বিদেশে সাফল্যে চোখ মুস্তাফিজের
ক্রীড়া প্রতিবেদক : ক্রিকেট তাঁর জীবনের সম্ভাব্য প্রায় সব কিছুই বদলে দিয়েছে। সাতক্ষীরার দূর গ্রাম থেকে উঠে আসা তরুণের অবস্থান-মর্যাদা বদলালেও ক্রিকেট কিন্তু একটি ব্যাপার কিছুতেই বদলাতে পারেনি। পারেনি মুস্তাফিজুর রহমানের মুখে কথার খই ফোটাতে! আপন ভুবনে যতই চটপটে আর চঞ্চল হোন না কেন, সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি সব সময়ই স্বল্পবাক।
গতকালও এর ব্যতিক্রম নন। ইংল্যান্ড থেকে বাঁ কাঁধে অস্ত্রোপচার করিয়ে আসা এই পেসার এখন আছেন পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম সংলগ্ন একাডেমি ভবনের বাসিন্দা মুস্তাফিজ মাঠের বাইরে থাকলেও তাই মাঠের সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগাযোগ। আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ড সিরিজের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত জাতীয় দলের অনুশীলনেরও দর্শক তিনি। গত পরশু থেকে শুরু হওয়া মাশরাফি বিন মর্তুজাদের অনুশীলন চলছে স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইট জ্বালিয়েও। কালও কৃত্রিম আলোয় সতীর্থদের অনুশীলনের সময় তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হলো যে এই অনুশীলন দেখা কতটা কষ্টের। জবাব কী দিলেন শুনবেন? মুস্তাফিজ শুধু এটুকুই বললেন, ‘আমি ছোট মানুষ তো, এর কোনো উত্তর নেই।’
আসলে মৃদুভাষী মুস্তাফিজের কাছ থেকে প্রায় সব প্রশ্নের জবাবই এমন দু-এক কথায় মেলে! কোনো প্রশ্ন জটিল মনে হলে তো একদম নীরবই হয়ে যান! আবার এড়িয়ে যাওয়া জবাবও আছে। এই যেমন জানতে চাওয়া হলো বাংলাদেশ দলের বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের কথা। এই ক্যারিবীয় কিংবদন্তি খেলা ছেড়ে দেওয়ার সময়ও মুস্তাফিজের ক্রিকেট বোঝার বয়সই হয়নি। তাই তাঁর ওয়ালশের খেলা দেখার প্রশ্নই আসে না। তবে ফাস্ট বোলার হওয়ার পথে নিশ্চয়ই কারো না কারো মুখে ওয়ালশের গল্প শুনেছেন। এর মধ্যে অনুপ্রাণিত হওয়ার মতো গল্পও ছিল নিশ্চয়ই। সেগুলোর কোনো একটি জানতে চাওয়াতেই সব কৌতূহল এভাবে শেষ করে দিলেন, ‘কঠিন প্রশ্ন।’
কঠিন প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া মুস্তাফিজ অবশ্য ‘কাটার’ নামের দুর্বোধ্য এক অস্ত্রে ব্যাটসম্যানদের ঘায়েল করেই খ্যাতির নাগাল পেয়েছেন। তবে সাসেক্সের হয়ে ন্যাটওয়েস্ট টি-টোয়েন্টি ব্লাস্ট খেলতে গিয়ে বোলিং কাঁধের চোটে পড়ে লম্বা সময়ের জন্য ছিটকে পড়া এই পেসার দেশের মাঠে খেলতে পারছেন না আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ড সিরিজের কোনোটিই। অবশ্য গত মার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেরা বোলিং করা মুস্তাফিজ দেশের বাইরে খেলেছেনই ওই একটি টুর্নামেন্টে। তাও আবার সেটি ছিল বহুজাতিক টুর্নামেন্ট। দেশের বাইরে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ তো খেলাই হয়নি। এবার দেশের মাটিতে দুটি সিরিজ মিস হলেও ডিসেম্বর-জানুয়ারির নিউজিল্যান্ড সফরে তাঁকে পাওয়ার আশা আছে। সেই সফরে মাঠে ফেরার আশায় তিনি কতটা রোমাঞ্চিত, সে প্রশ্ন ওঠা তাই স্বাভাবিক। জবাব শুনে বোঝা গেল দেশের বাইরে সাফল্যে চোখ আছে তাঁরও, ‘এই মুহূর্তে আমি অসুস্থ। সুস্থ হওয়ার পর আশা তো থাকবেই। দেশে সফল হয়েছি। চেষ্টা থাকবে দেশের বাইরে খেললে যাতে সেখানেও সফল হই। তবে সেই ভাবনাটা আসবে আমি সুস্থ হওয়ার পর।’ আপাতত অবশ্য সুস্থতার পথে দৃপ্ত পদক্ষেপেই এগিয়ে চলছেন। গত ১১ আগস্টের অস্ত্রোপচারের পর কাঁধের সঙ্গে বাঁ হাত ঝুলিয়েই দেশে ফিরেছিলেন। এখন সেটি নেই। শুরু হয়ে গেছে পুনর্বাসন প্রক্রিয়াও। এখন হালকা ব্যায়াম চলছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই পুরোদস্তুর পুনর্বাসন শুরু হওয়ার আগে মুস্তাফিজও বলে দিলেন তিনি ঠিক পথেই আছেন, ‘এখন অনেক ভালো আছি। অস্ত্রোপচারের পর ছয় সপ্তাহের মতো পার হয়েছে। ডাক্তার যেভাবে বলে দিয়েছেন, সেভাবেই কাজগুলো করছি। সব কিছু ভালোর দিকেই যাচ্ছে।’