রাজনীতিতে নব মেরুকরণ
বিশেষ প্রতিবেদক:
বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাসভবনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করা কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বৈঠকে হঠাৎ করে জাতীয় পার্টির যোগদানে তোলপাড় শুরু হয়েছে। দুই জোটের বাইরে তৃতীয় কোনো শক্তিশালী জোট হচ্ছে কিনা, তা নিয়েও সারা দেশে চায়ের কাপে ঝড় উঠছে। কেউ কেউ বলছেন, সরকারের সবুজ সংকেতেই জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি ওই বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। বিএনপির বিকল্প শক্তি হিসেবে আগামী নির্বাচনে এ জোটকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চায় আওয়ামী লীগ।
ভিন্ন কথাও বলছেন অনেকেই। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ নেতা-কর্মীর বড় অংশ সত্যিকার অর্থেই সরকার থেকে বেরিয়ে আসতে চান। এমনকি বিএনপির সঙ্গেও জোট করতে আগ্রহী তারা। তবে বাস্তবিক কারণে আপাতত সরাসরিভাবে বিএনপির সঙ্গে জোটে যাবে না জাপা। তাই আলাদা একটি প্লাটফরম তৈরি করে একাদশ নির্বাচনে লড়তে চায়। উদ্দেশ্য, এ সরকার হটানো। জাপা বা সম্ভাব্য জোটের প্রতিনিধিরা বিএনপির সঙ্গে গোপন যোগাযোগও রাখছেন। তবে নতুন জোট আদৌ হবে কিনা, এজন্য আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। এরই মধ্যে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকেই বি চৌধুরীর বাসার বৈঠককে স্বাগত জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়েও দেশের রাজনীতির প্রসঙ্গ উঠে আসায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। আওয়ামী লীগ এ নিয়ে চুপচাপ থাকলেও বিএনপিসহ সরকারবিরোধী অন্য দলগুলো এ রায়কে ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী বলে আখ্যা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গণতন্ত্রের শত ফুল ফুটছে, ভালো তো। এটাই গণতন্ত্রের বিউটি। জোট হবে, গ্রুপ হবে। এটাই রাজনীতির নিয়ম। নির্বাচনে আদর্শগত বিষয়টা মুখ্য নয়। নির্বাচন হলো কৌশলগত ব্যাপার। এখানে আদর্শগতভাবে জোট না হয়ে কৌশলগত, সময়ের প্রয়োজনে নির্বাচনে জেতার জন্য জোট হয়। ’ তিনি বলেন, ‘জাপা চলে গেলেও সমস্যা নেই। তারা তো সেখানে ষড়যন্ত্র করছে না। তারা জোট করছে। অসুবিধা কী? তবে এ জোট শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। ’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বি চৌধুরীর বাসায় নতুন জোট নিয়ে যে বৈঠক হয়েছে তাকে আমরা স্বাগত জানাই। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যে কেউ দল বা জোট করতে পারেন। এ নিয়ে নেতিবাচক কিছু বলার নেই। ’ জাতীয় পার্টির যোগদান প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা জাতীয় পার্টির বিষয়। এ দল একেক সময় একেক কথা বলে। তবে রাজনীতিতে নতুন মোড় নিয়ে এখনই বলার সুযোগ আসেনি। ’ বি চৌধুরীর বাসায় বৈঠকে অংশ নিয়ে জি এম কাদের বলেন, ‘সাবেক একজন রাষ্ট্রপতি ডেকেছেন তাই এসেছি। এখানে রাজনৈতিক নেতারা অনেকেই এসেছেন। তাদের মতামত জানলাম। আমি বিষয়টি আমাদের দলীয় ফোরামে বা শীর্ষ নেতাকে জানাব। ’ জাতীয় পার্টি নতুন কোনো জোট করবে কিনা— এমন প্রশ্নে বলেন, ‘এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। এখানে অফিশিয়াল বা আন-অফিশিয়াল যে আলাপ হয়েছে তা আমার নেতাকে জানাব। তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন। ’ আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, ১৪-দলীয় জোটকেই শক্তিশালী করার পক্ষে আওয়ামী লীগের একটি অংশ। আরেকটি অংশ বলছে, জাতীয় পার্টিসহ আরও কয়েকটি দল ও জোটের সঙ্গেও পরোক্ষভাবে সমঝোতা করা উচিত। তবে এইচ এম এরশাদ যে সিদ্ধান্ত নিন না কেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ দলের এমপিসহ সুবিধাভোগী একটি অংশ ক্ষমতাসীন দলের পক্ষেই থাকবেন। সেই কৌশলেও জাপার একটি অংশ এগোচ্ছে। এ ছাড়া জামায়াতবিরোধী ধর্মভিত্তিক দল ও সংগঠনকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। এ ক্ষেত্রে ১৪ দলের মতামতকেও গুরুত্ব দিচ্ছে না ক্ষমতাসীন দল। দলটি মনে করছে, ভোটের রাজনীতিতে এটা একটা বড় ফ্যাক্টর। এতে তৃণমূলে নির্বাচনের ফলাফলে ভালো প্রভাব পড়বে। এরই অংশ হিসেবে কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে ১৪ লাখ শিক্ষার্থীসহ কওমিপন্থি ১ কোটি ভোটার নিয়ে মাস কয়েক আগে থেকেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে অঙ্ক কষা শুরু হয়। বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ২০-দলীয় জোটের বাইরেও সরকারবিরোধী অন্য দলগুলোর সঙ্গে একটি সমঝোতা তৈরির চেষ্টা চলছে। এরই অংশ হিসেবে বিকল্পধারা, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্যসহ বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রাখছেন বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা। আগামী নির্বাচনে প্রয়োজনে এসব দলের নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা করা হবে। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করতে সর্বোচ্চসংখ্যক আসন ছাড় দিতেও প্রস্তুত বিএনপি। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার নিয়ে জনমত আদায়েও সরকারবিরোধী অন্য দল ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।