বাবরি মসজিদের মতো তাজমহলও ধ্বংস করা হতে পারে!

 In দেশের বাইরে, প্রধান খবর

ভারতে মোগল ঐতিহ্যের প্রতীক বাবরি মসজিদের মতো সম্রাট শাহজাহানের প্রেমের সৌধ তাজমহলকেও উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ধ্বংস করে ফেলতে পারেন!

সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সরকারের শাসনের ছয় মাস উপলক্ষে রাজ্যের পর্যটন দফতর থেকে সম্প্রতি ঐতিহাসিক স্থাপনার একটি বুকলেট বের করা হয়।

তালিকায় মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ যে মন্দিরের প্রধান, গোরক্ষপুরের সেই গোরখনাথ মন্দিরের নাম থাকলেও বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম তাজমহলের নাম রাখা হয়নি। এর পর থেকেই বিতর্ক শুরু হয়েছে।

এ বিতর্কের মধ্যেই তাজমহলের বিরুদ্ধে ভারতের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকরা বিষোদগার করেই যাচ্ছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের মুসলিম সভ্যতার অন্যতম প্রতীক নিয়ে আশঙ্কার কথা জানান সমাজবাদী পার্টির নেতা আজম খান।

তিনি বলেন, যদি বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়, তা হলে ভারতের যে কোনো সৌধই ভেঙে ফেলা হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে যে কোনো দিন তাজমহল ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। দেশের কোনো সৌধই এখন আর নিরাপদ নয়।

তিনি আরও বলেন, তাজমহলের আন্তর্জাতিক খ্যাতি রয়েছে বলেই ওই সৌধ এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু রাম মন্দিরের নামে যারা বাবরি মসজিদ ভাঙতে পারেন, তারা সবই করতে পারেন।

তাজমহল নিয়ে আদিত্যনাথ সরকারের আচরণে ভারতজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে উত্তরপ্রদেশের বিজেপির এমপি সঙ্গীত সোম বলেন, তাজমহল ভারতীয় সংস্কৃতিতে কলঙ্কের চিহ্ন।

তিনি বলেন, উত্তরপ্রদেশের ঐতিহাসিক ট্যুরিজম বুকলেট থেকে তাজমহলের নাম সরিয়ে দেয়ায় অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আপনারা কোনো ইতিহাসের কথা বলছেন? যে লোকটি তার বাবাকে বন্দি করে রেখেছিলেন? যিনি হিন্দুদের গণহত্যা করতে চেয়েছিলেন। এই যদি হয় ইতিহাস, তা হলে এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমি কথা দিচ্ছি- আমরা এই ইতিহাস পরিবর্তন করব।

তবে সোমের বক্তব্যের জবাবে আজম খান যে কঠোর জবাব দিয়েছেন তাতে বিজেপি সরকার ও উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা বেশ বিপাকে পড়েছেন। কারণ তিনি বলেছেন, শুধু তাজমহল কেন, ভারতের পার্লামেন্ট ভবন, রাষ্ট্রপতি ভবন, লালকেল্লাও গুঁড়িয়ে দেওয়া হোক। কারণ সেগুলো দাসত্বের প্রতীক- বহন করছে গোলামির ইতিহাস।

সঙ্গীত সোমের বিতর্কিত মন্তব্যের পর ভারতজুড়ে হইচই শুরু হওয়ায় বিজেপি তাকে কারণ দর্শাতে বলে দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাজমহল নিয়ে বিজেপির জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের বিষোদগারের অবসান হয়নি।

বিজেপির এমপি ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা বিনয় কাটিয়ার দাবি, তাজমহলের নাম পরিবর্তন করে ‘তেজো মহল’ রাখতে হবে। তার মতে, মন্দির ভেঙে তাজমহল নির্মাণ করা হয়েছে।

বুধবার আরেক বিজেপি নেতা সুব্রামানিয়াম স্বামী দাবি করেন, যে জমিতে তাজমহল দাঁড়িয়ে আছে, তা জয়পুরের রাজাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন মোগল সম্রাট শাহজাহান।

স্বামীর মতে, আমার হাতে এমন নথি এসেছে, যা থেকে স্পষ্ট যে জয়পুরের রাজা–মহারাজাদের তাজমহলের জমিটি বিক্রিতে বাধ্য করেছিলেন শাহজাহান। ক্ষতিপূরণ বাবদ সেই রাজাদের ৪০ গ্রামটি দেয়া হয়েছিল। যাকে কোনোভাবেই ওই জমির দামের সঙ্গে তুলনা করা যায় না।

তিনি আরও বলেন, ‘নথিতে আরও দেখা যাচ্ছে-  ওই জমিতে একটি মন্দির ছিল। কিন্তু মন্দির ভেঙেই তাজমহল বানানো হয়েছিল, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। শিগগির ওই নথি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করবেন বলেও জানিয়েছেন স্বামী।

Recent Posts

Leave a Comment