জেলেদের খাদ্য সহায়তা নিয়ে অনিশ্চয়তা!

 In ব্যবসা বাণিজ্য, লিড নিউজ

চাঁদপুর প্রতিনিধি:
এই তিনশ, তিনশোরে, তিনশ। চারশ চারশ বিশ। পঞ্চা, পঞ্চা চারশ পঞ্চাশ। এই আর নাই। লন মিয়া ভাই। এমন সুরছন্দ শুনা যায়না চাঁদপুরের ছোট বড় আড়ৎগুলোতে। নদীতে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় ছোট সব আড়ৎ বন্ধ। প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র একজায়গায় থুবিয়ে রেখেছেন আড়ৎদাররা। এসব আড়ৎগুলো গত ছয় দিন আগে খুব জমজমাট ছিলো। কয়েকটি আড়ৎ ঘুরে একজন আড়ৎদারকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
যদিও নদী পাড় ঘুরে দেকা যায়, জেলেরা নৌকা আর জাল মেরামত করছেন। আবার কেউ কেউ দোকানের সামনে পাতা টেবিলে বসে টিভি দেখছেন। কেউ বা খোশগল্পে মেতে উঠেছেন। অলস সময় কাটানো ওসব জেলে এ প্রতিবেদককে দেখে হতাশার ছাপ পড়া মুখে কাছে এসে বলেন, স্যার চাইল কবে দিব? গেল বার তো কর্মসূচির শুরুতেই দিছে। কেউ কেউ বলছে, আমরা তো নদীর পাড়ে বইয়া রইলাম। নদীতে নামি না। মাছ ধরি না। তয় চাইল দেয় না ক্যান? আর কবে দিবো?
এতো প্রশ্নের মাঝে তাদের নাম জানার কথাই ভুলে যাই। শুধু একটা মিথ্যে আশ্বাস ‘পেয়ে যাবেন পেয়ে যাবেন’ বলে স্থান ত্যাগ করি। জায়গাটির নাম চাঁদপুর সদর উপজেলার হারিণা ফেরি ঘাট। জেলেদের এতোগুলো প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেতে ছুটে যাই পার্শ্ববর্তি চাঁদপুর সদর উপজেলার ১২নম্বর চান্দ্রা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খান জাহান আলী কালু’র কাছে। তিনি জানান, মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম সফল করতে আমরা বদ্ধপরিকর। দশজন চৌকিদার একজন দফাদারসহ আমি নিয়মিত নদীতে টহল দিচ্ছি। গত পাঁচ দিনে কেউ নদীতে নামেনি। জেলেদের চাল পাবার ব্যাপারে তিনি জানান, আগামী সপ্তাহে চাল আসতে পারে এমটাই শুনেছি। তবে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়।
ইলিশের প্রজনন সময়ের পাঁচ দিন পার হলেও কোনো প্রকার খাদ্য সহায়তা পায়নি চাঁদপুরের ৫১ হাজার ১শ ৯০ জেলে। সরকারের এ নূন্যতম সহায়তা নির্দিষ্ট সময়ে না পেয়ে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছে তারা। এ নিয়ে জেলেদের মনে বাড়ছে ক্ষোভ। পাশাপাশি বাড়ছে ঋণের বোঝা। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসনের শীর্ষ এক কর্মকর্তার সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে তিনি নিশ্চত করে কিছু বলতে পারেন নি। অপর দিকে চাল পাবার আশায় বুক বেঁধে আছেন চাঁদপুরের অর্ধলক্ষাধীক জেলে পরিবার। গতবছর এ কর্মসূচির শুরুতেই প্রতি জেলেকে ২০কেজি করে চাল দেয়া উদ্যোগ নেয়ায় জেলেরা দ্রুত খাদ্য সহায়তা পায়।
কর্মসূচি সফল করতে দিন রাত পরিশ্রম করেছে যাচ্ছেন দাবি করে জেলা প্রশাসক মোঃ আবদুস সবুর মন্ডল বলেন কর্মসূচি প্রায় শতভাগ সফল হবে এবং ইলিশ উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে। মুষ্টিমেয় কিছু অসাধু লোক নদীতে নামছে। তারা মূলত মৌসুমি জেলে। অবশ্য তাদেরকে কারাদন্ড ও অর্থদন্ডও দেয়া হচ্ছে। জেলেরা কবে নাগাদ চাল পেতে পারে জানতে চাইলে তিনি উত্তর এড়িয়ে যান। অপর দিকে চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ সফিকুর রহমানও ভিজিএফ’র চাল দেয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেন নি। তবে একটি বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়, এবছর রোহিঙ্গাদের মাঝে পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ বিতরণ করায় জেলেদের চাল দেয়ার সম্ভবনা কমে গেছে। কারণ ভিজিএফ এর চাল ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো প্রকার তৎপড়তা চোখে পড়েনি।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত পাঁচ দিনে চাঁদপুরে ১৭জন জেলেকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। জাল উদ্ধার হয়েছে প্রায় ২০হাজার মিটার। এবং দেড় শতাধিক মন ইলিশ জব্দ করেছে প্রশাসন। চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনায় (১মার্চ-৩০এপ্রিল) দুই মাস সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ। ইলিশ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত ২০০৬ সাল থেকে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর ১শ কিলোমিটার এলাকায়সহ দেশের ৫টি অঞ্চলে এ কর্মসূচি চলে আসছে।

Recent Posts

Leave a Comment