১০ বছর পর ইসির সংলাপে ‘আজিজ কমিশন’
এটিএম শামসুল হুদা ও কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন কোনো সংলাপে না ডাকলেও ১০ বছর পর কেএম নূরুল হুদা কমিশন বিশেষজ্ঞের মত দিতে আলোচিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি এমএ আজিজ কমিশনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।১০ বছর আগে নবম সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ২২ জানুয়ারি ভোটের জন্য তফসিলও ঘোষণা করেছিল এমএ আজিজ কমিশন।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন ফখরুদ্দীন আহমদ। পরে ওই ভোটের তফসিল বাতিল করা হয়।
২১ জানুয়ারি সিইসি এমএ আজিজ এবং ৩১ জানুয়ারি বাকি পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে আজিজ কমিশন অধ্যায়ের ইতি ঘটে।
বিতর্ক ওঠায় হয়তো পরবর্তী সময়ে আজিজ কমিশনের কোনো সদস্যকে কখনও গণমাধ্যম ও সভা-সেমিনারে উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিতে দেখা যায়নি।
ইসির আগামী ২৪ অক্টোবর নির্বাচন পরিচালনা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সাবেক সিইসি, নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে।
সিইসি বিচারপতি এমএ আজিজ ছুটিতে যাওয়ায় ওই ইসিতে নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মাহফুজুর রহমান ভারপ্রাপ্ত সিইসি ছিলেন। অপর চারজন নির্বাচন কমিশনার ছিলেন- সম জাকারিয়া, মাহমুদ হাসান মনসুর, মুদাব্বির হোসেন চৌধুরী ও মো. সাইফুল আলম।
এ বিষয়ে ইসির জনসংযোগ পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচন বিশেষজ্ঞ হিসেবে সাবেক সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে জীবিত রয়েছেন, এমন সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। তাড়া ছাড়াও কয়েকজন বিশেষজ্ঞদের নামও যোগ করা হতে পারে।’
কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের ইসি গত ১৫ ফেব্রুয়ারি যোগ দেন। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে এর আগে ১১ জন সিইসি ও ২৩ জন নির্বাচন কমিশনার ছিলেন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, এমএ আজিজ কমিশনের সদস্যরা কখনও কোনো আলোচনায় অংশ নেন না। ২০০৭-২০১২ মেয়াদের এটিএম শামসুল হুদা ও ২০১২-২০১৭ কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশনও তাদের সংলাপে ডাকেনি।
তবে বর্তমান কমিশন এবার সবার সঙ্গে আলোচনার কথা বলে ‘সমালোচনা এড়াতেই’ ২০০৫-২০০৭ সালের আজিজ কমিশনের সদস্যদের আমন্ত্রণ পাঠিয়েছে।
আমন্ত্রিত ৫ সিইসি
সিইসি বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রউফ, মোহাম্মদ আবু হেনা, বিচারপতি এমএ আজিজ, এটিএম শামসুল হুদা ও কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কাছে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ স্বাক্ষরিত চিঠি ও প্রস্তাবিত রোডম্যাপসহ সংলাপের আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
আমন্ত্রিত ১২ নির্বাচন কমিশনার
এমএম মুনসেফ আলী, এ কে মোহাম্মদ আলী, স ম জাকারিয়া, মো. সাইফুল আলম, মোদাব্বির হোসেন চৌধুরী, মাহমুদ হাসান মনসুর, মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন, এম সাখাওয়াত হোসেন, মোহাম্মদ আবদুল মোবারক, মোহাম্মদ আবু হাফিজ, জাবেদ আলী ও মো. শাহনেওয়াজ- এই ১২ নির্বাচন কমিশনারের আবাসিক ঠিকানায় আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে বলে জানান ইসির কর্মকর্তারা।
জনসংযোগ পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘নিবন্ধিত ৪০টি দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে ২২ অক্টোবর পর্যবেক্ষক, ২৩ অক্টোবর নারী নেত্রী এবং ২৪ অক্টোবর নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময় হবে। এরমধ্য দিয়ে ৩১ জুলাই থেকে অক্টোবরব্যাপী সংলাপ শেষ করবে ইসি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পর্যবেক্ষক সংস্থার ৩৩ জন প্রতিনিধি এবং নারী নেত্রী ও নারী অধিকার নিয়ে কাজ করেন এমন ২২ জনকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’
আমন্ত্রিত ২২ নারী নেত্রী
ইসির আমন্ত্রিত নারী নেত্রীরা হলেন- হামিদা হোসেন, রোকেয়া কবির, আয়েশা খানম, সেলিনা হোসেন, শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, অ্যারোমা দত্ত, সেলিনা আহমেদ, সালমা আলী, মনিরা রহমান, অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম, ওয়াহিদা বানু, সালমা খান, ফরিদা ইয়াসমিন, রেহানা সামদানী, রোকেয়া রফিক, পারভীন সুলতানা ঝুমা, মাহবুবা বেগম, রেহানা সিদ্দিকী, মাসহুদা খাতুন শেফালী, শাহীন আক্তার ডলি, শার্মিনা জামান ও মনসুরা আক্তার।
ইসির আমন্ত্রিত ৩৩ পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রধান
মো. সামসুল হক, প্রকৌশলী শেখ আল আমিন, নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, শাহজাহান গাজী, মো. হেদায়েতুল ইসলাম চৌধুরী, শারমিন মুর্শিদ, আনোয়ার হোসেন, এএনএম ইমাম হাসনাত, সাইফুল ইসলাম দিলদার, কামরুল হাসান মঞ্জু, শেখ আবদুল মালেক, তালেয়া রহমান, মুনিরা খানম, মিজানুর রহমান, এএইচএম নোমান, নোমান আহমেদ খান, রেজাউল করিম চৌধুরী, রোখসানা খন্দকার, মো. আব্দুল আলীম, শফিকুল ইসলাম, সাকিব আহমেদ বশার, স্বপন গুহ, বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক, এসএম হারুন অর রশীদ লাল, শহীদুল ইসলাম, আলাউদ্দিন খান, একে আরজু, শামিমা ইয়াসমিন, হারুন অর রশীদ, সেলিমা সারওয়ার, সরদার হুমায়ুন কবির, এনজেলা গোমেজ ও খন্দকার আলমগীর হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইন সংস্কার, সীমানা পুনঃনির্ধারণসহ ঘোষিত রোডম্যাপ নিয়ে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ করছে।
গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধির সঙ্গে সংলাপ শেষ করেছে ইসি। এরপর ২৪ আগস্ট থেকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময় শুরু করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।