সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে ওবায়দুল কাদের ‘ধরা হবে, ছাড়া হবে না’
সড়ক নিরাপত্তার স্বার্থে ক্ষমতাবান হলেও কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ধরা হবে, তবে ছাড়া হবে না। এ রাস্তা নিরাপদ করতে হবে। আমাদের বাঁচতে হলে ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ সড়ক আমরা গড়ে তুলবই।
সমন্বিতভাবে, পরিকল্পিতভাবে যানজটের বিরুদ্ধে, দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে রাস্তার ও পরিবহনের শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মনিরুল ইসলাম, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম এবং একই বিভাগের সাবেক সচিব এমএএন সিদ্দিক, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান, হাইওয়ে পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আতিকুর রহমান প্রমুখ।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এবার প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সরকার জাতীয়ভাবে নিরাপদ সড়ক দিবস পালন করছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘সাবধানে চালাব গাড়ি, নিরাপদে ফিরব বাড়ি’। এই দিবস পালনে অর্থ মন্ত্রণালয় ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এ রকম দায়সারা দিবস পালন করে লাভ নেই। নামকাওয়াস্তে একটা দিবস সরকার ঘোষণা করল, কোনোরকমে এটা পালন করলাম। এটা অর্থহীন, মূল্যহীন। এ রকম দিবস পালনের পক্ষপাতী আমি নই। মানুষকে সচেতন করার জন্য এই দিবসকে ডাকঢোল পিটিয়ে পালন করতে হবে।
উল্টো পথে যান চলাচল প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, অসাধারণ রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, অসাধারণ মানুষ, অসাধারণ আইনজীবী, অসাধারণ সাংবাদিক- আমরা কেউ রাস্তায় আইন মানতে চাই না। সাংবাদিক নয়, তবু সাংবাদিকের স্টিকার। জনপ্রতিনিধি নয়, এমপি নয়, তবু নীলক্ষেত মার্কা ভুয়া স্টিকারে চলেন তারা।
মন্ত্রী বলেন, জনপ্রতিনিধিদের এলাকায় দলীয় কর্মীরা হেলমেট ছাড়া এক মোটরসাইকেলে তিনজন বসে আলেক্সান্ডারের মতো রাস্তায় নামেন। এগুলো আমাদের কতজন জনপ্রতিনিধি খেয়াল করেন? জনপ্রতিনিধিরা ঢাকা থেকে এলাকায় গেলে সংবর্ধনা দেয়ার জন্য মাইলের পর মাইল বন্ধ করে রাখেন। একদিকে পেট্রোল খরচ করছে অন্যদিকে নিজেরা সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করছে।
সড়ক দুর্ঘটনার হার কমছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসছে। তবে এতে আত্মতৃপ্তিতে ভোগার সুযোগ নেই। প্রতিটি প্রাণই মূল্যবান। আমরা চাই না সড়কে আর কোনো প্রাণ অকালে ঝরে যাক। তিনি গাড়িচালকদের উদ্দেশ্যে বলেন, বেপরোয়া গাড়ি চালনা যেমনি দুর্ঘটনা ঘটায় তেমনি নিজের জীবনও ঝুঁকিতে থাকে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, কী করে এত আনফিট গাড়ি, লক্কড়ঝক্কড় মার্কা গাড়ি রাস্তায় আসে। বাংলাদেশের এত অর্জন, সমৃদ্ধি, সেই দেশের রাজধানীতে কয়টা গাড়ির চেহারা সুন্দর আছে? এত অর্জনের দেশ ও বিপুল সম্ভাবনার দেশের রাজধানী ঢাকা শহরের এত গরিব গাড়ি গ্রামেও নেই। আপনারা দেশকে ছোট করছেন। ঢাকা শহরে এসে বিদেশিরা আমাদের লজ্জা দিচ্ছে আমাদের যানজটের জন্য, আমাদের ফিটনেসবিহীন গাড়ির জন্য।
তিনি বলেন, সেই লজ্জায় কি আমরা ডুবছি না? শুধু কি জলাবদ্ধতার পানিতে ডুবছি? এ ধরনের লজ্জায়ও আমরা ডুবছি। সবাইকে বলব মনমানসিকতার পরিবর্তন করতে। লজ্জার বিষয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নোটিশ দিয়েও উল্টো পথে যাওয়ার খারাপ প্রাকটিস বন্ধ করতে পারিনি। এই কী আমাদের শিক্ষা, এই শিক্ষার আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই।