খুচরা বাজারে কমতে শুরু করেছে চালের দাম
নাটোরে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে মজুদদারীদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের অভিযান ও খোলা বাজারে চাল বিক্রির ফলে খুচরা বাজারে কমতে শুরু করেছে চালের দাম। বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের চাল প্রতি কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা করে কমেছে।
ওই দুই জাতের চাল বিক্রি হয়েছে প্রকার ভেদে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা দরে। সোমবার থেকে ওই চাল ৫০ থেকে ৫৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শহরের কানাইখালী চাউল পট্টি এলাকার ব্যবসায়ী শামীম হোসেন, আব্দুল আজিজ,আব্দুল মান্নান জানান,খুচরা বাজারে চালের দাম ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের চাল প্রতি কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা করে কমে গেলেও ক্রেতা নেই। ফলে অধিকাংশ চালের আড়ত বা দোকানদার অসল সময় কাটাচ্ছেন। অপরদিকে আটো রাইস মিল মালিক কেতাব আলী জানান, খুচরা বাজারে চালের দাম ২-১ টাকা করে কমতে শুরু করলেও ধানের বাজার এখনও ঊর্ধ্বমুখী। ফলে অধিকাংশ মিলে কোন কাজ হচ্ছে না। বিদেশ থেকে চাল আমদানিও বন্ধ রয়েছে। ধানের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় সরকারের নির্ধারিত দরে চাল সরবরাহের চুক্তি করেন নি অধিকাংশ মিলার। ফলে বাজারে চালের সরবরাহ কম হওয়ায় হঠাৎ করে দাম বেড়ে যায়। এছাড়া দেশের বড় বড় কোম্পনীগুলো চালের ব্যবসা শুরু করায় সংকট দেখা দেয়।
সরকার শুল্ক বৃদ্ধি করায় ব্যবসায়ীরা আমদানি শুরু করলেও খরচ বেশি হওয়ায় তা বন্ধ হয়ে যায়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে বন্যার খবর ভয়াবহ আকারে প্রচার হওয়ায় ভোক্তাসহ ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতংকের সৃষ্টি হয়। ফলে তারা বেশি করে চাল কিনে ঘরে মজুদ করে। এতে করে সৃষ্টি হয় সংকট। তিনি বলেন, সরকার বেশি দিন খোলাবাজারে চাল বিক্রি করাসহ বেশি করে চাল আমদানি করলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে। এছাড়া দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীসহ মিলাররা বাজারে চাল ছাড়তে বাধ্য হবে।
এদিকে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সোমবারও জেলার বিভিন্ন চাল মিল ও আড়তদারের প্রতিষ্ঠানে হানা দেয় বাজার নিয়ন্ত্রক কমিটিসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত। গুরুদাসপুর উপজেলার চাঁচকৈড় বাজারে অভিযান চালিয়ে ভেজাল মিনিকেট, ওজনে কম ও মজুদ করার অভিযোগে চার ব্যবসায়ীর নিকট থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে। এদের মধ্যে সততা রাইস মিলের মালিক রায়হান উদ্দিনের লাইসেন্স না থাকায় তার কাছে থেকে ৭০ হাজার টাকা, চৌধুরী অটো রাইস মিলের কালি পদ দাসের কাছে থেকে ওজনে কম হওয়ায় ৫০ হাজার টাকা, মেসার্স জাহাঙ্গীর চাল কল মালিক জাহাঙ্গীর আলমের কাছে থেকে ভেজাল মিনিকেট চাল বাজারজাতের অভিযোগে ৫০ হাজার টাকা ও মেসার্স এম এ আলমগীর চালকল মালিক আলমগীর হোসেনকে চাল মজুদ,ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
নাটোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট রাজ্জাকুল ইসলামের ভ্রাম্যমাণ আদালত এই অভিযান চালায়। অভিযানকালে অন্যান্যের মধ্যে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুল ইসলাম,র্যাব,ক্যাবসহ প্রলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুল ইসলাম জানান ,সোমবার থেকে নাটোরে খোলা বাজারে চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে প্রতিজনকে ৫ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। নাটোর শহর এলাকার জন্য ১৫ জন ডিলার নিয়োগ করা হয়েছে। প্রতিদিন এক হাজার কেজি করে চাল বিক্রি করবেন তারা। ইতিমধ্যে খোলা বাজারে চাল বিক্রির ঘোষনা করায় এবং চালের বাজার নিয়ন্ত্রনে রাখতে মজুদদারদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের কারনে বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। দু’দিনে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি চালে ২-১ টাকা করে কমতে শুরু করেছে।
নাটোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট রাজ্জাকুল ইসলাম জানান, মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা মোটা চালকে অটো রাইস মিলে বাঙ্গিয়ে মিনিকেট বলে বেশি দামে বিক্রি করে ভোক্তাদের প্রতারণা করছে। অপরদিকে বহু পূর্বে অল্প দামে কেনা ধানের চাল মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বেশি দামে বিক্রি করছে। তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।