওয়ার অপেক্ষায় আছি

যখন লিখছি তখন সিলেট শহর উত্তাল। শহরের স্কুল কলেজের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিবাদে রাস্তায়। প্রতিবাদ সিলেট সরকারী মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসের উপর হামলার। সোমবার নার্গিস যখন এম সি কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে বের হচ্ছিল তখনই শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বদরুল ইসলাম তার উপর হামলা করে। নার্গিসকে নির্মমভাবে কোপানোর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

লিখছি যখন তখন খাদিজা ওরফে নার্গিস ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। গণপিটুনির শিকার বদরুলকে ঘটনার পরপরই পুলিশ আটক করে। শিক্ষার্থীর পরিচয়ের বাইরে তার আরেক পরিচয় সে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক।

বদরুল সম্পর্কে যতোটুকু জানতে পারা গেছে, নার্গিসের বাড়িতেই সে লজিং থাকতো। লজিং থাকা অবস্থাতেই বদরুল নার্গিসকে নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করতো। প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে গেছে। কিন্তু নার্গিস সেই প্রস্তাবে রাজি হচ্ছিল না। প্রেমে রাজি করাতে না পেরেই বদরুল নার্গিসের উপর ছুরি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফেসবুকে থেকে পাওয়া ভিডিওতে দেখা গেল-কতো নির্মম ভাবে প্রকাশ্যে বদরুল নার্গিসকে কুপিয়ে যাচ্ছে। এই নৃশংসতার প্রতিবাদে ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

সোমবার বিকাল থেকেই সিলেটসহ সারাদেশে প্রশ্ন উঠেছে ছাত্রলীগের পরিচয়ে বদরুল আইন ও বিচার থেকে না রক্ষা পেয়ে যায়। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে শোনা গেল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগও সাধারন ছাত্র-ছাত্রীদের বিক্ষোভ-আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি-তাদের এই ভূমিকায় কোনো ভনিতা নেই। তারাও নিশ্চয়ই চায় দলের প্রভাবকে পুঁজি করে বদরুল যে নৃশংসতা দেখিয়েছে, তার বিচার হোক।

আবার এমনও হতে পারে আন্দোলনের ভেতরে নিজেরা অনুপ্রবেশ করে ধীরে ধীরে বিক্ষোভ-প্রতিবাদকে শীতল করে দেয়া। আমি এককভাবে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল বা কোনো একটি ছাত্র সংগঠনকে দায়ি করতে চাই না। আমরা অতীত, বর্তমানে চোখ রেখে দেখতে পারি-যখনই ক্ষমতার তাপে কোনো ছাত্র সংগঠন উষ্ণ হয়ে উঠে, তখনই সেই সংগঠনের নেতা-কর্মিরা আর নিজেদের সামলাতে পারে না।

দখল, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও হত্যার অভিযানে নেমে পড়ে। নানা সময়ে এই ছাত্র সংগঠনগুলো বেপরোয়া গতিতে চলতে থাকে। তাদের নিয়ন্ত্রণ নিতে মূল দলের শীর্ষ নেতাদের মনোযোগ বা হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। তখন হয়তো কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আসে। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে আবার ব্রেকফেল।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ থেকে নানা সময়ে বেপরোয়া, নিয়ন্ত্রণ এবং ব্রেকফেলের ঘটনা ঘটেছে। নার্গিসের উপর হামলা সেই ব্রেকফেল বলা যেতে পারে। কারণ, নার্গিসের প্রতি সাধারণভাবে প্রেমে আসক্ত হতেই পারতো বদরুল। নার্গিস তার প্রেম প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতেই পারতো। এবং তার প্রতিশোধ নেয়ার নানা পন্থা হয়তো বদরুলের দিক থেকে নেয়া যেতো, কিন্তু রাজনৈতিক ‘প্রতিহিংসা’র ঢঙে এমন ভাবে কোপানোর প্ররোচনা বা দুঃসাহসটি সে পেয়েছে ছাত্র সংগঠনের সদস্য বা নেতার অবস্থান থেকেই।

ছাত্রলীগ বা ছাত্রদল নিয়ে কথা বলতে হলে আবার সেই পুরনো প্রসঙ্গেই ফিরে যেতে হয়। ছাত্র সংগঠন গুলোর মধ্যে সৃজনশীল গনতন্ত্রের চর্চা নেই। নেই সৃজনশীল নেতৃত্ব তৈরির আয়োজন। ফলে ছাত্র সংগঠন গুলোতে প্রবেশ কর্মি থেকে নেতা হবার প্রক্রিয়ার সঙ্গে কতিপয় মূল দলের নেতা ও ছাত্র সংগঠনের বড় ভাই বন্দনাই মূল পুঁজি।

এখানে সহিংসতা ও দখলের স্ফুরণই মুখ্য। অনেকে বলছেন ব্যক্তিগত বিষয়ের সঙ্গে তার সংগঠনকে জড়ানো উচিত হবে না। কারন বদরুলের প্রেম, নার্গিসকে কোপানোর বিষয়ের সঙ্গে তো ছাত্রলীগ জড়িত নয়। তবে কেনো ছাত্রলীগকে টেনে আনা। সংগঠনের নাম আসছে এজন্য যে, বদরুল আপন শক্তিতে এই কাণ্ড ঘটায়নি।

পরিকল্পনা পর্যায়ে তার মস্তিকে এই বিষয়টি কাজ করেছে যে-সে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের নেতা। অতএব এই ঘটনা ঘটিয়ে ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাবার একটা সম্ভাবনা সে দেখেছে। কিন্তু ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে যদি সৃজনশীলতা, সহিষ্ণুতার চর্চা থাকতো তাহলে প্রেমে প্রত্যাখাত হয়ে বদরুল এমন নৃশংসতার আশ্রয় নিতো না।

একই ভাবে দল বা সংগঠন যদি অতীতে এমন কর্মকাণ্ড তার নেতা-কর্মীদের প্রশ্রয় না দিতো, তা হলেও তার ভেতর দল, পদ হারানোর ভীতি কাজ করতো। লেখার এই পর্যায়ে যখন এসে পৌঁছেছি তখন খবর পেলাম-নার্গিসের মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার শুরু হয়েছে। খুব ঝুঁকিতে আছে খাদিজা। প্রত্যাশা থাকবে আবার সবুজ সিলেটের ক্যাম্পাসে ফিরে আসবে ও।

একই সঙ্গে প্রত্যাশা রইলো শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, এম সি কলেজ ছাত্রলীগসহ মূল ছাত্র সংগঠনটিও সাধারন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বদরুলের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হবে। তাহলে ছাত্র সংগঠন গুলোর ভেতর থেকে বদরুল উৎপাদন, আত্মপ্রকাশ বন্ধ হবে।

অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে সুসংবাদ পাওয়ার অপেক্ষায় রইলাম।

তুষার আবদুল্লাহ : বার্তা প্রধান, সময় টিভি।

Recent Posts

Leave a Comment