টাকায় লিখে মতপ্রকাশ, দণ্ডনীয় বলছেন আইনজ্ঞরা

 In বিশেষ প্রতিবেদন, লিড নিউজ

বিশেষ প্রতিবেদনঃ

টাকার মধ্যে লেখার প্রবণতা নতুন নয়। টাকায় ফোন নম্বর, নাম-ঠিকানা লেখা হরহামেশাই ঘটছে। কিন্তু সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে টাকায় স্লোগান লেখার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তবে আইনজীবী বলছেন, টাকায় লেখালেখি দণ্ডনীয় অপরাধ।গত কয়েক দিন ধরে দেখা যাচ্ছে, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ এবং ‘হাসিনা নিপাত যাক, দেশনেত্রীর মুক্তি চাই’- টাকার নোটে এমন স্লোগান লেখা হচ্ছে। এসব টাকার কিছু ছবি ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়েছে। তবে কে বা কারা এটা করছে তা শনাক্ত করা যাচ্ছে না।

স্লোগানযুক্ত টাকা নিয়ে বিপাকে পড়েন রাজধানীর গুলশানের একটি করপোরেট অফিসের কর্মকর্তা শরিফুল আলম মিলন। তিনি বলেন, ‘এটিএম বুথ থেকে ১০ হাজার টাকা উঠালাম। এর মধ্যে এক হাজার টাকার একটি নোটে ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ লেখা আছে। এই টাকা আমি কোনো দোকানীকে দিলে সে যদি নিতে না চায় তাহলে কী হবে?’

ব্যাংকার শহিদুল কায়সার  বলেন, ‘টাকায় কোনো কারণে লেখা যাবে না। সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, কোনো ব্যাংকার যদি হিসাবের সুবিধার্থে টাকায় নোটের সংখ্যা লিখেন এটাও অন্যায়।’

বিএনপি নেতারা বলছেন, কেউ যদি আবেগে এমনটা করতে থাকেন তাহলে এটা নিয়ে বলার কিছু নেই। আইনজীবীরা বলছেন, এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই নৈতিকভাবে সবাইকে সচেতন হবে।

জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান  বলেন, ‘আসলে এটা নিয়ে কী বলব! এখন আমরা যারা খালেদা জিয়ার অনুসারী আছি, তারা তো রাজপথ আন্দোলনে সক্রিয় কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি। দেখুন, দেশনেত্রীকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এখানে সাধারণ মানুষ তাদের আবেগের জায়গা থেকে এটা করতে পারে। এখানে তো আর আমাদের হাত নেই।’

তিনি বলেন, ‘কারা টাকায় লিখে দেশনেত্রীর মুক্তি চাইছে এটা তো আমরা বলতে পারব না। দেশের মানুষ সবাই তো আর বিএনপির রাজনীতি করেন না। এখন কেউ কেউ তার ভালোলাগা থেকে এমনটা করে থাকতে পারে। এটা নিয়ে আমাদের কী বলার আছে আমাদের?’

আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম  বলেন, ‘এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কে লিখছে এটা বিবেচ্য বিষয়। এমনকি যার স্বার্থে লেখা হচ্ছে তাকেও এর দায়ভার বহন করতে হবে।’

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘এটা মোটেও ঠিক নয়। একটা নোট লিখে নষ্ট করার অধিকার কারো নেই। টাকা রাষ্ট্রীয় সম্পদ। তাই এখানে যা খুশি লেখা আইনত আপরাধ হিসেবে বিবেচনাযোগ্য। এটা দণ্ডনীয় অপরাধ।’

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, ‘টাকায় লেখা উচিৎ নয়। নৈতিকভাবে এটা ঠিক নয়। আইনিভাবে কিছু করা যাবে কি যাবে না এটা নিয়ে আইনি কোনো বাধা নেই। তবে নৈতিকভাবে এটা করা ঠিক নয়।’

সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার  বলেন, ‘টাকা স্বচ্ছ রাখাই ভালো। টাকার মধ্যে লেখা কোনভাবেই কাম্য নয় যে যে উদ্দেশ্যেই লিখুক না কেন। তাকে তো আর শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এখানে একজনের লেখার কারণে যেন আরেকজন হয়রানির শিকার না হয়। বিষয়টি অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের খেয়াল করতে হবে।’

আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পক্ষে থেকে বলা হচ্ছে, টাকায় লেখার বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বিষয়টি পুলিশের নজরে আছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি উত্তর) নাজমুল ইসলাম  বলেন, ‘কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা বিষয়টি নজরে রেখেছি।’

উল্লেখ্য গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন। এরপর থেকে তিনি নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। ইতোমধ্যে বিচারিক আদালতের রায় বাতিল এবং খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করা হয়েছে।

Recent Posts

Leave a Comment