একই সঙ্গে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নবনির্মিত ১১টি ড্রেজার উদ্বোধন করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ নদীমাত্রিক দেশ। এই নদী সচল রাখতে হলে প্রতি বছর মেন্টেনেস ড্রেজিং দরকার। জাতির পিতাই প্রথম ড্রেজার কিনেছিলেন এবং ড্রেজিং এর কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু ৭৫ এর ১৫ অগাস্ট তাকে হত্যার পর সব কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। পরবর্তীতে কোনো সরকার নদীর নাব্যতা রক্ষায় ড্রেজিং এর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে নদীর নব্যতা ফিরিয়ে আনতে ড্রেজিং এর ব্যবস্থা চালু করে।’
তিনি বলেন, ‘সুন্দরবন আমাদের একটা সম্পদ আর এই সুন্দরবনের জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে বাংলাদেশ রক্ষা পাচ্ছে। এই সম্পদ সুন্দরবনকে রক্ষা করতেই মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ চ্যানেলের খনন কাজ। এই চ্যানেল চালু হলে মংলা বন্দর আরো সচল হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সুন্দরবনের ভেতরে শ্যালা নদীর আশপাশ এলাকা বন্য প্রাণীর অভয়শ্রম। আর এই শ্যালা নদী দিয়ে জাহাজ চলাচলে বন্য প্রাণী-সহ সুন্দরবনের ক্ষতি হতো। এই চ্যানেল চালু হওয়ায় সুন্দরবনের মধ্যে শ্যালা নদী দিয়ে জাহাজ চলাচল হ্রাস পাবে আর রক্ষা পাবে সুন্দরবন।’
তিনি বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলটা ছিল অবহেলিত, কিন্তু আমরা যে কার্যক্রম হাতে নিয়েছি স্থানীয় জনগণের সহায়তা পেলে এ অঞ্চলের মানুষ আর দরিদ্র থাকবে না। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের এবং আর্থিকভাবে লাভবান হবে এ এলাকার মানুষ।’
শেখ হাসিনা বলেন, মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ চ্যানেল বন্ধ হয়ে গেল, এ এলাকার খাল বন্ধ করে চিংড়ি চাষ করা হল। সুন্দরবনের মধ্যে শ্যালা নদী দিয়ে জাহাজ চলাচল করত। তখন পরিবেশবাদীদের কোনো টু শব্দ করতে শুনিনি। আর যখন আমরা সুন্দরবনের ১৪ মাইল দুরে পাওয়ার প্লান্ট করি সেটা নিয়ে তারা কেঁদে মরে।
তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, আমরা বিজয়ী জাতি। বিশ্বে আমরা মাথা উচু করে করে চলতে চাই, ভিক্ষুক হয়ে না। বাংলাদেশের মানুষ কারো কাছে হাত পাতবে না। নিজের ফসল নিজেই উৎপাদন করবে। কারো কাছে ভিক্ষে চাইতে হবে না।
উদ্বোধনকালে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মোজাম্মেল হোসেন গণভবনে উপস্থিত ছিলেন।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন- নৌ সচিব অশোক মাধব রায়, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এম বদরুদ্দোজা, বিআইডব্লিউটএ’র চেয়ারম্যান কমডোর এম মোজাম্মেল হক, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বদরুল হাসান, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুস সামাদ, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মীর শওকত আলী বাদশাসহ আরো অনেকে।
জেটি ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক স্থাপনাসহ প্রকল্পটি নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৫শ’ ৭৭ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৩শ’ ৭৭ কোটি টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার এবং বাকি ২শ’ কেটি জাপানের জেডিসিএফ অর্থায়ন করেছে।
৫০ হাজার টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন আধুনিক এই কনক্রিট গ্রেইন সাইলোতে যান্ত্রিক উপায়ে খাদ্য খালাসের ব্যবস্থা থাকায় অপচয় এবং খরচ কমবে। সাইলোর মতো মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলটিও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে সুন্দরবনের সুরক্ষার জন্য।
মংলা বন্দরের আন্তর্জাতিক নৌ-রুট মংলা–ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি পুনঃখননের মাধ্যমে চলাচল উপযোগী করতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বিআইডাব্লিউটিএ। বর্তমানে চ্যানেলেটি দিয়ে পূর্ণ জোয়ারে ১৫ ফিট গভীরতার নৌযান চলাচল করছে এবং সুন্দরবনে অভ্যন্তরের শ্যালা নৌ-পথটি বন্ধ রয়েছে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।