জামিন স্থগিতে ‘সরকারের ইচ্ছাই প্রতিফলিত’ হলো: বিএনপি
আপিল বিভাগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিতাদেশে ‘সরকারের ইচ্ছাই প্রতিফলিত’ হয়েছে বলে মনে করছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ক্ষোভের সঙ্গে বলছি- এই আদেশে সরকারের যে ইচ্ছা, সেই ইচ্ছাই প্রতিফলিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের যে আশা-আকাঙ্ক্ষার স্থল সর্বোচ্চ আদালত, সেই সর্বোচ্চ আদালত থেকে আমরা ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয়েছি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বঞ্চিত হয়েছেন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশনেত্রীকে এভাবে বন্দি করে রাখার একটাই উদ্দেশ্য গণতন্ত্রকে চূড়ান্তভাবে কবর দিয়ে দেয়া। চালু একটা কথা আছে- কফিনের শেষ পেরেকটি মেরে দেয়া।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, দেশনেত্রীকে জামিন না দিয়ে কফিনে শেষ পেরেকটি মারা হয়েছে আজকে। আওয়ামী লীগ সরকার বিচার বিভাগের ওপর ভর করে, তাদেরকে ব্যবহার করে এভাবে মানুষের অধিকারগুলোকে হরণ করে নিচ্ছে। আমরা এই অন্যায়-অত্যাচার এবং বিচার বিভাগকে এভাবে ব্যবহার করার তীব্র প্রতিবাদ করছি, নিন্দা জানাচ্ছি।’
এসময় খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দেশের সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, গণতন্ত্রকামী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার জানান মির্জা ফখরুল।
জামিন নিয়ে সরকার কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘খুব কৌশলে যাচ্ছে কিন্তু। কৌশলটা হচ্ছে জামিন স্থগিত করে দিয়েছে, জামিন নাকচ করেনি। এরপর শুনানি হবে লিভ টু আপিলের। অর্থাৎ এভাবে ক্রমান্বয়ে ক্রমান্বয়ে যেতে থাকবে এবং তাকে (খালেদা জিয়া) আটকে রাখা হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা জামিন দিয়েও করতে পারতো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে যে ন্যুনতম সুযোগ-সুবিধাগুলো আদালতে তিনি পাচ্ছেন না।’
তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছরের দণ্ড হলে সাধারণত আপিল করলেই জামিন হয়ে যায়। সেই মামলা জামিন পাওয়াটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা তার আইনগত অধিকার। এখন পর্যন্ত এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি যে, পাঁচ বছরের সাজায় উচ্চ আদালতে জামিন পায়নি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রথম থেকে লক্ষ্য করেছি, দেশনেত্রীর জামিন ও তাকে কারাগার থেকে বের করে আনার যে আইনি প্রক্রিয়া, সেই আইনি প্রক্রিয়াকে অত্যন্ত সচেতনভাবে বাঁধা দেয়া হচ্ছে। সরকার সেই বাঁধা দিচ্ছে।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যারা গতকাল (রোববার) আদালতে গেছেন, তারা দেখেছেন যে কিভাবে আদালত কক্ষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে পুরোপুরি ঘিরে রেখেছে। আগে জানতাম বাইরে, এখন দেখছি ভেতরেও পুরোপুরি।’
‘এমনকি প্রধান বিচারপতির এজলাসের বাইরে পর্যন্ত। কিছু কিছু লোককে ভেতরে ঢুকতে দেখেছি আর্মসসহ। এটা আমরা দেখেছি। আমার মনে হয়, পৃথিবীর কোনো দেশে এরকম নজির রয়েছে। এই অবস্থায় এই দেশ চলে গেছে’ যোগ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে বন্দি রেখে তাদের যে নীলনকশা, সেই নীলনকশা অনুযায়ী তাদের মতো করে একতরফা নির্বাচন দেখিয়ে আবার ক্ষমতায় চলে আসতে চায়। ইতোমধ্যে আপনারা শুনেছেনও ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, এটা এখন আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এটা ডিসাইডেড, ডান।’
সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।