ভারতে নগদ টাকা নিয়ে হাহাকার, কিন্তু কেন?

 In ব্যবসা বাণিজ্য, লিড নিউজ

ভারতে বছর দেড়েক আগে পাঁচ শ ও হাজার রুপির নোট বাতিল করার সময়কার স্মৃতি ফিরিয়ে এনে দেশের নানা প্রান্তে আবার নগদ টাকার জন্য চরম হাহাকার দেখা দিয়েছে, এটিএম মেশিনগুলোতে টাকা মিলছে না।

সরকার যদিও দাবি করছে এই অবস্থা ‘সাময়িক’ ও মানুষের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই, কিন্তু বিরোধীরা পরিস্থিতিকে তুলনা করছেন আর্থিক জরুরি অবস্থার সঙ্গে।

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক, বিহারসহ নানা রাজ্যে টাকা তুলতে না পেরে মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘নোটবন্দী’র পরেও ভারতীয়রা যে ডিজিটাল পদ্ধতির চেয়েও নগদ টাকার লেনদেনই বেশি পছন্দ করছেন এটা সম্ভবত তারই একটা প্রমাণ।

ভুপাল থেকে হায়দ্রাবাদ, বেনারস থেকে ব্যাঙ্গালোর – দেশের নানা প্রান্তে এখন একটাই ছবি, এটিএম মেশিনে টাকা নেই – বাইরে ঝুলছে ‘নো ক্যাশ’ সাইনবোর্ড।

জরুরি প্রয়োজনে টাকা না পেয়ে, বাচ্চার স্কুলে ভর্তির টাকা দিতে না পেরে নাজেহাল হচ্ছেন মানুষ- কিংবা উগরে দিচ্ছেন মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ।

অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, কিডনি অপারেশনের পর যিনি এখনও পুরোপুরি সুস্থ পর্যন্ত নন, তিনি তড়িঘড়ি টুইট করে জানিয়েছেন পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, আর নগদ টাকার পর্যাপ্ত যোগানও নাকি আছে, চিন্তার কিছু নেই।

কিন্তু তাহলে দেশের নানা প্রান্তে এটিএম মেশিনগুলো রাতারাতি ফাঁকা হয়ে গেল কীভাবে?

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টা সঞ্জীব সান্যালের কথায়, ‘গত কয়েক সপ্তাহে কর্নাটক ও তেলেঙ্গানার মতো রাজ্যে নগদ টাকার জন্য বলা যেতে পারে একটা অস্বাভাবিক চাহিদা দেখা গেছে, পরে সেই প্রবণতা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের অন্য প্রান্তেও।’

‘কারা আর কেন এই অস্বাভাবিক চাহিদা তৈরি করল, তা নিয়ে কোনও জল্পনায় যেতে চাই না – তবে এটুকু বলতে পারি, আমরা এই সঙ্কটের মোকাবিলা করছি – এটিএম মেশিনগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।’

তবে মাত্র দুদিন আগে বিজেপি-শাসিত মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানও এক জনসভায় মন্তব্য করেছেন, বাজার থেকে দুই হাজার রুপির নোট যে উধাও হয়ে যাচ্ছে তার পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র আছে।

দেড় বছর আগে নোটবন্দীর সময়কার দুঃস্বপ্ন ফিরে আসার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে – এটা বুঝেই বিরোধী দলগুলিও আক্রমণ শানাচ্ছে বিজেপির বিরুদ্ধে। মমতা ব্যানার্জি ও তার দল যেমন পরিস্থিতিকে তুলনা করেছেন আর্থিক জরুরি অবস্থার সঙ্গে।

তৃণমূল মুখপাত্র ডেরেক ও ব্রায়েন বলছেন, ‘বিজেপি যেভাবে বিপদ সামলাতে চাইছে বা অর্থমন্ত্রী বিবৃতি দিতে চাইছেন তাতেই স্পষ্ট যে সঙ্কট গভীর। এখন তো শুনছি দ্রুত আরও নোট ছাপানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। আমাদের তাই প্রশ্ন, হচ্ছেটা কী?’

‘মমতা ব্যানার্জি এই কারণেই বলছেন, ফিনান্সিয়াল ইমার্জেন্সি চলছে। দেখুন এখন সামনের কদিনে আরও কী কী হয়!’

নানা কারণে হঠাৎ নগদের চাহিদা বেড়েছে, এটা যেমন ঠিক – তেমনি ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক আরবিআই যে মাঝে নগদ টাকা তৈরির অর্ডারও অনেক কমিয়ে দিয়েছিল সেটাও এই সঙ্কটের বড় একটা কারণ বলে মনে করেন অর্থনৈতিক বিষয়ক বিশ্লেষক লতা ভেঙ্কটেশ।

তিনি জানাচ্ছেন, ‘গত বছরের জুনে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক টাঁকশালগুলোতে নোট ছাপানোর অর্ডার প্রায় এক তৃতীয়াংশ কমিয়ে দিয়েছিল – সম্ভবত এটা ভেবে যে নোটবন্দীর পর মানুষের নগদ ব্যবহারের অভ্যাস অনেক কমে যাবে। কিন্তু বাস্তবে সেটা মোটেও ঘটেনি।’

ফলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পরে নোট ছাপানোর অর্ডার বাড়াতে বাধ্য হয়েছে – কিন্তু ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে এবং ভারতের আমজনতা এখন তারই ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

আর আগামী দুই একদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তুলতে না পারলে বিজেপিকেও এর চড়া রাজনৈতিক দাম চোকাতে হতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা ধারণা করছেন।

Recent Posts

Leave a Comment