ভাগ্য খুলছে ডা. দীপু মনি ফারুক খান ও রাজ্জাকের
আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে কে কোন পদ পাচ্ছেন, কার ভাগ্য খুলছে, কার কপাল পুড়ছেÑ এমন অসংখ্য প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। শুধু দলটির নেতাকর্মীরাই নন, সাধারণ মানুষেরও এ নিয়ে অশেষ কৌতূহল। তবে এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা দিচ্ছেন না ক্ষমতাসীন দলটির উচ্চ পর্যায়ের কোনো নেতা। সবাই বলছেন, দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সব জানেন, তিনিই সব নির্ধারণ করবেন। এদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি সবার কথা শুনছেন, কিন্তু বলছেন না কিছু। এমন পরিস্থিতিতে একটি বিশেষ সূত্র থেকে পাওয়া গেছে আওয়ামী লীগের অনেক নেতার ভাগ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত।
আগামী ২২-২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল। এর আগে দলটির তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরের মতামতের ওপর ভিত্তি করে একটি সংস্থা তৈরি করেছে প্রতিবেদন। এতে বলা হয়েছে, আসন্ন কাউন্সিলে ভাগ্য খুলছে ডা. দীপু মনি, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান ও ড. আব্দুর রাজ্জাকের। এই তিন নেতা কাউন্সিলরদের ভোটে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিম-লী বা প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে স্থান পেতে পারেন। অন্যদিকে স্বপদেই বহাল থাকছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এ ছাড়া যথাযথ মূল্যায়ন সাপেক্ষে পুরস্কৃত করা হবে ছাত্রলীগের ত্যাগী নেতাদেরও। এতসব হিসাব-নিকাশের মধ্যে একটি বিষয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যন্ত সবাই একমত। তা হলো, এ মুহূর্তে দলীয় প্রধানের চেয়ারে বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কাউকে ভাবছেন না তারা।
কাউন্সিলরদের মতামতনির্ভর প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বারদের মধ্যে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী দল থেকে বহিষ্কৃত। মারা গেছেন সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন। ফলে প্রেসিডিয়ামের দুটি সদস্যপদ ফাঁকা। অন্যদিকে দলের প্রবীণ নেতা ও প্রেসিডিয়াম মেম্বার সতীশ চন্দ্র রায়ের বয়স হয়েছে। তাই অনেক কাউন্সিলরই তাকে আর এই গুরুত্বপূর্ণ পদে চান না। তাই সম্ভাব্য সৃষ্ট হওয়া ওই তিনটি পদে ডা. দীপু মনি, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান ও ড. আব্দুর রাজ্জাককে দেখতে চান জনমত যাচাইয়ে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ কাউন্সিলর। তাদের ভাষ্য, ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই তিনজনই মন্ত্রী হিসেবে ক্লিন ইমেজের ছিলেন।
ডা. দীপু মণি এমপি বর্তমানে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। মহাজোট সরকারের সময় তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি বর্তমানে দলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক। আগের সরকারে তিনি বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন। ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি বর্তমানে দলের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক। গত সরকারে তিনি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সৎ ও ত্যাগী নেতা হিসেবে দলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বিকল্প নেই। তাই তাকে সাধারণ সম্পাদকের পদে আবারও নির্বাচিত করা হলে দল সুসংগঠিত থাকবে। থাকবে না কোনো গ্রুপিং। দলীয় নেতাকর্মীদের সময় না দিতে পারলেও সংকটময় পরিস্থিতিতে তার বিকল্প নেই। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পর সাবেক ছাত্রনেতা ওবায়দুল কাদের আলোচনায় আছেন।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে রাজপথের সাহসী সৈনিকদের সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদেরও গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখতে চান তৃণমূলের কাউন্সিলররা। তাদের বক্তব্য, ২০০১-পরবর্তী তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে নির্যাতিত-নিপীড়িত, মামলায় আক্রান্ত নেতাদের মধ্য থেকে যোগ্যদের মূল সংগঠন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা উচিত। কারণ এতে তরুণ প্রজন্ম উৎসাহিত হবে। যারা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে, তারা সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের বর্তমান ভালো অবস্থান দেখে ছাত্রলীগের প্রতি আকৃষ্ট হবে। এতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা নিজেদের ইতিবাচক ইমেজ সৃষ্টি করে সোনালি ভবিষ্যতের স্বপ্নে দলের হয়ে কাজ করবে।
এদিকে দেশি-বিদেশি অতিথিসহ বিপুলসংখ্যক কাউন্সিলরের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিতব্য কাউন্সিলস্থলে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ধরনের নেতিবাচক তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়, পছন্দ বা গ্রুপের নেতার পছন্দসই পদ পেতে কর্মীদের/কাউন্সিলরদের মধ্যে উত্তেজনা থাকতে পারে। তবে তাতে মারামারী বা হাতাহাতির মতো ঘটনা সৃষ্টির আশঙ্কা নেই। এ ছাড়া বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য কাউন্সিলস্থলে উপস্থিত থাকবেন।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ১৫ জন। এর মধ্যে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন মারা গেছেন। আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বহিষ্কৃত। আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইটে থাকা তথ্য অনুযায়ী প্রেসিডিয়াম মেম্বাররা হলেনÑ সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফর উল্লাহ, সতীশ চন্দ্র রায়, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, ওবায়দুল কাদের, নূহ-উল-আলম লেনিন, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এর বাইরে সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পদাধিকারবলে প্রেসিডিয়াম মেম্বার।