
প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার কথা শুনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন মিরাজ। বুধবার বেলা ১১টায় বিমানযোগে খুলনা থেকে ঢাকায় পৌঁছান মিরাজ। মুঠোফোনে প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি দেওয়ার নির্দেশনার খবর পেয়ে কৃতজ্ঞতা জানান মিরাজ।
কেডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী সাবিরুল আলম জানান, জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা জানার পর মিরাজের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। মিরাজ তাকে জানিয়েছেন মহানগরীর খালিশপুর, মুজগুন্নী বেল্টে (এলাকায়) যাতায়াত থাকার কারণে ওই দিকে বাড়ি হলে ভালো হয়। সেক্ষেত্রে মিরাজের বাড়ির জন্য শেখ আবু নাসের হাসপাতালের সামনে কেডিএ’র বাণিজ্যিক কাম আবাসিক প্লটের কথা চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে বলে জানান কেডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী।
ঘরের মাঠে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের নেতৃত্ব দেওয়া মিরাজ যুব বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হয়ে যখন নিজ শহর খুলনায় ফিরেছিলেন, তখনই তাকে দেখতে ভক্ত-সমর্থকদের ঢল নেমেছিল। সেটি আরো বহুমাত্রায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ইংল্যান্ড সিরিজে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের নায়ক বনে যাওয়ার পর। এবার খুলনায় ফেরার পর তাই ভক্তরা প্রিয় তারকাকে একনজর দেখতে উপচে পড়ছেন মিরাজের বাড়িতে।
মিরাজের পরিবার থাকেন খুলনার খালিশপুরের ছোট্ট এক ভাড়া করা কুটিরে। জাতীয় দল তারকার ছোট্ট উঠোনের পরিসরও মানুষের ভিড় ঠাঁই দেওয়ার মত পর্যাপ্ত নয়। উঠোনের সেই ভিড় পৌঁছে গেছে খালিশপুরের নতুন রাস্তার মোড় পর্যন্ত। তবুও মানুষের এক নজর দেখা চাই প্রিয় তারকাকে, চাই অন্তত একটা সেলফিও।
মিরাজের বাবা জালাল তালুকদার কিছুদিন আগেও মাইক্রোবাস চালক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতেন। অসুস্থতার কারণে তিনি অবশ্য সেই পেশা ছেড়েছেন। কিন্তু টিনচালা বাড়িটি ছেড়ে সাজানো গোছানো কোনো ফ্লাটে নিবাস গড়ার সামর্থ্য করে উঠতে পারেননি এখনো। ছোট্ট কুটিরে উৎসুক মানুষকে আতিথেয়তা দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না তাই। সেটিই নজরে এসেছে ক্রীড়ামোদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এরপরই জাতীয় সম্পদের পরিবারকে যথাযোগ্য স্থানে আবাসন দিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টের ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মতো ৬ উইকেট নেওয়াসহ মোট ১৯ উইকেট পাওয়ার কীর্তি গড়েছেন মিরাজ। তার ক্যারিয়ার সেরা প্রদর্শনীটি এখন ৬/৭৭! দুর্দান্ত বোলিংয়ের মধ্য দিয়ে ১২৯ বছরের পুরনো বিশ্বরেকর্ড ভেঙেছেন এই তরুণ। আর দুই টেস্টের সিরিজে ১-১ ব্যবধানে সমতা টেনে ‘জয়ের উৎসব’ করেছে বাংলাদেশ।
অভিষেকের পর দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট নেয়ার কীর্তি এখন মিরাজের। টেস্ট আঙিনায় নেমেই দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে সর্বোচ্চ ১৮ উইকেট নেয়ার বিশ্বরেকর্ড এতদিন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক বাঁহাতি পেসার জন জেমস প্যারিসের দখলে ছিল। ১৮৮৬ সালে এই কীর্তি গড়েন তিনি। সেই কীর্তিকে ছাপিয়ে যাওয়া মিরাজের উইকেট এখন ১৯টি।
চট্টগ্রামে অভিষেক টেস্টের দুই ইনিংসে (৬+১) ৭ উইকেট নেয়ার পর ঢাকা টেস্টে (৬+৬) উইকেট নিয়েছিলেন এই তরুণ অফস্পিনার। সঙ্গে মাত্র দুই টেস্টে ৩ বার ৫ বা ততোধিক উইকেট নিয়ে অভিজাত এক ক্লাবেও জায়গা করে নিয়েছেন। তার আগে টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম দুই ম্যাচে তিনবার ৫ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়া অপর চারজন হলেন- নরেন্দ্র হিরওয়ানি, ক্লারি গ্রিমেট, টম রিচার্ডসন, সিডনি বার্নেস ও রডনি হগ।