চাঁদপুরে করোনা রিপোর্ট আসতে ১৭ দিনও পার হয়ে যায়, বাড়ছে সংক্রমণ

 In চাঁদপুর

চাঁদপুর প্রতিনিধি :

চাঁদপুরে করোনা ভাইরাস টেস্টের জন্যে জেলা থেকে যেসব নমুনা বা স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয় সেগুলো ঢাকার দুটি ল্যাবে পাঠানো হয়। ঢাকার দুই জায়গায় এসব নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পাঠানো কোনও রিপোর্ট একদিন পর চলে আসেলেও কোন কোন রিপোর্ট আসতে কমপক্ষে সতেরো দিন পার হয়ে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অথচ রিপোর্ট আসার আগে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না কোন্ মানুষটি করোনায় আক্রান্ত। আর এ সময়ের মধ্যে স্যাম্পল দেয়া মানুষগুলো সব জায়গায়ই আসা-যাওয়া করে, সর্বত্র বিচরণ করে থাকে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এক সপ্তাহ বা সতেরোদিন পর যখন ওই মানুষগুলোর পজিটিভ রিপোর্ট আসে, তখন এক ভয়ানক পরিস্থিতি আঁচ করা হয়। সেটি হচ্ছে, পজিটিভ রিপোর্ট আসা অর্থাৎ করোনায় আক্রান্ত হওয়া মানুষগুলো এতোদিন যাবৎ অবাধে বিচরণ করে কত মানুষকে যে সংক্রমিত করলো, তার কোনো হিসেব নির্ণয় করা যায় না। ফলে এভাবেই চাঁদপুরে ভয়ানকভাবে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

কোভিড-১৯ একটি গুপ্ত ঘাতক। এটির দ্বারা কেউ আক্রান্ত হলো কি না তা টেস্ট ছাড়া নিশ্চিত হওয়া যায় না। তবে নিশ্চিত হওয়ার আগে আক্রান্ত ব্যক্তির মাঝে নানা লক্ষণ দেখা দেয়। সেই লক্ষণের ওপর ভিত্তি করে সন্দেহভাজনদের থেকে স্যাম্পল বা নমুনা নেয়া হয়। আর এ নমুনা সংগ্রহ করার সময় শতভাগ সুরক্ষা পোশাক পরিধান করে নিতে হয়। নমুনা হিসেবে যা সংগ্রহ করা হয় তা হচ্ছে মানুষের নাকের ভেতর থেকে এবং গলার ভেতর থেকে লালা নেয়া হয়। এসব নমুনা পরীক্ষার জন্যে ঢাকা মোহাম্মদপুরস্থ চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন এবং আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। প্রথমটা অর্থাৎ চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠানটি বেসরকারি। আর পরেরটা সরকারি প্রতিষ্ঠান। চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের এমডি হচ্ছেন চাঁদপুরের কৃতী সন্তান করোনার জীন রহস্য উন্মোচনকারী প্রফেসর ড. সমীর কে সাহা। আর তাঁর মেয়ে ড. সেঁজুতি সাহাও এই প্রতিষ্ঠানে বাবার সাথে কাজ করছেন। তাঁদের দুজনের বদান্যতাতেই মূলত এই প্রতিষ্ঠানে চাঁদপুরের স্যাম্পল গেলে একদিনের মাথায় রিপোর্ট দিয়ে দেয়া হয়। এখানকার রিপোর্টও নির্ভরযোগ্য বলে চাঁদপুরের স্বনামধন্য চিকিৎসকগণ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাগণ মন্তব্য করেছেন। তবে এই প্রতিষ্ঠানে একদিনে চাঁদপুরের ১শ’ জনের বেশি স্যাম্পল তারা গ্রহণ করেন না। এই করোনা সংক্রমণ রিপোর্ট আসতে বিলম্ব হওয়ায়, আক্রান্তরা এ ক’দিনে কতজনকে যে সংক্রমিত করলো! ধারণা করা হচ্ছে এ জন্যেই চাঁদপুরে এখন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এখন প্রতিদিন চাঁদপুর থেকে একশ’র উপরে দেড়শ’ থেকে পৌনে দুইশ’ কি দুইশ’ স্যাম্পল পাঠানো হয়। প্রতিদিন পাঠানো স্যাম্পল এর মধ্যে প্রায় একশ’র মতো স্যাম্পল পরীক্ষা ছাড়া সেখানে থেকে যায়। এভাবে জমতে জমতে চাঁদপুরের স্যাম্পল গতকাল পর্যন্ত পেন্ডিং অবস্থায় আছে ৬৭২ জনের।

সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, চাঁদপুরের স্যাম্পল ওইসব প্রতিষ্ঠান গিয়ে জট লেগে যাওয়ার বিষয়টির সমাধান যদি না করা হয় তাহলে সার্বিক পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে। এ বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে করোনা বিষয়ক ভার্চুয়াল সভায় চাঁদপুরের স্থানীয় সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনিকে বলেছেন সমাধানের জন্যে। মন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন বিষয়টি দেখবেন বলে। তিনি আরো জানান, রিপোর্ট আসতে দেরি হওয়ার কারণে সন্দেহভাজন রোগীরা যারা স্যাম্পল দিবেন তাদের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তাদেরকে আইসোলেশনে থাকার জন্য কঠোর ভাবে নিশ্চিত করা হবে এবং রিপোর্ট আসার পরে যাদের মধ্যে এই সংক্রমন ছড়িয়েছে তাদেরকে আইসোলেশনে চিকিৎসা প্রদান করা হবে এবং যাদের নেগেটিভ আসবে তাদেরকে স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে।

Recent Posts

Leave a Comment