সমাজ কর্ম থেকে অবসর নেয়া যায় না: গোলাম হোসেন
–
–
গোলাম হোসেন। সাবেক বিসিএস কর্মকর্তা। চাকুরি জীবনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং এনবিআরের সফল চেয়ারম্যানসহ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক। সরকারি চাকুরীর পাশাপাশি জন্মস্থান কচুয়া উপজেলায় একসাথে চালিয়ে যাচ্ছেন সমাজ কর্ম। গড়েছেন স্কুল কলেজ মাদ্রসা ও হাসপাতাল। এছাড়া গরীব মানুষকে প্রত্যক্ষ ভাবে সহযোগীতা করছেন। তিনি চাঁদপুর জেলার কচুয়ার উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের মিয়া বাড়ির সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। সরকারি চাকুরী থেকে অবসরের পর একটি কু-চক্রী মহল কর্তৃক তার বিরুদ্ধে অনয়িম ও র্দুনীতির মাধ্যমে সম্পদ র্অজনের অভিযোগ করলেও তা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন তিনি। গোলাম হোসেন ১৯৮০ সাল থেকে এলাকার মানুষের জন্যে কাজ করছেন। আজো করে যাচ্ছেন। বুকের ভেতর বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করলেও রাজনীতি করার ব্যাপারে ছিলেন দুদোল্যমান। যদিও চলতি বছরে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী মাঠ গুছাতে শুরু করেছেন। কচুয়ার মানুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে গিয়ে সংসদ সদস্য ড. মখা আলমগীরের অনুসারী কর্তৃক হামলার শিকার হয়েছেন। কচুয়ার মানুষ, উন্নয়ন, সমাজ সেবা ও রাজনৈকি প্রেক্ষাপট নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেছেন। নিচে তাঁর সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো।
– সময় কিভাবে কাটছে?
গোলাম হোসেন: আমি একটা সরকারি কোম্পানীতে কাজ করি। সেটা মোটামুটি ফুল টাইম কাজ। সপ্তায় পাঁচ দিন সকাল বিকেল। গবেষণামুলক সরকারি ফার্ম। বাকী সময় গ্রামের থাকি। মানুষের সাথে কথা বার্তা বলি। কেউ বলে রাজনীতি করি। আমি বলি সমাজ কর্ম করি। আমার উদ্যোগে এখানে একাধিক প্রতিষ্ঠান হয়েছে। এছাড়া আবাসন প্রকল্প আছে। আছে কলেজ হাসপাতাল। মা ও শিশু পাঠাগার আছে। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততা আছে। এগুলো দেখ-ভালো করতে গিয়ে অনেক সময় চলে যায়। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কিভাবে উন্নয়ন করা যায় সে ব্যাপারে কাজ করি। উন্নয়নে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলতে হয়। পরামর্র্শ দিতে হয়। সমস্যার সমাধান করতে হয়। কিভাবে আরো উন্নতি করা যায়, পরিকল্পনা করতে হয়। এছাড়া ঢাকায় যখন থাকি ক্লাবে যাই। খেলাধূলা করি। আমি এখনো টেনিস খেলি। মোটামুটি সরকারি চাকুরিরত অবস্থায় যেমন ব্যস্থ ছিলাম। এখন তার চেয়ে কম নয়। বলতে গেলে সম্ভবত তার চেয়ে বেশি ব্যস্ত এখন। সরকারি চাকুরী করাকালে মাসে এলাকায় দুইদিন আসতাম। এখন সপ্তায় দুইদিন তিনদিন আসার চেষ্টা করি। গ্রামের মানুষদের অনেক বেশি সময় দেই। এভাবেই সময় কাটে।
-কর্মব্যস্ত জীবন শেষে এখন কী একটু নিরিবিলি থাকতে মন চায় না?
গোলাম হোসেন: সত্যি কথা বলতে কী। আমি সমাজ কর্ম করি বহু বছর ধরে। ১৯৮০সাল থেকে এলাকায় এসে মা ও শিশুদের কিভাবে কল্যাণ করা যায়। ওভাবেই কাজ করার চেষ্টা করছি। সমাজ কর্ম এমন একটা জিনিস এখান থেকে অবসরের সুযোগ ন্ইে। আপনি সরকারি চাকুরী করেন অবসরের বয়স আছে। কিন্তু সমাজ কর্ম করা, মানুষের সাথে মেশা, কথা বলা একেবারে ভিন্ন জিনিস। এটা রাজনীতি না। এই কাজটা করতে গিয়ে গত আড়ই বছরে নিজের মাঝে প্রচ- তাগিদ অনূভব করছি। দিন দিন মানুষের প্রত্যাশা বাড়ছে।
কচুয়ায় একটা রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। সেটা কম বেশ সবাই জানে। অস্থিরতা হচ্ছে এরকম আমি এটাকে বলি ‘পলিটিক্স অব ইন টলারেন্ট’। মানে কেউ কাউকে আমরা সহ্য করতে পারি না। আমি যদি আওয়ামীলীগ করি বিএনপিকে সহ্য করতে পারি না। বিএনপি আওয়ামীলীগকে সহ্য করতে পারে না। অথচ বাংলাদেশের রাজনীতিতে গত দুই তিন দশক থেকে বাংলদেশের দুইট দল ব্যাতিত অন্য কোনো দলের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। যদিও শত শত দল আাছে। এগুলো অস্তিত্বহীন। এমনকি জাতীয় পার্টিও অস্তিত্ব হুমকিতে আছে।
আমরা রাজনীতিতে সহাবস্থানের গল্প শুনেছি। শুনেছি বঙ্গবন্ধর কথা। আমরা শুনেছি সবুর খানসহ আরো অনেক নেতার কথা। জেলে ছিলেন সবুর খান। বঙ্গবন্ধু তার পরিবারকে বাজার করে দিয়েছেন। পরিবারের লোকজন কি খায় খোঁজ খবর নিতেন। মন্ত্রী পর্যায়ের ব্যক্তিকে তিনি দায়িত্ব দিয়েছেন সবুর খানের পরিবারের দেখ ভালো করা জন্যে। বঙ্গবন্ধু যখন জেলে ছিলেন। শুনেছি সবুর খান বাসায় প্রতিদিন বাজার করে দিয়েছেন। অথচ দুইজন ছিলেন দুই রাজনৈতিক দলের মানুষ। তাদের সহাবস্থান ভ্রাতৃত্ববোধ এতো সুন্দর ছিলো মনে হয় সেগুলো শুধু গল্পেই মানায়। রূপকথার গল্প যেমন বাস্তবের সাথে সম্পর্ক নাই। বঙ্গবন্ধু ও সবুর খানের গল্প কচুয়ার মানুষের জন্যে রূপকথা। বর্তমানে এমন একটা পরিস্থিতি। কে কার বিরুদ্ধে কত মামলা করতে পারবে, কে কাকে এলাকা থেকে হটাতে পারে, লুটপাট করতে পারে। এসব কিছু হয়েছে। হচ্ছে। যেমন বিএনপি যখন ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেছে, লুটপাট থেকে শুরু করে এমন কোনো অপরাধ নাই যা হয় নাই। আবার আমরা যখন ক্ষমতায় আসছি দেখা গেছে বিএনপি বাড়ি ছাড়া হয়ে গেছে। যদিও অতবেশি বাড়াবড়ি আওয়ামীলীগ করে নাই এটা আপনী দাবি করতেই পারেন। কিন্তু বিএনপি খারাপ করলে আওয়ামীলীগও তা করতে হবে এমনতো কথা নয়। এলাকায় মামলা মোকদদ্দমা আর অস্থিরতা এখনো কিন্তু আছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের দলের মধে এটা থাকা উচিত না। কারণ আমরা বঙ্গবন্ধুর আর্দশে বিশ্বাসী। বঙ্গবন্ধুর সন্তান বঙ্গবন্ধুর সৈনিক যখন দাবি করি তখন কিন্তু অনেক বিষয়েই সহাবস্থান বা শান্তিপুর্ণ অবস্থান করতে হবে। কচুয়ায় এ জিনিসটা নেই। মানুষ খুব অতিষ্ঠ হয়ে গেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে যে, যদি দলের মধ্যে আপনাকে পছন্দ না হয় আপনাকে নিগৃহীত করা হচ্ছে। মামলা মোকদ্দমা সুযোগ সুবিধা থেকে শুরু করে এমনকি কথায় কথায় খোটা দেয়া হচ্ছে। আমি ও জানি, আমার সাথে কেউ দেখা করলেই বাধে সমস্য্য। সে হয়ে যায় এনবিআর। সে আর আমাদের নেতা কর্মীদের সাথে মিশতে পারে না। দেখা করতে পারেনা কথা বলতে পারে না। মনে হয় যেন একটা সামাজিক রাজনৈতিক বয়কট চলছে। এটা দিন দিন তীব্র হচ্ছে। এতে কিন্তু অশান্তি অস্থিরতা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বে যিঁনি আছে। তিনি বাংলাদেশের জন্যে গর্ব। কচুয়ার অহংকার। কচুয়ার যে উন্নয়ন করেছেন প্রায় সবটুকুই তার অবদান। এতোদসত্ত্বেও কথা থেকে যায। আপনী যত ভালো কাজই করেন। খারাপ কাজ যদি একটাও করেন সেটা মানুষের চোখে পড়ে বেশি। বাঙালী সমালোচনাও বেশি হয়। উঁনি (ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর) কিছু লোক দ্বারা এমন ভাবে পরিবেষ্টিত যে, আপনি যদি কোনো ভাবে ওনার সাথে দেখা করতে চান, তাহলে তাদের মাধ্যমে যেতে হবে। ওদের মাধ্যমে যেতে হলে ওদের কোটারির হতে হয়। অথবা ওদেরকে কোনো না কোনো ভাবে খুশি করতে হয়। এভাবে নেতা ও কর্মীর মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। সংসদস সদস্য কোনো ব্যক্তি বিশেষের এমপি নন। তিনি জনসাধারণের প্রতিনিধি। এলাকার জন্যে এমপি। উঁনি এ কথা মনে হয় ভুলে গেছেন। তিনি শুধুমাত্র তোশামদকারীদের আশপাশে রাখেন। তিনি ভুলে গেছেন কচুয়ার আবল বৃদ্ধ বনিতা তথা আপমর জনগনের এমপি তিনি। তিনি যেই মুহূর্তে এমপি হয়েছেন সবার জন্যে হয়েছেন। আমি শুধুমাত্র কয়েকজন অনুগত নেতার জন্যে নয়। মুষ্ঠিমেয় নেতা কর্তৃক ওনাকে এমন ভাবে আগলে রাখা হয়েছে, ওনি ওই পিঞ্জর থেকে বের হয়ে আসতে পারছেন না। খাচার মধ্যে পড়ে গেছেন। যদিও তিনি বিষয়টি এখনো অনুধাবন করছে না। একারণে একটা বিবাধমান অবস্থা তৈরি হয়েছে। কেউ নেতা পর্যন্ত পৌছতে পারছে না। অনেক কিছুই নেতা জানেন না। এমনকি জানা সম্ভবও হয় না।
-রাজনৈতিক সম্প্রতি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আপনার ভূমিকা কি থাকবে?
গোলাম হোসেন : কচুয়ায় এইযে রাজনৈতিক ধারা। গত কয়েক মাসে উপলব্ধি হলো যে, এটা মানুষ পছন্দ করছে না। মানুষ এটাকে ঘৃণা করছে। সে জন্যেই কচুয়ার মানুষ আমাকে বলেছে আমাদেরকে সঠিক পথ দেখান। আমি সেই প্রেক্ষাপটেই মানুষের ইচ্ছায় রাজনীতিতে এসেছি।
-রাজনৈতিক শুদ্ধ চর্চায় কী করা উচিত বলে মনে করেন?
গোলাম হোসেন: আমি মনে করি জনগণের সাথে নেতার দূরত্ব থাকা উচিৎ নয়। কোনো গোষ্টির দ্বারা পরিবেষ্টিত হওয়া উচিৎ নয়। নেতা জনগণের সমস্যা শুনতে হবে এবং সে সমস্যা সমাধান করতে হবে।
-আপনি সমাজ কর্ম করছেন? বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী, মানুষের কাছে যেতে আপনি কী ধরণের কৌশল অবলম্বন করবেন?
গোলাম হোসেন: জনগণের কাছে যাওয়ার বহু কৌশল আছে। যেমন সমাজ সেবার মাধ্যমেও জনগণের কাছে যাওয়া যায়। রাজনীতির মানে হচ্ছে মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া। তারপর আপনি একটা আাদর্শ নিয়ে কাজ করছেন। সে আদর্শ তাদের সাথে ভাগাভাগি করা। সে আদর্শের যে যে লক্ষ্য আছে সে লক্ষ্য গুলো অর্জনের চেষ্টা করা। মূলত যাদের জন্যে আপনি কাজ করবেন তাদের সাথে যদি কথা বলে কাজ করেন তাহলে অংশিদারিত্বমূলক উন্নয়ন হয়। আমি যে পরিবারের জন্যে কাজ করবো সে পরিবারকে বুঝাতে হবে আমি কি কাজ করছি। তার সম্মতি নিয়ে এমনকি তার তার সহযোগীতাও নিতে পারেন।
– বর্তমানে রাজনীতিতে যারা আসছেন অনেকেই ব্যবসা মনে করেন এটাকে। আপনার কী মনে করেন?
গোলাম হোসেন: রাজনীতিতে কে কোনো উদ্দেশ্যে আসবেন সেটা তার ব্যাপার।
-একসময় গুণিজনদের অগ্রধিকার দেয়া হতো? এখন?
গোলাম হোসেন: রাজনীতিতে কাদের আগ্রহ আছে সেটাও দেখার বিষয়। একসময় অনেক শিক্ষকরা এমপি মন্ত্রী হয়েছেন। এখন রাজনীতি করতে হলে অনেক টাকা লাগে। আর টাকা আছেই ব্যবসায়ীদের কাছে। সরকারি চাকুরীদেরতো অনেক টাকা থাকার কথা নয়। তবে কেউ কেউ সরকারি চাকুরীর সাথে সাথে ব্যবসাও করেন। আমি আড়াই বছর অবসর নিয়েছি। অনেক দিন চেষ্টা করেও ব্যবসায় কোনো লাইন করতে পারিনি। সুতরাং আমি চাকুরী বাকুরীতে চেষ্টা শুরু করলাম। এখন একটা চাকুরী করছি। মোট কথায় আমরা যদি সবাই মিলে কাজ করি তাহলে কিছু ভালো কাজ করা সম্ভব। আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু ভালো কাজ করতে হবে। আমি রাজনীতি করবো বলেছি মার্চ মাসের চার তারিখ। সমাজ কর্মতো অনেক আগে থেকেই করছি।
-শেষ প্রশ্ন, মধ্যম আয়ের দেশে হতে কী করণীয় কী?
গোলাম হোসেন: আশা করছি ২০২১ সালের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ে পৌছে যাবো। জনগণ যদি সব কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকেন তাহলেই আমরা আমাদের লক্ষ্য মাত্রায় খুব দ্রুত সময়ে পৌছে যাবো।
-আপনার রাজনৈতিক চর্চা সমৃদ্ধ হোক। সময় দেয়ার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ।