স্টারলিং এভিনিউয়ের উপর একটি বাংলাদেশি মালিকানার দোকানের সামনে ম্যাসাচুসেটসের নম্বর প্লেটধারী লাল রঙের একটি গাড়ি পার্ক করা ছিল। মিটারের সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ায় একজন ট্রাফিক পুলিশ টিকিট দিতে গিয়ে দেখতে পায় গাড়িতে ইতোপূর্বে আরো তিনটি টিকিট দেওয়া রয়েছে। পরবর্তীতে তিনি নিশ্চিত হন যে এটি একটি চুরি হওয়া গাড়ি। ভেতরে পর্যবেক্ষণ করে তিনি দেখতে পান গাড়ির পেছনের সিটে একটি প্রেসার কুকার রয়েছে। তিনি এটাতে এক্সক্লুসিভ আছে সন্দেহে পুলিশে কল দেন। পুলিশ দ্রুত এসে এলাকাটি ঘিরে ফেলে। নিরাপত্তার স্বার্থে দোকানপাট থেকে সমস্ত লোকজন সরিয়ে দেয়। হেলিকপ্টার এসে উপর থেকে নজরদারি শুরু করে। পুলিশ ডগ স্কোয়াড দিয়ে রাস্তার দু’পাশে পার্কিং করা গাড়িগুলোতে তল্লাশি শুরু করে। এক পর্যায়ে সন্দেহের লাল গাড়িটির জানালা ভেঙে পেছনের সিট থেকে প্রেসার কুকারটি উদ্ধার করে তারা নিশ্চিত হয় যে এটি একটি সাধারণ প্রেসার কুকার। গাড়িটি পুলিশ টো করে নিয়ে যায়। বিকেল ৪টায় যানবাহন চলাচলের জন্য রাস্তা খুলে দিলে এলাকায় স্বস্তি ফিরে আসে।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বাংলাদেশিদের মধ্যে হাস্যরসের সৃষ্টি হলেও নিউইয়র্ক আর যুক্তরাষ্ট্রের জনবহুল শহরগুলোর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য এই প্রেসার কুকার রীতিমতো এখন আতঙ্কের নাম। দু’সপ্তাহ আগে ম্যানহাটনে জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগ দিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে রাষ্ট্রীয় অতিথিদের আগমনের দিন ম্যানহাটানো চেলসা এলাকায় এমন একটি প্রেসার কুকার বিস্ফোরণে অন্তত ২৯ জন আহত হয়েছিলেন। ওই একই দিন নিউজার্সির মেরিন সেনাদের একটি পাইপ লাইন এলাকায় একই ধরনের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পুলিশ ওই ঘটনায় আফগানিস্তান থেকে আসা আহমেদ খান রাহমি নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে। নিউজার্সি থেকে পড়ে থাকা আরো ৫টি প্রেসার কুকার উদ্ধার করে সেখানকার পুলিশ। এগুলো বিস্ফোরণে মানুষের মৃত্যুও হতে পারত বলে জানিয়েছিল পুলিশ। এ ধরনের একটি হামলায় বহু হতাহত হয় ২০১৩ সালে বোস্টনের ম্যারাথন দৌড়ের একটি আয়োজনে।
পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের উত্তাপে বেশ তটস্থ যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ। নিউইয়র্ক তো অবশ্যই। এখানকার শীর্ষ পুলিশ কমিশনার, সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিও প্রায় সময় বলেন, সন্ত্রাসীদের হামলার প্রথম টার্গেট যদি যুক্তরাষ্ট্র হয়, তাহলে আবার তাদের হামলার শীর্ষ পছন্দের তালিকায় আছে নিউইয়র্ক। সেই নিউইয়র্কে বাংলাদেশিসহ ভারতীয়, পাকিস্তানি আর এশীয়দের অনেকেই রান্নার কাজে ব্যবহার করে প্রেসার কুকার। সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে প্রেসার কুকারে সন্দেহ বাড়ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তাই, শুধু রান্নার কাজে প্রেসার কুকার যারা ব্যবহার করেন, তারা বাজার থেকে প্রেসার কুকার কিনে বাড়ি নিয়ে যাবার পথে কোনো তল্লাশি করা হবে কিনা এই শঙ্কাতেই আছেন।