এরশাদের প্রশ্ন তিন টাকার ডিমের জন্য যা ঘটল তা দেখে কী মনে হয়?
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, দেশ নাকি মধ্যম আয়ের দেশ। অথচ শুক্রবার মাত্র তিন টাকার ডিম কেনার জন্য রাজধানীতে যা ঘটল- তা দেখে কী মনে হয়? দেশ কি আসলেই মধ্যম আয়ের দেশে উন্নত হয়েছে? নাকি সব কথার কথা।
শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলের কেন্দ্রীয় যৌথসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশে এখন আইনের শাসন নেই বললেই চলে। তাই সাধারণ মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে।
এরশাদ বলেন, বিএনপি মাত্র ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে আছে। এর মধ্যে তারা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। আমরা ২৬ বছর ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু জনগণের ভালোবাসায় জাতীয় পার্টি এখনও বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। বিএনপি আগামীকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা- এ নিয়েও সন্দেহ আছে।
যৌথসভা হলেও নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে কার্যত জনসভায় রূপ নেয় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণ। সকাল থেকেই সারা দেশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ, যুব সংহতি, স্বেচ্ছাসেবক পার্টি, মহিলা পার্টি, শ্রমিক পার্টি, ওলামা পার্টি, ছাত্রসমাজসহ জাতীয় পার্টির বিভিন্ন অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের খণ্ড খণ্ড মিছিল জড়ো হয় রমনা এলাকায়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ এমপি, কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলু এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, অ্যাডভোকেট শেখ সিরাজুল ইসলাম, ফখরুল ইমাম এমপি, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, সুনীল শুভ রায়, এটিইউএম তাজ রহমান, মেজর (অব.) খালেদ আখতার, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নুরু, কেন্দ্রীয় নেতা জহিরুল আলম রুবেল, নুরুচ্ছাফা সরকার, শফিকুল ইসলাম মধু, ইয়াহিয়া চৌধুরী এমপি, শ্রমিক পার্টির সভাপতি এ কে এম আসরাফউজ্জামান খান, মহসিন উল হাবলু, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মান্নান, ইললামী মহাজোটের চেয়ারম্যান আবু নাসের ওয়াহেদ ফারুক, বিএনএ জোটের চেয়ারম্যান সেকেন্দার আলী মনি। সভা পরিচালনা করেন যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু।
সভায় এরশাদ দলীয় নেতাকর্মীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তোমরা আমার ৯ বছরের শাসনামলের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে তুলে ধরো না। অথচ প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনাররা আমার সরকারের কর্মকাণ্ডের যে প্রশংসা করেছেন, তাতে আমি অভিভূত হয়েছি।তারা সরকারি উচ্চপদে থেকেও আমার প্রশংসা করেছেন।’
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, মিয়ানমারের সেনাপ্রধান বলেছেন রোহিঙ্গারা নাকি বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার গেছে, তারা বাঙালি। সেনাপ্রধানের এই বক্তব্যে পর মনে হয় না রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে পাঠানো যাবে।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি যতই কূটনৈতিক তৎপরতা চালান না কেন, মনে হয় না তারা আর ফিরে যেতে পারবে বা মিয়ানমার ফেরত নেবে। তাই আমি অনুরোধ করব, তাদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে যদি জাতীয় পার্টির সাহায্য প্রয়োজন হয়, আমরা সাধ্যমতো সাহায্য করব।’
সারা দেশ থেকে আসা দলীয় নেতাদের উদ্দেশে এরশাদ বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই। কিন্তু তোমরা মনে রেখো ক্ষমতা কেউ হাত তুলে দেয় না। ক্ষমতা আদায় করে নিতে হয়। এজন্য দলকে আরও সুসংগঠিত করতে হবে।’
রওশন এরশাদ বলেন, ক্ষমতায় যেতে হলে দলকে আরও সুসংগঠিত করতে হবে। সাধারণ মানুষের কাছে জাতীয় পার্টির নয় বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আর পল্লীবন্ধু এরশাদ স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন।
জিএম কাদের বলেন, যারা দল থেকে বিশ্বাসঘাতকতা করে চলে গেছেন তারা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। আবার অনেক পরীক্ষিত কর্মীও সঠিক মূল্যায়ন পাচ্ছে না। জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে আমাদের কর্মসূচি হতে হবে বাস্তবধর্মী ও কল্যাণমুখী।
এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, জাতীয় পার্টি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। বর্তমান সংবিধান অনুয়ায়ী যে নির্বাচন হবে, তাতে অংশগ্রহণ করবে জাতীয় পার্টি।
তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সেনাবাহিনীতে স্ট্যাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রাখতে হবে।
জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ৩০০ আসনে নির্বাচন করতে হলে এখন থেকেই প্রতিটি কেন্দ্রে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করতে হবে। ভোটকেন্দ্র নিজেদের দখলে রাখতে শক্তিশালী কর্মী বাহিনী তৈরি করতে হবে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এম এ সাত্তার, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, সোলায়মান আলম শেঠ, রত্না আমিন হাওলাদার এমপি, গোলাম কিবরিয়া টিপু, এম হাফিজ উদ্দীন আহমেদ, আবুল কাশেম, এম এ মান্নান, তাজুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া, যুব সংহতির সভাপতি আলমগীর শিকদার লোটন, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা এমএ রাজ্জাক খান, হারুনুর রশীদ মুন্সি, আনোয়ার হোসেন, গোলাম মোস্তফা আঙ্গুর, ছাত্রসমাজের সভাপতি সৈয়দ ইফতেখার আহসান, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিরু।