কঠিন শর্ত মেনেই ঋণ নিচ্ছে বাংলাদেশ!

 In ব্যবসা বাণিজ্য, লিড নিউজ

কঠিন শর্তের ঋণ নেওয়া শুরু করল বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের স্কেল আপ ফ্যাসিলিটি (এসইউএফ) তহবিল থেকে ৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার নেওয়ার জন্য চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। কঠিন শর্তের ঋন নিতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে এটাই বাংলাদেশের প্রথম চুক্তি। এই ঋণের সুদের হার তুলনামূলক বেশি এবং অর্থ পরিশোধের সময়সীমাও কম। তবে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে আগের মতো সহজ শর্তের ঋণও পাবে বাংলাদেশ।

দুই বছর আগেই নিম্ন আয়ের দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে বাংলাদেশ। নিম্ন আয়, মধ্যম আয় এবং উচ্চ আয়-—প্রতিবছর এই তিন ধরনের দেশের তালিকা করে বিশ্বব্যাংক। মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে নিম্ন মধ্যম আয় ও উচ্চ মধ্যম আয়—এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ।

বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) কাছ থেকে নিম্ন আয়ের দেশগুলো সহজ শর্তে ঋণ পায়। বাংলাদেশ আইডিএ তহবিলের সবচেয়ে বড় ঋণগ্রহীতা। এ বছর বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার জন্য আইডিএ ঋণের পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত কঠিন শর্তের স্কেল আপ ফ্যাসিলিটি (এসইউএফ) তহবিল চালু করেছে বিশ্বব্যাংক। এই তহবিলের আকার ১২৫ কোটি ডলার। আইডিএ ঋণের পাশাপাশি এই তহবিল থেকেও ঋণ নিতে পারবে বাংলাদেশ। যেসব প্রকল্প উন্নয়নে বেশি প্রভাব ফেলে, সেসব প্রকল্পেই কঠিন শর্তের এই ঋণ পাওয়া যাবে।

এই তহবিল থেকে ৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার নেওয়ার জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি করেছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আযম ও বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। শেরেবাংলা নগরের ইআরডি সম্মেলনকক্ষে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয়। বাংলাদেশ পাওয়ার সিস্টেম রিলায়াবিলিটি অ্যান্ড এফিশিয়েন্সি ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্টে এই অর্থ দেওয়া হবে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতেই এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন  বলেন, আইডিএতে বাংলাদেশের বরাদ্দের পুরো অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন একটু কঠিন শর্তের বিকল্প ঋণের দিকেও এগোচ্ছে বাংলাদেশ। এটা বাংলাদেশের সামর্থ্যের প্রমাণ। অন্য দাতা সংস্থা যেমন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) চেয়ে স্কেল আপ ফ্যাসিলিটি তহবিলের সুদের হার কম।

 

ঋণের শর্ত

আইডিএ থেকে এত দিন যে ঋণ বাংলাদেশ নিয়েছে, তা বেশ সহজ শর্তের। ৩৮ বছরে ঋণ পরিশোধ করতে হয়। এর মধ্যে ছয় বছর গ্রেস পিরিয়ড। আর ঋণের সুদের হার দশমিক ৭৫ শতাংশ। আইডিএ-১৮ অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আপাতত আরও তিন বছর সহজ শর্তের এই ঋণ পাবে বাংলাদেশ।

অন্যদিকে নতুন স্কেল আপ ফ্যাসিলিটি (এসইউএফ) তহবিলের ঋণের সুদের হার ২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। অর্থ পরিশোধের সময়ও কম। ৩০ বছরে এই ঋণ সুদ করতে হবে। এর মধ্যে গ্রেস পিরিয়ড নয় বছর। এ ছাড়া অনুত্তোলিত ঋণের স্থিতির ওপর বার্ষিক দশমিক ২৫ শতাংশ প্রতিশ্রুতি ফি দিতে হবে।

বাংলাদেশ ২০১৫ সালের জুলাই থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে। তখন এটলাস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৬ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার সুবিধা হলো ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচিত হবে। তাই কিছুটা কঠিন শর্তের ঋণও বাংলাদেশ নিতে পারবে। মূলত এই কারণেই অপেক্ষাকৃত কঠিন শর্তের স্কেল আপ ফ্যাসিলিটি (এসইউএফ) তহবিলে বাংলাদেশকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আর অসুবিধা হলো মাথাপিছু আয় একটি নির্দিষ্ট সীমা পেরিয়ে গেলে বাংলাদেশ আর আইডিএ ঋণ পাবে না। তখন এই ধরনের কঠিন শর্তের ঋণই নিতে হবে।

এবার আসা যাক, বিশ্বব্যাংকের এত কঠিন শর্তের ঋণের বিকল্প আছে কি না। অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ঋণ নিতে গেলে বিশেষ করে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার যদি ঋণ নেয়, তবে এর সুদের হার ১০ শতাংশের মতো হয়, যা সরকারের জন্য ব্যয়বহুল। অন্য দাতা সংস্থার ঋণের সুদের হারও বেশি।

Recent Posts

Leave a Comment