প্রক্রিয়াজাত হচ্ছে লোনা ইলিশ
চাঁদপুর প্রতিনিধি ॥
আগামী বৈশাখ মাসে দেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুর, ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য বিক্রির জন্য এখনই ইলিশকে লবন দিয়ে প্রক্রিয়াজাত হচ্ছে লোনা ইলিশে। গত আগষ্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে এ কাজ শুরু হয়েছে। আরো একমাস সময় ইলিশ কেটে লবন দেয়া হবে। আর ইলিশের পেটে থাকা ডিম প্লাস্টিকের বক্স করে সাথে সাথেই বিক্রি করে পাঠানো হচ্ছে চট্টগ্রামে। চাঁদপুরে লোনা ইলিশ পক্রিয়াজাত করার কাজে আসা জামালপুর জেলার অনেক শ্রমিকই ঈদে বাড়ীতে না গিয়ে একাজে ব্যস্ত রয়েছেন। শহরের বড় স্টেশন মৎস্য আড়তের আশপাশের এলাকায় ঘুরে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বললে তারা এসব তথ্য জানান।
দেশের কয়েকটি ইলিশের অভয়াশ্রম এলাকার মধ্যে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজেন্ডার পর্যন্ত ১শ’ কিলোমিটার একটি অভয়াশ্রম এলাকা। এসব এলাকার ইলিশ, দক্ষিণাঞ্চলীয় বরিশাল, ভোলাসহ সাগরের ইলিশ ভরা মৌসুম সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে বেশী ধরা পড়ে। অনেক সময় আমদানি বেশী হলে বরফ সংকটে ইলিশগুলো পঁচে যায়। সংরক্ষণ করতে না পেরে অনেক ব্যবসায়ী এগুলোকে কেটে লবন দিয়ে লোনা ইলিশে পরিণত করেন। আর বহু বছর ধরে এসব ইলিশের কদর বেশী জামালপুর, ময়মনসিংহ, সিলেটের মৌলভী বাজার, রংপুর ও ঠাঁকুরগাঁও জেলায়। তবে জামালপুর জেলার শ্রমিকরাই লোনা ইলিশ সংরক্ষণের কাজে বেশী পারদর্শী। তবে স্থানীয় নারীরাও ইলিশ কাটার কাজে সহযোগিতা করেন।
রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) চাঁদপুর মৎস্য আড়ৎ সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে টিনের চালা কয়েকটি ঘরে লোনা ইলিশ পক্রিয়াজাত হচ্ছে। সকাল থেকেই শ্রমিকরা এ কাজ করছেন। জামালপুর থেকে আসা শ্রমিক মনসুরুল ইসলাম বলেন, গত ৪ বছর তিনি এ কাজ করেন। ঈদুল আযহায় বাড়িতে যাননি। কারণ তিনিসহ আরো ছয়জন শ্রমিক মেসার্স খন্দকার ফিসিং এর আওতায় ২ মাসের জন্য লোনা ইলিশ পক্রিয়ার কাজে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। তাই প্রতিদিন দৈনিক ৪শ’ টাকা হাজিরায় ৮ঘন্টা কাজ করছেন। খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা মহাজন করেছেন।
তিনি আরো বলেন, গত ১৫ দিন পূর্বে ইলিশগুলো কেটে ডিম বের করে লবন দিয়ে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। এখন এসব ইলিশ আবার দীর্ঘ সময় সংরক্ষণের জন্য প্লাস্টিকের বড় বড় ড্রামে ভর্তি করা হচ্ছে। আগামী চৈত্র-বৈশাখ মাস পর্যন্ত ড্রামে থাকলেও কোন ধরনের ক্ষতি হবে না।
মৎস্য ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, আগষ্ট মাসে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইলিশের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় এবং অনেক ইলিশ ট্রলারযোগে আসতে সময় লেগেছে। ওই সব ইলিশ সংরক্ষণের অভাবে কেটে লোনা ইলিশে পরিণত করা হচ্ছে। ৪শ’ থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশও কেটে লোনা ইলিশ হয়। তবে এ বছর বেশীরভাগ লোনা ইলিশের সাইজ ৩শ’ থেকে ৬শ’ গ্রামের মধ্যে। এখানকার মৎস্য ব্যবসায়ী মালেক খন্দকার, বাবুল হাজী, সবেবরাত, গফুর জমাদার, মানিক জমাদার, মেসবাহ মাল, ইদ্রিছ গাজী, হাজী সিডু মিজি, হাজী খালেক জমাদার প্রতি বছর এ মৌসুমে লোনা ইলিশ পক্রিয়াজাত করেন।
লোনা ইলিশ ব্যবসায়ী ও চাঁদপুর মৎস্য বনিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবেবরাত বলেন, ইলিশের আমদানি বাড়লেই লোনা ইলিশ পক্রিয়া হয়। আর এসব কাজে নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা দৈনিক হাজিরায় দুই মাস কাজ করেন। জামালপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর, ঠাকুরগাঁও জেলায় বিক্রির জন্য এসব লোনা ইলিশ চাঁদপুর থেকে ওই সব জেলার ব্যবসায়ীরা ক্রয় করেন। প্রতিমন লোনা ইলিশ বিক্রি হয় ১৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা। আর ইলিশের ডিমগুলো চট্টগ্রামের বিভিন্ন রপ্তানিকারকরা ক্রয় করেন। পরে এসব ডিম বিদেশে রপ্তানি করা হয়।