চাঁদপুরে ভারতীয় গরুর চাপে আতঙ্কে খামারিরা!
চাঁদপুর প্রতিনিধিঃ
দুলাল মির্জা একজন আদর্শ খামারি। চাঁদপুরের হাজিগঞ্জর পূর্ব হাটিলা ইউনিয়নের হাটিলা গ্রামে তার ডেইরি ও মোটাতাজাকরণ খামার রয়েছে। গত একদশক ধরে বাড়ির খামারে গরু মোটাতাজা এবং দুধ উৎপাদন করছেন তিনি। গত বছর থেকে একপ্রকার অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ঈদ উপলক্ষ্যে গরু মোটাতাজা করছেন। যদিও প্রায় ছয় লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এবারো ঠিক একই আতঙ্কে আছেন তিনি। এবছর তার খামারে ৪০টি গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। এদের ক্রয় মূল্য ২৪লাখ টাকা। পরিচর্যা, খাবার ওষুধপত্রসহ আরো ৮লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। প্রতিটি গরু মোটাতাজা করণ পর্যন্ত খরচ পড়েছে প্রায় ৯০হাজার টাকা। গত মাস খানেক আগে প্রতিটি গরুর দাম লাখ টাকার উপরে বললো ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে দাম যেন ততই নিচের দিকে নামছে। একরণে গতবছরের শঙ্কা মনের ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে।
খামারি দুলাল মির্জা জানান, প্রতিবছর লোকসান দিয়ে ব্যবসা করা যাবে না। এবছর লোকসান দিলে হয়তো আগামী বছর থেকে গরু মোটাতাজা করবো না। এতো কঠোর পরিশ্রম করে এবং লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে যদি লোকসান গুণতে হয়, তাহলে কীভাবে ব্যবসা পরিচালিত করবো? আমরা চাই সরকার যেন ভারতীয় গরু অবৈধ আমদানির ব্যাপারে সচেষ্ট হয়।
শুধু দুলাল মির্জা নন চাঁদপুরের প্রায় ১৫শ খামারি লোকসানের সঙ্কায় আছে। ইতোমধ্যে কোরবানীর পশুর হাট জমে উঠেছে। দেশীয় গরুর দাম বেশি হওয়ায় ভারতীয় গরুর তুলনায় বিক্রি হচ্ছে কম। লস দিয়ে খামার টিকিয়ে রাখা অসম্ভব বলে দাবি খামারিদের। কারণ ক্ষতিকর ওষুধ ব্যাতিত গরু মোটাতাজা করতে খবচ হয় বেশি। বিশেষ করে খর, ভূসি, খৈল, ভুট্টারগুড়া, কাচা ঘাষ খাওয়ায়ে গুরু মোটাতাজা করতে অনেক খরচ। এক্ষেত্রে ই্িন্ডয়ান গরুর তুলনায় দেশীয় গরুর দাম বেশি পড়ে। ক্রেতাটারাও কমদামে বড় গরু কিনে কোরবানী দিতে আগ্রহী বেশি। যে কারণে দেশীয় খামারিরা লোকসানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন। লোকসান দিয়ে খামার টিকিয়ে রাখা অসম্ভব বলে জানান অনেক খামারি ।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বাজার, বাকিলা বাজার, সফরমালী বাজার, বাগাদী চৌরাস্তা মুন্সির হাট, কচুয়া বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারের অর্ধেকের উপরে ভারতের গুরু। তথা সাদা রঙের গরুর প্রায় ৯০ভাগ ভারতীয় দেশি গরুর চেয়ে ভারতীয় গরুর দাম তুলনামুলক কম হওয়ায় চাহিদাও বেশি।
ক্রেতারা বলছে, পশু কোরবানী দেয়া হচ্ছে বড় কথা। দেশি না বিদেশে সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। এক্ষেত্রে দেশী গরু অবশ্য দেখতে অনেক সুন্দর ও সুঠামো। ভারতীয় গরুগুলো একটু লিকলিকে। আর বেশির ভাগ গরুই সাদা। অল্প কিছু আছে লাল ও কালো।
ভারতীয় গরুতে পশুর হাট সায়লাব হওয়াতে দেশীয় খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। এতে ভবিষ্যতে খামারিরা আগ্রহ হারাতে পারে। খামারিদের উদ্বুদ্ধ করতে সহজ শর্তে ঋণ দিতে বললেন চাঁদপুরের সচেতন মহল এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে সার্বিক ভাবে পরামর্শ দেয়া আহ্বান জানান অনেকে।
জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের তথ্য মতে এ বছর চাঁদপুরে দেড় হাজার খামারে ২৫ হাজার ৫শ ৯০ টি গরু , ও ৬‘ হাজার ৯‘ শ ৯০ টি ছাগল ভেড়া মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। এছাড়া ব্যক্তিগত ভাবে আরো প্রায় ৭০হাজার গরু পশুর হাটে বিক্রির জন্যে প্রস্তুত আছে।