সন্তান চাওয়া নিয়ে যখন দাম্পত্য কলহ
পাঁচ বছর বিয়ের বয়স হতে চলেছে শায়লা এবং রিয়াদের। দুজনেই বেসরকারি সংস্থায় উচ্চপদে কর্মরত। একবছর আগে থেকেই সন্তান চাইছে রিয়াদ।
কিন্তু শায়লার তাতে তীব্র আপত্তি। তার কথা এসব নিয়ে এখনও ভাবার সময় আসেনি। আরো দুবছর পরে এ নিয়ে ভাববে সে। সন্তান এলেই চাকরিটা ছাড়তে হবে শায়লার। বাসায় আপনজন বলতে কেউ নেই। আর কাজের মানুষের কাছে কিংবা ডে কেয়ার সেন্টারে সন্তান রাখতে রাজি নয় ওরা। ক্যারিয়ারটা একদম নষ্ট হয়ে যাবে সন্তান মানুষ করতে গিয়ে, এটা ভাবলেই খুব কষ্ট হয়্ ওর। কিন্তু রিয়াদ আর মানতে রাজি নয় এসব। এই নিয়ে প্রায় দিনই দুজনের কথা কাটাকাটি, ঝগড়া, মান-অভিমান চলছেই।
ছন্দা আর নওশাদের সমস্যা আবার অন্যরকম। ছন্দা সারাক্ষণ ঘরেই থাকে। একা একা সময় কাটতে চায় না। তাই বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই ছন্দা সন্তান নিতে চাইছে। কিন্তু নওশাদের কথা ওর আয় দিয়ে সন্তান মানুষ করা সম্ভব নয়। তাই কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে ছন্দাকে। আজকাল নওশাদের সঙ্গে ভালো করে কথা বলে না ছন্দা। সারাক্ষণ মন খারাপ করে থাকে।
দুজন একসঙ্গে সন্তান চাইলে তার মতো আনন্দের তো আর কিছুই নেই। কিন্তু যদি তা না হয়? একজন সন্তান চাইছেন, আর একজন চাইছেন না- সম্পর্কে এরকম মোড় আসতেই পারে। কিছুতেই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। মনে সবসময় সংশয় থেকে যায়। কী করে সামলাবেন এই পরিস্থিতি এবং কীভাবে বোঝাবেন আপনার সঙ্গীকে? আপনার জন্য কিছু পরামর্শ-
* সঙ্গীকে ‘না’ বলার আগে মনে রাখুন বয়স কিন্তু একটা বিশাল ফ্যাক্টর। সন্তান ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখুন। বয়স বেশি হয়ে গেলে নারীর সন্তান ধারণে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। এরকম ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রী যারই আপত্তি থাকুক না কেন অপরজন ধৈর্য ধরে বোঝান।
* সব মানুষকেই কোনো না কোনো সম্পর্কে কিছুটা আত্মত্যাগ করতেই হয়। এরকমই একটা সম্পর্ক হল দাম্পত্য। এই সম্পর্কে প্রয়োজন কিছুটা কম্প্রোমাইজ, কিছুটা সেক্রিফাইস আর কিছুটা এডজাস্টমেন্টের।
* অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা সন্তান লালন পালন করার জন্য খুব জরুরি। সব রকম সুযোগ সুবিধা পেয়ে আপনার সন্তান মানুষ হোক, আপনি নিশ্চয় তাই চাইবেন। সন্তান লালন পালনের অতিরিক্ত মাসিক খরচ আপনি কিভাবে পূরণ করবেন, সন্তান ধারণের আগেই দুজন মিলে তার একটা পরিকল্পনা করে নিন।
* সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে দুজনের মতবিরোধ থাকতেই পারে। আপনার সঙ্গীর সমস্যা থাকলে তার কারণ বোঝার চেষ্টা করুন। যুক্তিপূর্ণ কারণ থাকলে তা মেনে নেওইয়াই আপনাদের দুজনের জন্য ভালো।
* আপনার মনে যদি কোনো ভয় কাজ করে, তাহলে দুজন মিলে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করুন। তাকে আপনাদের সমস্যাটা খুলে বলুন। প্রয়োজনে তিনি সবরকম পরীক্ষা করিয়ে নিয়ে আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারবেন।
* কখনোই সঙ্গীকে দোষারোপ করবেন না। মনে রাখবেন, আপনারা আলোচনা করছেন, ঝগড়া নয়।
* সঙ্গী নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নিলে, ভবিষ্যতে যদি এই কারণে কোনো অসুবিধা দেখা দেয় তার জন্য আপনার সঙ্গী দায়ী থাকবে, এরকম মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন।