ভূয়া জন্মসনদ দিয়ে বখাটে তারেক জামিনে ॥ ধরা পড়েনি প্রধান প্ররোচনাকারী রূপবান

 In চাঁদপুর, প্রধান খবর, শীর্ষ খবর

বিশেষ প্রতিনিধিঃ



প্রাণবন্ত চঞ্চল কিশোরী মেয়ে মিনু। পুরো নাম শারমিন আক্তার মিনু। পাঁচ ভাইয়ের একমাত্র বোন। আদরে আহ্লাদে বড় হয়ে উঠা। ছয় সন্তানের মধ্যে একটা মাত্র মেয়ে, তাই মা-বাবার সব দরদ যেন শুধু মিনুর জন্য। অথচ গত ২০ আগস্ট দুপুরে অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে এ চঞ্চলা মেয়েটি। আত্মহননের আগে চিরকুটে মিনু লিখেছিল “মা, ভাইয়া, আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম কিন্তু নিষ্ঠুর পৃথিবীর মানুষেরা আমাকে বাঁচতে দিলো না। আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী তারেক, তারেকের মা ও তার বোন কণিকা। আমার মৃত্যুর প্রতিশোধ তোমরা নিও।”



অবশ্য ঘটনার পরপর মিনুর আত্মহত্যার প্ররোচনার দায়ে বখাটে যুবক মমিন হোসেন তারেক (২০) কে গ্রেফতার করে পুলিশ। অথচ প্রায় দেড় মাসেও ধরা পড়েনি প্রধান প্ররোচনাকারী রূপবান বেগম (৩৭)।



মিনু চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার হাঁড়িয়া গ্রামের প্রবাসী মোহাম্মদ আলীর মেয়ে। সে শাহরাস্তি উপজেলার ফরিদ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী।



জানা যায়, অভিযুক্ত বখাটে তারেক দীর্ঘদিন ধরে মিনুকে উত্যক্ত করে আসছিল। তারেক কোনো ভাবে মিনুকে পটাতে না পেরে মা রুপবান বেগম ও বোন কনিকাকে সহযোগীতা করতে বলে। ঘটনার দিন রুপবান বেগম স্কুলে গিয়ে ক্লাশের ভেতর ঢুকে মিনুকে দাঁড় করায়। পরে তার ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার পরামর্শ দেয়। এ প্রস্তাব মিনু প্রত্যাক্ষাণ করলে, বিভিন্ন প্রকার অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পরে তারেকের বোন কনিকা এসে আরো অশ্লিল ভাষা ব্যবহার করে। অপমান সইতে না পেরে কিছুক্ষণ পর মিনু বাড়ি গিয়ে ঘরের মধ্যে সিংলিং ফেনের সাথে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে।



ঘটনার পরে মিনুর বড় ভাই শাহাবুদ্দিন নয়ন ৪ জনের নাম উল্লেখ করে শাহরাস্তি থানায় মামলা দায়ের করে। এ ঘটনায় শুধু মাত্র তারেক কে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু মিনুর আত্মহত্যায় প্রধান প্ররোচনাকারী রুপবান বেগম ও তার মেয়ে কনিকা আজো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অবশ্য তারেক ৩২দিন কারাবাস শেষ জামিনে মুক্তি পায়।



মামলার বাদী সাহবুদ্দিন নয়ন জানান, চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট্য সরকারি জেনারেল হাসাপাতালে মেডিক্যাল রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী তারেকে বয়স ২০ বছর। পরীক্ষা শেষে রিপোর্ট তৈরি করেন জুনিয়ের কনসালটেন্ট (রেডিওলজি) ডাঃ এম মাঈন উদ্দিন। অথচ ধূর্ত তারেকের পরিবার অর্থের বিনিময়ে বয়স কমিয়ে ভূয়া জন্মসনদ তৈরি করে। তাতে তারেকের বয়স দেখানো হয় ১৭ বছর ৫ মাস ১২ দিন। পরে বিচারককে ভুল বুঝিয়ে তারেকের জামিন নেয়া হয়। ইতোমধ্যে তারেক জামিনে মুক্তি পেয়ে মামলা তুলে নিতে বাদিসহ পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন সময়ে হুমকি ধমকি দিচ্ছে।



বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন জানান, তারেক বখাটে প্রকৃতির ছেলে। ওর বিরুদ্ধে কয়েকবার এলাকায় শালিশি বৈঠক হয়েছে। আমার জানা মতে সে কয়েকটি স্কুলও পরিবর্তন করেছে।



আবদুল সালাম, রুবেলসহ কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, দ্রুত তারেকের জামিন বাতিল করে তাকে গ্রেফতার করা হোক। এছাড়া অন্যদেরও গ্রেফতারের দাবি জানান তারা।



এব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) মো. আবদুল হানিফ জানান, ইতোমধ্যে প্রধান আসামী তারেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত অন্যদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যহত আছে।



এ ঘটনার পর থেকে কয়েক দফায় মিনুর সহপাঠি, এলাকাবাসীসহ অভিভাবকরা অপরাধীদের শাস্তির দাবীতে বিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে।

Recent Posts

Leave a Comment