স্কুলে সিসি ক্যামেরা কিনতে চাঁদা তুলছেন প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী !

 In পড়া লেখা, প্রধান খবর, লিড নিউজ

 

স্টাফ রিপোর্টারঃ
চাঁদপুর শহরতলী বাবুরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সিসি ক্যামরা কিনতে স্ত্রীকে দিয়ে প্রতি শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের চাঁদা তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক তপন কুমার রায় প্রভাব খাটিয়ে স্ত্রী সবিতা রানী রায়কে দিয়ে এ টাকা তুলছেন। শুধু তাই নয়; চাপ প্রয়োগ করে তিনি তার বাসায় তিনটি ব্যাচে কোটিং বানিজ্য করছেন। বিদ্যালয়ের কয়েকজন নিবেদিত প্রাণ সহকারী শিক্ষকদের সাথে তিনি বৈষম্যমূলক আচরণ করছেন। এ নিয়ে অভিভাবক ও স্থানীয় সচেতন মহরের মঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে মুখে ফুটে কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। প্রধান শিক্ষক ক্ষমতাশীল দলের লোক বলে এহেন কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ করেন অনেকেই।

সরজমিনে গিয়ে স্কুলের বিভিন্ন অভিভাবক ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, সবিতা রানী রায় স্কুলের পাশেই একটি পার্লার পরিচালনা করেন। তিনি স্কুলের জন্যে সিসি ক্যামেরা কিনবেন বলে সম্প্রতি অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা উঠানো শুরু করেন। এজন্যে কখনো কখনো তিনি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির নাম ভাঙিয়েও টাকা তুলেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

স্কুলের অভিভাবক খাদিজা আক্তার (ছদ্মনাম) জানান, সিসি ক্যামেরা কেনার জন্যে সবিতা রানী রায় তাদের কাছে টাকা চেয়েছেন। কেউ কেউ টাকা দিয়েছেন। তিনশ’ টাকা থেকে একহাজার টাকা পর্যন্ত তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে যে যা দিচ্ছেন, সেটাই নেয়া হচ্ছে। অনেক সময় জোর করেও টাকা নেয়া হচ্ছে। কিন্তু খাদিজা আক্তার এখনো টাকা দেননি। তিনি চান স্কুলের ফান্ড থেকে অথবা সরকারি মাধ্যমে স্কুলের জন্যে সিসি ক্যামেরা কেনা হোক। স্কুলের আরেকজন অভিভাবক আয়েশা পাটওয়ারী জানান, সিসি ক্যামেরার জন্যে টাকা তোলা হচ্ছে। তিনি টাকা দিয়েছেন। আরো কয়েকজন অভিভাবকের সাথে কথা হলে হলে জানা যায়, স্কুলের প্রধান শিক্ষক তপন কুমার সাহা সিসি ক্যামেরার কেনার বিষয়ে অবিহিত আছেন। তার হাতে তার স্ত্রীকে প্রকাশ্যেই সিসি ক্যামেরা কেনার টাকা তুলে দিতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন তারা।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক তপন কুমার রায় বলেন, সিসি ক্যামেরার কথা বলে কোনো টাকা তোলা হয়নি। আমার স্ত্রীও এর সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। এগুলো মিথ্যে অভিযোগ।

এ বিষয়ে কথা হলে সবিতা রানী রায় বলেন, আমরা অভিভাবকরা কমিটি করে স্কুলের জন্যে সিসি ক্যামেরা কেনার জন্যে টাকা তুলছি। সর্বোচ্চ ১শ’ টাকা করে তুলেছি। আমাদের হিসাব রয়েছে। তিনি জানান, এই টাকা তোলার বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকরা জানেন না। অনুমতি নেয়া নিয়ে তিনি বলেন, অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন ছিলো।

শুধু সিসি ক্যামেরা কেনা নয়, সরজমিনে গিয়ে অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বললে প্রধান শিক্ষক ও স্কুল সম্পর্কে বেরিয়ে আসে আরো নানা তথ্য। প্রধান শিক্ষক তপন কুমার রায় ও সহকারী শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন খানের বিরুদ্ধে কোচিং বাণিজ্য, অসদাচরণসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়।

স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী কাজল দেওয়ানসহ আরো কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তপন কুমার রায়ের স্কুল সংলগ্ন বাসায় কয়েক ব্যাচে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ান। তাকে সহযোগিতা করে সহকারী শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন। প্রতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রাইভেট পড়ানোর জন্যে ১৫শ’ টাকা করে নিয়ে থাকেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, তাছাড়া তিনি শিক্ষকদের সাথে বৈষম্য ও পক্ষপাতমূলক আচরণ করেন বলে জানা যায়।

এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানালে স্কুলের প্রধান শিক্ষক তপন কুমার রায় বলেন, কোচিং বাণিজ্য, অসদাচরণ, পক্ষপাতমূলক কোনো আচরণ আমি করিনি। এসব মিথ্যে অভিযোগ।

চাঁদপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাজমা বেগম বলেন, অভিযোগ শুনেছি। এখন আমরা তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। অভিভাবকরা যদি কোনো লিখিত দরখাস্ত দেন তাহলে আমাদের তদন্ত কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

Recent Posts

Leave a Comment