দলীয় পারফরমেন্সের পাশাপাশি সাকিবের নৈপুণ্যের কারণে বিশ্বক্রিকেটে বাংলাদেশ পেয়েছে আলাদা পরিচয়। দেশের সকল মানুষ সাকিবের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অথচ তার বাবা মাশরুর রেজা কুটিল কখনো সন্তানের খেলা দেখেন না। বরং অন্যের মুখ থেকে সন্তানের প্রশংসা শুনে পুলকিত হন। গর্ববোধ করেন। সবার কাছে ছেলে ও দলের সকলের জন্য দোয়া চান।
ছেলের খেলা না দেখা নিয়ে মাশরুর রেজা পরিবর্তন ডটকমকে বলেছেন, ‘ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। যেখানে প্রতি বলেই উত্তেজনা থাকে। সাকিব যখন খেলে তখন সেই উত্তেজনা আরো বেড়ে যায়। যে কারণে সরাসরি কখনো তার খেলা দেখিনা। তবে পরে ধারণকৃত অংশগুলো দেখি।’
বিশ্বখ্যাত এই ক্রিকেটার ১৯৯৮ সালে মাগুরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে শহরের খ্যাতনামা মাগুরা ক্রিকেট একাডেমীতে প্রশিক্ষণ শুরু করে। যেখান থেকে তার ক্রিকেট জীবনের যাত্রা। পরে একে একে পৌঁছে গেছেন সাফল্য-চূঁড়ায়। যে সাফল্যে গৌরবান্বিত তার নিজ জেলার মানুষেরা।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডের পর হারের ক্ষত সঙ্গী করেই সাকিবের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন মাগুরা ক্রিকেট একাডেমির প্রশিক্ষক ও পরিচালক সাদ্দাম হোসেন। সাকিবের শৈশবের গুরু বলেন, ‘সাকিবের এই সাকিব হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে তার একাগ্রতা। সে একমুখী মানুষ। ক্রিকেটই তার ধ্যান জ্ঞান। ব্যক্তিগত জীবন ও বাইরের পরিমণ্ডলের সবকিছু থেকে সে ক্রিকেটকে আলাদা করতে পেরেছে বলেই সাফল্য তাকে ধাওয়া করে বেড়ায়। যে কারণেই দল হেরে গেলেও ব্যক্তিগত নৈপুণ্যটা তাকে আলাদা উচ্চতায় নিয়ে যায়। তার প্রথম জীবনের ক্রিকেট প্রশিক্ষক হিসেবে বিষয়টি আমি বেশ উপভোগ করি।’
সেই ছোটবেলা থেকে এই সাকিব হয়ে ওঠার পরও যে বন্ধুদের সঙ্গে রয়েছে সাকিবের অবিচ্ছিন্ন ঘনিষ্ঠতা! বন্ধুদের একজন ক্রীড়া রিপোর্টার নয়ন খানের দৃষ্টিতে সাকিবের বড় শক্তি হচ্ছে, ‘সাকিব মাঠে নামার আগেই পঞ্চাশ ভাগ জিতে থাকে। তার ভেতরে সব সময় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে। সে যখন ব্যাটসম্যান, তখন বোলারকে ডমিনেট করার চেষ্টা করে। আর বল করার সময় ব্যাটসম্যানকে রিড করার চেষ্টা করে। ফিল্ডিংয়েও নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে। প্রত্যেকটি বিভাগেই সে আলাদা করে অবদান রাখতে পারে। আর সব বিভাগে আলাদা অবদান রাখতে পারে বলেই সে অলরাউন্ডার! যে কারণে সে চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার হয়ে উঠেছে।’
সাকিবের স্কুল জীবনের আরেক বন্ধু স্কুলশিক্ষক সজিব হাসান বলেন, ‘সাকিব সম্পর্কে যে যাই বলুক এখন তার সবচেয়ে বড় পরিচয় সে বিশ্ববরেণ্য ক্রিকেটার। ক্রিকেটকে পৃথিবীর তাবৎ বিষয় থেকে সে আলাদা করে রাখে। মাঠের বাইরের ভাবনাগুলো থেকে সে অনেক দূরে থাকতে পারে বলেই নিজের মাঝে থাকা ক্রিকেটকে এতো উচ্চতায় নিতে পেরেছে। এতে আমরা মাগুরাবাসী বা বন্ধুরা তার সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হলেও দেশ তার মত একজন অলরাউন্ডারকে পেয়েছে। এটাই সকলের গর্বের।
শুক্রবারের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২১ রানে হারা ম্যাচ সম্পর্কে মাগুরার কলেজ শিক্ষক আরিফ খান বলেন, ‘সাকিব ইংল্যান্ডের মতো একটি বড় দলকে ছেলে খেলায় মাটিতে নামিয়ে এনে আমাদের জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিল। আবার সেই আমাদের আশাহত করেছে। ক্রিকেট এমনই। সবসময়ই অনিশ্চয়তার। সাকিব সেটি আবারো প্রমাণ করল। সামনে সে আমাদের আরো গৌরব উপহার দেবে বলে আশা রাখি।’