চাঁদপুর পাউবো সাইনবোর্ড সর্বস্ব; জরুরি সংরক্ষণ কাজে অক্ষম!
চাঁদপুর প্রতিনিধিঃ
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড দিনদিন সাইনবোর্ড সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে রূপ নিচ্ছে। সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে জরুরি সংরক্ষণ, সংস্কার ও মেরামত কাজ করার ক্ষমতা নেই। চাঁদপুরের ৪টি উপজেলা মেঘনা নদী তীরবর্তি হওয়ায় বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে জরুরী ভিত্তিতে কাজ করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। অথচ চিঠি চালাচালি আর চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের আর কোন কিছুই করার থাকে না।
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে কম বেশি ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙন চাঁদপুরকে রক্ষার জন্য এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, তিন জন নির্বাহী প্রকৌশলী, কয়েকজন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয় রয়েছে। চাঁদপুর শহর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প, ইব্রাহিমপুর-সাকুয়া সংরক্ষণ প্রকল্প, হাইমচর সংরক্ষণ প্রকল্প, চাঁদপুর সেচ প্রকল্প, মেঘনা-ধানাগোঁদা সেচ প্রকল্পসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্প রয়েছে এসব কার্যালয়ের অধীনে। তাছাড়া উদমদী, কালীপুর, হাজীমারা, নানুপুরে রয়েছে বেশ কয়েকটি স্লুইচ গেইট ও পাম্প হাউজ। এত প্রকল্প থাকলেও এইসব কার্যালয়ের পক্ষে নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে বা জরুরি পরিস্থিতিতে কোন কাজ করার ক্ষমতা কর্মকর্তাদের নেই। ফলে নদী ভাঙ্গনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে চিঠি চালাচালি এবং সাইট পরিদর্শন ও আশ্বাস প্রদান করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। দফায় দফায় চিঠি চালাচালির পর, প্রকল্প প্রণয়ন, ড্রইং, ডিজাইন করে প্রকল্প পাস করার পরই তারা কাজ করতে পারে। কিন্তু ততদিনে ক্ষতি যা হবার তা হয়ে যায়।
চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষীপুর, রাজরাজেশ্বর, ইব্রাহিমপুর, হাইমচরের নীলকমল ইউনিয়নে নদী ভাঙ্গন শুরু হয়। ইতিমধ্যেই নদী ভাঙ্গনে এসব এলাকার শতাধিক বসতভিটা ও ব্যবসা, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, একটি পুলিশ ফাঁড়ি নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে। ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেবার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে দফায় দফায় যোগাযোগ করেও কোন লাভ হয় না। যোগাযোগ করা হলে তারা বলে, তাদের করার কিছুই নেই। এ অবস্থায় ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা জানান, চাঁদপুর সদর ও হাইমচরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের চারটি প্রকল্প রয়েছে। যেগুলো ২০০৮ থেকে শুরু করে ২০১৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়। এই প্রকলাগুলো বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পগুলো ছাড়াও চাঁদপুর শহর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প নামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প রয়েছে। যা বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে প্রায় দুইশ’ কোটি টাকা। এতগুলো প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য গত অর্থবছরে ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা দেয়া হয়। এই টাকার মধ্যে আবার একটি মামলার ব্যয় হিসেবে ৭৫ লাখ টাকা, ঠিকাদারদের বকেয়া বিল হিসেবে ২ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। বাকি দুই কোটি টাকা সম্বল করে আরো ৩ কোটি টাকার কাজ করা হয়েছে। এই টাকার মধ্যে মাত্র ৩৫ লাখ টাকা ঠিকাদারকে দেয়া হয়েছে। ওই কর্মকর্তা জানান, নদী ভাঙ্গনের মুখে তারা অসহায়। জরুরি সংরক্ষণ কাজ করতে হলে কয়েকদফা চিঠি চালাচালি করে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে দিয়ে ইমারজেন্সি ঘোষণা করিয়ে তারপর কাজে হাত দিতে হয় কোন প্রকার বরাদ্দ ছাড়াই। কাজ করানোর চিঠিতে আবার শর্ত থাকে, প্রশাসনিক অনুমোদন সাপেক্ষে কাজ করাতে হবে। আর এই প্রশাসনিক অনুমোদন পেতে মাসের পর মাস চলে যায়। ফলে ঠিকাদাররাও কাজ করতে চায় না, কর্মকর্তারাও ঝুঁকি নিতে চায় না। এ অবস্থায় নদী ভাঙ্গনের দৃশ্য চেয়ে চেয়ে দেখা এবং আশ্বাস দেয়া ছাড়া তাদের কিছুই করার থাকে না। অবশ্য চাঁদপুর শহর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে জরুরি সংরক্ষণ কাজ পরিচালনার জন্য সামান্য কিছু বালির বস্তা এবং ব্লক রয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবু রায়হান জানান, চলতি অর্থবছরে চাঁদপুর ও হাইমচরে নদী তীর সংরক্ষণের জন্য ১৯০ কোটি ৭০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে চাঁদপুরের হরিণা ফেরিঘাট এলাকার ৯৩০ মিটার এবং হাইমচর-কাটাখাল এলাকায় ৮৬০ মিটার এলাকায় সংরক্ষণ কাজ পরিচালনা করা হবে। বরাদ্দকৃত টাকার মধ্যে ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে নদী খননে। বাকি টাকা দিয়ে তীর সংরক্ষণ কাজ করা হবে। বন্যার পর এর কাজ শুরু হবে। ২০২০ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।