চোরাই মোবাইল চোরের করতে ‘ওস্তাদ’
তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই। অথচ তিনি ‘মোবাইল ফোন বিশেষজ্ঞ’। চুরি হওয়া মোবাইল তাঁর কাছে নেওয়ার পর তিনি খুব সহজে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে দেন বলে অভিযোগ। এ কারণে মোবাইল ফোন উদ্ধার অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই নম্বর পরিবর্তন করতে ফোনপ্রতি ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা নেন তিনি।
১৩ মার্চ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) তাঁকে রাজধানীর দারুস সালাম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে র্যাব তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে মামলা করে। মামলা তদন্ত করছে দারুস সালাম থানা-পুলিশ। এই ‘মোবাইল বিশেষজ্ঞের’ নাম মো. সোহাগ।
তদন্ত কর্মকর্তা দারুস সালাম থানার এসআই স্বপন কুমার সরকার বলেন, মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করার মতো গুরুতর অপরাধ করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। এসব মোবাইল পরে অপরাধীরা ব্যবহার করে অপরাধ করে যাচ্ছিল।
স্বপন কুমার আরও বলেন, ইন্টারনেট ঘেঁটে নিজেই মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করা শিখেছেন সোহাগ।
কে এই সোহাগ
পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সোহাগের লেখাপড়া। দারুস সালাম এলাকার মিরপুর-১ কো-অপারেটিভ মার্কেটে তাঁর নিজস্ব দোকান। নাম সোহাগ মোবাইল অ্যান্ড সার্ভিসিং। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, সোহাগ বিবাহিত। নিজের নামটা কোনোমতে লিখতে পারেন।
মামলার এজাহার বলছে, র্যাব যখন তাঁর দোকানে অভিযান চালায়, তখন তিনি মোবাইল ফোনের আইএমইআই পরিবর্তনের কথা অস্বীকার করেন। পরে তিনি স্বীকার করেন যে মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে মোটা অঙ্কের টাকা নিতেন।
মামলার বাদী ও র্যাব-৪-এর নায়েব সুবেদার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সোহাগকে আমরা দোকান থেকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করি। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে সব কথা তিনি স্বীকার করেন। অনেক দিন থেকে অপরাধীরা তাঁর মাধ্যমে চোরাই মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করেছে।’
সাইম টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মোবাইল ফোন বিশেষজ্ঞ কামাল হোসেন বলেন, আইএমইআই হলো ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি। এটি মোবাইল ফোনের ইউনিক নম্বর। ফোনসেট হারিয়ে গেলে এই নম্বর ট্র্যাকিং করে সেটের অবস্থান জানা যায়। আইএমইআই পরিবর্তন করা জঘন্য অপরাধ। এই নম্বর পরিবর্তন করার পর আর ওই মোবাইল ফোনের অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। এসব মোবাইল ফোন অপরাধীরা ব্যবহার করে থাকে।
সোহাগের আইএমইআই কারসাজি
সোহাগকে গ্রেপ্তার করার পর র্যাব তাঁকে থানায় হস্তান্তর করে। এরপর ১৪ মার্চ সোহাগকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে। সেদিন তাঁর পাঁচ দিন রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে পুলিশ পরে তাঁকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
পরে আদালতকে পুলিশ বিস্তারিত প্রতিবেদন দিয়ে জানিয়েছে, সোহাগ কীভাবে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে আসছিলেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলত ইউটিউব থেকে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করার পদ্ধতি শিখেছেন সোহাগ। চুরি, ছিনতাই কিংবা ডাকাতি করে নেওয়া মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করলে সেই ফোন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে প্রশাসন আর ওই মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে পারে না। সোহাগের দোকান থেকে একটি আইফোন, একটি হুয়াই ফোন, একটি স্যামসাং, একটি ওয়ালটন, একটি লাভা এবং একটি সনি কোম্পানির মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে কালো রঙের জে৩ এক্স নামের একটি ডিভাইস। এর বাইরে তাঁর কম্পিউটারের সিপিইউ জব্দ করে র্যাব। বিচারের জন্য তাঁর ডেস্কটপ কম্পিউটারের মনিটরের একটি স্ক্রিন শর্ট আলামত হিসেবে আদালতে পাঠানো হয়েছে। যেসব সফটওয়্যার ব্যবহার করে সোহাগ আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করতেন তা চিহ্নিত করা হয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা স্বপন কুমার সরকার বলেন, দ্রুত তদন্ত শেষ করে সোহাগের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।