হানিফ পরিবহনের ঢাকা থেকে খুলনাগামী যাত্রীবাহি গাড়ী চালান মোহাম্মদ নূর ইসলাম, তার অভিজ্ঞতা ২৫ বছরের, তিনি বলেন, যাদের হালকা গাড়ি চালানোর লাইসেন্স আছে, তাদের ভারি গাড়ি চালাতে দিলে দুর্ঘটনা তো হতেই পারে। এরা তো বড় গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত না। মোটরসাইকেল গুলো বেপরোয়া চালায়। যে গাড়ির ফিটনেস নাই,লাইসেন্স নাই, যে গাড়ি রাস্তায় নামানোর মতো না, সেগুলোর দিকে প্রশাসনের নজর নাই। এসব কারণে এক্সিডেন্ট বেশি হচ্ছে। বিআরটি এর প্রশাসনের লোক টাকা খেয়ে ইন্টারভিউ না নিয়ে লাইসেন্স দিয়ে দিচ্ছে। যারা ঢাকায় লোকাল বাসের ড্রাইভার বা হেলপার তারা ও টাকা দিয়ে বড় গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে। এরা বড় গাড়ির স্টীয়ারিং ধরারও যোগ্যতা রাখে না। এদের যখন যাত্রীভর্তি বড় গাড়ি দিয়ে লং রোডে পাঠানো হয় তখন খাদে পড়বে নাতো কি হবে?
তিন বছর ধরে ঢাকা থেকে ফরিদপুরগামী আনন্দ পরিবহনের বাস চালাচ্ছেন সুজন কুমার রাজবংশী, তার মতে প্রথমত হলো আমাদের দেশের পাবলিক যাতায়াতের কোন নিয়ম জানে না, এরা বেখেয়ালিভাবে রাস্তায় হাটে, মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হয়। গাড়ি গুলো যখন রাস্তায় চলে, তখন স্পীড বেশি থাকে। হঠাৎ সামনে পড়ে যাওয়া পথচারীকে বাঁচাতে গিয়েও অনেক সময় এক্সিডেন্ট হয়।
দ্বিতীয়ত হলো: হাইওয়ের রাস্তার ধার ঘেঁষে কোন বাজার ঘাট থাকতে পারবে না।রাস্তার ধারে বাড়ি ঘর থাকতে পারবে না।
তৃতীয়ত: হাইওয়েতে স্পীডব্রেকার গুলো তুলে দিতে হবে। এছাড়া ছোট গাড়ি গুলোর ড্রাইভাররা ডান বাম বুঝে চালায় না। আমরা যখন দূরপাল্লার গাড়ি চালাই তখন আমাদের মাথা ঠাণ্ডা করে এত সব সামলিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। সরকারি নিয়ম মতো ৭০ কিলোমিটার গাড়ির গতি বাড়াতে পারবো। কিন্তু গাড়ির ভেতর থেকে পাবলিকরা চিল্লাচিল্লি শুরু করে, ‘ঐ মিয়া কি গাড়ি চালান, আপনার পেছনের গাড়ি আগে চলে যায়’। মাঝে মাঝে অশ্লীল ভাষায় গালি দেয় মা- বাপ তুলে। তখন মেজাজ কেমনে ঠিক থাকে। কিন্তু সবসময় দোষ আমাদের, সাধারণ পাবলিক থেকে পুলিশের কাছে পর্যন্ত নির্যাতন হই আমরা। আমাদের কেউ মানুষ হিসেবেই দাম দেয় না।
সাতাশ বছর ধরে দূরপাল্লার বাস চালাচ্ছেন নূর ইসলাম। এখন তিনি একে ট্রাভেলেস এর ঢাকা থেকে খুলনাগামী বাস চালান। রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটার কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, রাস্তায় যে যানজট এসবের কারণে রোড এক্সিডেন্ট হয়, আবার দেখা যাচ্ছে হর্ণ দিলেও একটা গাড়ি আরেকটা গাড়িকে সাইড দেয় না আর এগুলো করে লোকাল গাড়ি। লোকাল গাড়ি গুলো রাস্তার মধ্যে আড় করে দাড়িয়ে থাকে, যাত্রী উঠানামা করে। তখন তো আমাদের দূরপাল্লার গাড়ি গুলোর বেড়োনোর লাইন থাকে না। গাড়ির গতিবেগ থাকে ৬০/৭০ কিলো, তখন যদি আমি হঠাৎ ব্রেক করি তাহলে যাত্রীরা তো আঘাত পাবে, সেজন্য অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, লোকাল গাড়ি গুলোর এন্ডিকেটর নাই, ব্রেক লাইন ও নাই, তারা কোন নিয়ম ও মানে না ।তারা যদি ঠিক মতো চলে তাহলে অনেক দুর্ঘটনা কমে যাবে।
রয়েল এক্সপ্রেসের ঢাকা থেকে দর্শনা গামী যাত্রীবাহি গাড়ি চালান মোহাম্মদ বলেন, ড্রাইভিং এ তার অভিজ্ঞতা ১৫ বছরের। তার মতে,ড্রাইভাররা তো চায় না এক্সিডেন্ট হোক। অনেক সময় বেখেয়ালে ঘটে। কোন কোন ড্রাইভারের খামখেয়ালি ও আছে। আবার প্রশিক্ষণ নাই এমন ড্রাইভারকে গাড়ি চালাতে দেয়া হচ্ছে।এক বছর ধরে ছোট গাড়ি চালায় এমন ড্রাইভারকে দূরপাল্লার বড় গাড়ি চালাইতে দেয়া হচ্ছে। তখন সে তো হঠাৎ করে বড় গাড়ি চালাতে পারে না। এটা সামলাতে ও তো অভিজ্ঞতা লাগে। এসবের জন্য দুর্ঘটনা ঘটে। প্রশাসন এসবের দিকে কোন খেয়াল রাখে না।
মোহাম্মদ রুবেল শেখ, সূর্যমুখী পরিবহনের ঢাকা থেকে আলফাডাঙ্গা গামী বাস চালাচ্ছেন ৬ বছর ধরে। রুবেল শেখ বলেন, মাইনর গাড়ি, অটোরিকশা, মাইক্রোবাস গুলো রাস্তায় খুব সমস্যা করে, সাইড দেয় না। সেগুলো নিয়মের বাইরে ওভার গতিতে চালায়। রাস্তা গুলোর অবস্থা খুব খারাপ। ঠিক মতো রাস্তা মেরামত করা হয় না।ট্রাক গুলো অতিরিক্ত মাল নিয়ে খুব স্পীডে চালায়। হাইওয়ে রোডে সিএনজি, অটো চলা বন্ধ করতে পারলে দুর্ঘটনা অনেক কমে যাবে।
২০ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে ড্রাইভিং করছেন মোহাম্মদ মোস্তফা, এখন তিনি চালান সৌহার্দ্য পরিবহনের ঢাকা থেকে রাজবাড়ী গামী বাস, মোস্তফা মনে করেন, পাবলিক ওভারব্রীজ ব্যবহার করে না। হাইওয়েতেও রাস্তার মাঝ দিয়ে হঠাৎ করে দৌড় দেয়। তখন তারে বাঁচাতে গিয়ে অনেক গাড়ি খাদে পড়ে। পাবলিকদের চলাফেরায় পরিবর্তন আনতে হবে।
(ছবি তুলেছেন মেহেদী জামান)