চাঁদপুরের ইটভাটাগুলোতে ব্যবহৃত হচ্ছে ফসলি জমির উর্বর মাটি!

 In দেশের বাইরে, প্রধান খবর, লিড নিউজ

 

বিশেষ প্রতিনিধিঃ
চাঁদপুরের ইটভাটাগুলোতে ব্যবহৃত হচ্ছে ফসলি জমির উর্বর মাটি। চাঁদপুরে ফসলি জমির উর্বর মাটি ব্যবহার করে ইট তৈরি করছে অধিকাংশ ইটভাটা মালিকরা। জমির উর্বরতা কমায় দিন যত যাচ্ছে ততই কমছে জেলার ফসল উৎপাদন। স্থানীয় প্রতিনিধিরা বলছেন বারবার বারণ করা সত্ত্বেও ইটভাটা মালিকরা উর্বর মাটি ব্যবহার করে ইট বানাচ্ছেন। এ নিয়ে সচেতন মহলের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। কৃষি কর্মকর্তা উর্বর ভূমি কমে যাওয়ার বিষয়টি জানলেও নানান সীমাবদ্ধতার কারণে পদক্ষেপ নিতে পারছেন না।

ইট বানানোর জন্যে ফসলি জমির একফুট পর্যন্ত মাটি কিনে নিচ্ছেন ইটভাটা মালিকরা। এতে উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে ফসলি জমিগুলো। এ কারণে প্রতি বছরই কমছে ফসল উৎপাদন। শুধু তাই নয়, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল ৯নম্বর গন্ধব্যপুর ইউনিয়নের ইতোমধ্যে ৫টি ইটভাটা থাকা সত্ত্বেও নতুন করে করে এজিবি নামে আরেকটি ইটভাটা নির্মাণ কাজ চলছে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের দাবি শারিরীক ভাবে অসস্থ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ। যদিও ফসলি জমির মাটি বিক্রেতাদের সাথে কয়েদ দফায় যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়ে উঠেনি। জমির মালিকদের কাছ থেকে মাটি বিক্রির সুনির্দিষ্ট কারণ জানা না গেলেও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইট তৈরিতে ভিন্ন কোনো উপকরণ না থাকায় কাঁচামাল হিসেবে এ মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে।

চাঁদপুর হাজীগঞ্জ অবস্থিত মেসার্স সেলিম ব্রিকস এর সত্ত্বাধাতিকারী মোঃ সেলিম মিয়া জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাটির বিকল্প ব্যবহারের সুযোগ আছে। কিন্তু আমাদের নেই। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই আমরা মাটি ব্যবহার করছি। ফসলি বা আবাদি জমির মাটি কেন? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলে মূলত কৃষক যে জমিতে ফসল কম উৎপাদন করতে পারে সে জমিরই মাটি বিক্রি করে। আমরা কারো কাছ থেকে জোর করে মাটি কিনি না।

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের ৯নম্বর গন্ধব্যপুর ইউনিয়নের ভেতরে ৩টি ইট ভাটা আছে। ঠিক একই ইউনিয়নের পাশেই আরো ২টি ইটভাটা আছে। বলা চলে একটি ইউনিয়নে ৫টি ইটভাটা বর্তমানে চালু আছে। তার পরেও আরো একটি নতুন ইটভাটা স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এজিবি নামের ওই ব্রিক ফিল্ডের কোনো কাগজপত্র ঠিক না করেই ইতোমধ্যে তারাও ফসলি জমির মাটি কিনে স্তুপ দেয়া শুরু করেছেন। এজিবি ব্রিক ফিল্ডের মালিক মহসীন পাটওয়ারী জানান, আমরা আবেদন করেছি। অনুমতি পেলেই ভাটার কাজ শুরু হবে।

৯নম্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, ইটভাটায় ফসলি জমির উর্বর মাটি ব্যবহার বন্ধে তারা ইটভাটার মালিকদের বারবার বারণ করেছেন। কিন্তু তাদের কথা মানেননি ইটভাটা মালিক ও জমি মালিকরা।

চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচাপলক আলী আহম্মদ জানান, ফসলি জমির উর্বর মাটি ব্যবহার করলে স্বাভাবিক ভাবেই সেই জমিতে ফসল উৎপাদন কম হয়। তাই ইটভাটায় ফসলি জমির উর্বর মাটি ব্যবহারে সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ইটভাটাগুলোতে দ্রুত উর্বর মাটি ব্যবহার বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানালেন এ কর্মকর্তা।

পরিবেশ অধিদপ্তর চাঁদপুর এর সহকারী পরিচারক কাজী সুমন জানান, পরিবেশ বির্পযয় হতে পারে এমন স্থানে আর কোনো নতুন ইটভাটার পরিবেশের ছাড়পত্র দেয়া হবে না। বর্তমানে চাঁদপুরে মোট ১১৯টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫টি অবৈধ হলেও হাইকোর্টে রিট করে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যে কারণে আামরা তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না।
এভাবে ফসলি জমির উর্বর মাটি ব্যবহারে প্রচলিত আইন বাস্তবায়েনর দাবি চাঁদপুরের সুশিল সমাজের।

Recent Posts

Leave a Comment