ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের আধিপত্য শুরু, এবার এগিয়ে যাওয়া পালা
কাদের পলাশ॥
১৯৯৭ সালে মালায়শিয়ার কোলালামপুরের কুইন্সক্লাব মাঠে যখন কেনিয়াকে হারিয়ে আইসিসি ট্রপি জিতেছিল বাংলাদেশ তখন থেকে এ দেশের মানুষের মনে স্থান করে নিতে শুরু করে ভিনদেশি খেলা ক্রিকেট। ক্রিকেট ইতিহাসে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তান ও স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে সারা বিশ্বকে দীপ্তকণ্ঠে অস্তিত্বের জানান দিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে প্রায় দেড় যুগ পর বর্তমানে ষোল কোটি মানুষের আবেগের নাম ক্রিকেট! বাংলাদেশ জিতলে ষাটোর্ধ্ব বুড়ো মানুষটি গাল চাওড়া করে প্রাণ খুলে হাসে। আর ছোটরাতো বাঁধ ভাঙা আনন্দে রাস্তায় নেমে পড়ে। মাঝ বয়সি কর্মব্যস্ত মানুষগুলো বাংলাদেশের প্রতিটি জয়ে তৃপ্তির ঢেকুর গিলে।
ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশ আজ নওজোয়ান থেকে টগবগে যুবক। সামনে পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, অস্টেলিয়া কিংবা ভারত এখন আর কিছুতেই ভয় ডর কিংবা পরোয়া করি না। ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে সাবা বিশ্ব দেখছে এক পরিপক্ক অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশকে। যার ধারাবাহিকতা পাকিস্তানকে সামনে পেয়ে ভালো মতেই প্রদর্শন করছে বাংলার দামাল ছেলেরা।
ইতোমধ্যে হাতেনাতে পুরস্কারও পাওয়া হয়ে গেছে। ওয়ানডে ক্রিকেট র্যাংকিং এ পাকিস্তানকে হটিয়ে বাংলাদেশ এখন ৮ নাম্বারে অবস্থান করছে। টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটেও ১২তম স্থান থেকে উন্নতি হয়েছে। বড় কথা হচ্ছে গত ১৫দিন ধরে যেভাবে টগবগে বাংলাদেশের কাছে নাজেহাল হচ্ছে ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম শক্তি পাকিস্তান। তাতে সারা বিশ্ব ক্রিকেট বোদ্ধারা থমকে আছেন।
কারণ ক্রিকেট বোদ্ধারা গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো কথাই বলছে না। তারা হয়তো আন্দাজ করতে পারছে না এটা আবার কোন বাংলাদেশ? হ্যাঁ, এটাই সেই বাংলাদেশ। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রপি জিতে জানান দেয়া হয়েছিল। মাঝখানের সময়টায় ক্রিকেটের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে এখন পেশাদার বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ। একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও লজ্জাজনক হার। টেস্ট ম্যাচ ড্র হলেও তামিম-ইমরুলের কাছে রীতিমত ধরাশায়ী হয় পাকিস্তানি বোলাররা। সব মিলিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সাবেক পাক ক্রিকেটার রমিজ রাজা।
ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারের পরও হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন রমিজ। প্রথম টেস্ট ম্যাচ ড্র হওয়ার পর তার কণ্ঠে আরো একগাদা হতাশা ঝরেছে। পাকিস্তান সংবাদমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথম ইনিংস শেষে প্রায় তিনশ রানের লিড নিলেও বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে সাড়ে পাচশ’র উপরে রান করেছে। যা পাকিস্তান দলের জন্য খুবই হতাশাজনক।’
সাবেক এই তারকা ব্যাটসম্যান আরও বলেন,
‘পাকিস্তান ক্রিকেট কোথায় যাচ্ছে তা আমি জানি না। বাংলাদেশকে টেস্টে হারাতে না পারলে আমরা কোথায় মুখ দেখাব। মাথা নিঁচু করেই থাকতে হবে। এ ধরণের পারফরম্যান্স অব্যাহত থাকলে কেউই আর আমাদেও খেলা দেখতে চাইবে না। এমনকি অন্য কোনো দল পাকিস্তানেরে বিপক্ষে খেলতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। যেটি পাকিস্তানের ক্রিকেট ‘ব্র্যান্ডের’ ওপর বড় ধরণের আঘাত বয়ে আনবে।’
অবশ্য বাংলাদেশের প্রশংসা করতেও ভোলেননি রমিজ । তার মতে, ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল অনেক উন্নতি করেছে। বিশ্বকাপেই তারা নিজেদের তুলে ধরেছে।’ অন্তত রমিজের কথায় প্রতিয়মান হয় ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের আধিপত্য শুরু, এবার শুধু এগিয়ে যাবার পালা।