নতুন ৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চল আসছে
দেশে আরও ৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রাথমিক অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্যে ১টি সরকারি, বাকি ৮টি বেসরকারি খাতে প্রতিষ্ঠিত হবে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলের মোট জমির পরিমাণ ধরা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৭৫০ একর। এতে সাধারণ বিনিয়োগের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক ও সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
সরকারি ও বেসরকারি খাতে দেশে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ৭৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। নতুন করে ৯টি যোগ হলে স্থান নির্বাচন হওয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের সংখ্যা দাঁড়াবে ৮৮তে।
অবশ্য সরকারি ও বেসরকারি খাতে এখন ২৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। বেসরকারি খাতে কাজ চলছে ১৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের। অন্যদিকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) নিজস্ব ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। সরকারি খাতে ৩০ হাজার একরের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দ চলছে। মৌলভীবাজারের শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দ শেষ। বেসরকারি খাতে কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়েছে। অবশ্য বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো সরকারিগুলোর তুলনায় অনেক ছোট।
নতুন যে ৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রাথমিক অনুমোদন পাবে, তার মধ্যে সুনামগঞ্জের ছাতকে হচ্ছে ছাতক ইকোনমিক জোন। এই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করবে নিটল-নিলয় গ্রুপ। এর জমির পরিমাণ ১৩৮ দশমিক ৬৮ একর। জমিটি ছিল বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি), যা কিনেছে নিটল-নিলয় গ্রুপ।
কাজী ফার্মস চট্টগ্রামের চন্দনাইশে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করবে। এর নাম হবে কাজী ফার্মস ইকোনমিক জোন, যার আয়তন ১৩০ দশমিক ৬৩ একর। পোশাক খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় ১৪০ একর জমিতে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করবে। সাদ মুছা গ্রুপ চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ৯০ একর জমিতে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করবে।
এ ছাড়া ময়মনসিংহের ত্রিশালে হবে হামিদ ইকোনমিক জোন, যার আয়তন হবে ১৫৩ একর। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় হোসেন্দী ইকোনমিক জোন নামের একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে। ময়মনসিংহের ভালুকায় নিশিন্দাবাজার মৌজায় ১০০ একর জমিতে আনন্দ স্পেশাল ইকোনমিক জোনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ডেটা সফট আইটি পার্ক নামের একটি তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাব করা হয়েছে ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়িতে। এর আয়তন হবে সাড়ে ১২ বিঘা।
চাঁদপুরের মতলব উপজেলায় প্রায় ৪ হাজার একর জমিতে চাঁদপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলটি হবে সরকারি উদ্যোগে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৩ হাজার ৯০ একর সরকারি খাসজমি এবং ৯১০ একর চর ভরাট করার চিন্তা করছে বেজা।
সম্প্রতি স্ট্যান্ডার্ড গ্লোবাল ইকোনমিক জোন ঘুরে দেখা যায়, এই অর্থনৈতিক অঞ্চল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের একেবারে কাছে। সেখানে মাটি ভরাটের কাজ প্রায় শেষ। এখন সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ চলছে। নতুন করে আরও অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, স্থান নির্বাচন একটি চলমান প্রক্রিয়া। বেজার গভর্নিং বোর্ড স্থান অনুমোদন দেওয়ার পর সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা করে অর্থনৈতিকগুলো যোগ্য মনে হলে উন্নয়নকাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, গভর্নিং বোর্ডের সভায় আরও কিছু অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রাথমিক অনুমোদনের জন্য তোলা হতে পারে। অনুমোদন পাওয়া দু-একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাদও যেতে পারে।
উৎপাদন শুরু বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে
বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটিতে ইতিমধ্যে উৎপাদন শুরু হয়েছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জে মেঘনা নদীর তীরে আমান অর্থনৈতিক অঞ্চলে সিমেন্ট, মুরগির খাদ্য, প্যাকেজিং পণ্য ও জাহাজ তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠা করে আমান গ্রুপ। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কর্মকর্তারা জানান, সেখানে এখন ১৬ হাজার কর্মী কাজ করছেন। পাশাপাশি খালি জমিতে চীন, জার্মানি, জাপান থেকে কিছু বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের আয়তন ৮৪ একর।
আবদুল মোনেম ইকোনমিক জোনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মাটি ভরাটের কাজ প্রায় শেষ। ইতিমধ্যে সেখানে জাপানি মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হোন্ডা করপোরেশন ২৫ একর জমি নেওয়ার চুক্তি করেছে। এই জমিতে হোন্ডা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে কারখানা করবে। আবদুল মোনেম ইকোনমিক জোনের পরিচালক এ গফুর সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা প্রায় ১৫টি কোম্পানির বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছেন, যার বেশির ভাগই জাপানি। এগুলো এখন পর্যালোচনা চলছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মেঘনা গ্রুপের মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনে প্রায় ১০০ একর জমিতে একটি ইস্পাতের ভবন তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। এতে তৈরি করা হচ্ছে প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং ম্যাটেরিয়াল। এ ছাড়া এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে আরও কয়েকটি কারখানা নির্মাণের কাজ চলতে দেখা যায়।
মেঘনা নদীর তীরে ২৪৫ একর জমিতে মেঘনা গ্রুপের আরেকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ শেষ। এটির নাম মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চল। মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে মেঘনা গ্রুপ কাগজ ও টিস্যুর মিল, ভোজ্যতেল পরিশোধনাগার, আটার মিল, বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি কারখানা করেছে।