মরে গেছে দুধের শিশু, মানতে পারছেন না মা
শিশুকে আদর করেন না এমন মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে একেবারেই কম। আর তিনি যদি হন শিশুর মা; তাহলে তো কথাই নেই। যতোই সহিংসতার মধ্য দিয়ে জীবন পার হোক না কেন; ফুসরত মিললেই শিশুকে আদর করেন মা।
ছবির রোহিঙ্গা শিশু আবদুল মাসুদের মা হানিদা বেগমও তার ব্যতিক্রম নয়। রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর তাণ্ডবে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে এসেছেন তিনি। বুকের ধনকে এপারে নিয়ে আসতে পেরে তিনি যে কী খুশি, তা বোঝানোর ভাষা জানা নেই।
তবে যে শিশুর মুখে তিনি চুমু খাচ্ছেন, সে ঘুমিয়ে পড়েছে ঠিকই; তবে আর কোনো দিনই জেগে উঠবে না। খানিক বাদেই জেগে উঠবে বলে মনে হলেও সে চলে গেছে না ফেরার দেশে। কান্নাকে ভাষা বানিয়ে নিজের চাহিদার জানান দেবে না সে আর। চরম সঙ্কটের মুহূর্তে কয়েকদিন অনাহারে থাকা মাকে আর কষ্ট করে বুকের দুধও দিতে হবে না।
বৃহস্পতবার নদী পার হয়ে বাংলাদেশে আসার পথে নিঃশ্বাস ফুরিয়ে গেছে একমাস বয়সী মাসুদের। বার্তা সংস্থা এপি’র চিত্র সাংবাদিক তার ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করেছেন শিশু মাসুদের মরদেহ এবং তার মায়ের আর্তনাদ।
চরম দুঃখের দিনে কান্না থামাতে পারছিলেন না বাকিরাও মৃত সন্তানকে ধরে রোহিঙ্গা নারী হানিদার আকুতি দেখে। জাতিগত নিধনযজ্ঞ থেকে বাঁচতে শিশুদের নিয়ে স্বামীর সঙ্গে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন হানিদা। তার আরেক শিশুও রয়েছে; বেঁচে আছে সে।
ছোট নৌকায় করে বহু মানুষ পারাপারের চেষ্টার কারণে প্রায়ই নৌকাডুবির ঘটনা ঘটছে। হানিদাদেরও নৌকিা ডুবে গিয়েছিল। সেই ঘটনাতেই মৃত্যু হয়েছে তার একমাস বয়সী সন্তান আবদুল মাসুদের।
সন্তানের এভাবে মৃত্যু মেনে নিতে না পেরে হানিদা তার সন্তানকে জীবিত হিসেবেই কোলে করে নিয়ে আছেন। থেমে থেমে কাঁদছেন, আদর করছেন। তার কান্নায় রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের আকাশ আরও ভারী হয়ে উঠছে।