পটুয়াখালীতে জ্বালানি-চালকবিহীন গাড়ি
পটুয়াখালী সংবাদদাতাঃ
এবার পেট্রল, ডিজেল নেওয়ার জন্য আর গাড়ি নিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না পাম্পে। আর সেই গাড়ি চালানোর জন্য কোনও চালক লাগবে না। কম্পিউটারের মাধ্যমেই রাস্তা দিয়ে ছুটবে গাড়িটি। কিন্তু জন্ম দেবে না কোনও দুর্ঘটনার। একইসঙ্গে গাড়িটি দিক বদলাবে, পথ বদলাবে। এমনকি পাশ কাটাবে অন্য গাড়ির, পথচারীদেরও। এই কথাগুলো অনেকটা ‘সায়েন্স ফিকশন’-এর মতো শুনতে লাগলেও এটাই ভবিষ্যৎ হতে চলেছে দেশের সড়ক পরিবহনে। আর সেই অভাস দিতেই বিশেষ প্রযুক্তির একটি গাড়ি তৈরি করেছেন পটুয়াখালীর এক ছাত্র।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার খানাবাদ ডিগ্রী কলেজের সাবেক ছাত্র মাহবুবুর রহমান শাওন জ্বালানী ও চালকবিহীন ওই গাড়িটি তৈরি করেছেন। আজ রবিবার মহিপুরেই তিনি তার আবিস্কার করা গাড়িটির প্রদর্শনী করেন।
মহিপুর কো-অপ্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও কুয়াকাটা খানাবাদ কলেজ থেকে এইসএসসি পাশ করেছেন শাওন। বর্তমানে ঢাকায় বাংলাদেশ প্লানেটর-এ রোবটের উপরে কোর্স করছেন তিনি। ছোট বেলা থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ তার। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করা অবস্থায় থেকেই বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র নিয়ে ঘাটাঘাটি করতেন তিনি। প্রাথমিকে পড়া অবস্থায় ডায়নামো তৈরি করে তার সাথে পাখা লাগিয়ে বাতাসে পাখা ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করেছিলন এই মেধাবী। এভাবে ছোটখাটো অনেক কিছুই তৈরি করেছিলেন তিনি।
ডিজেল-পেট্রল বাই-বাই: শাওনের এই আবিস্কার বলছে, হয়তো মঙ্গলের মাটিতে মানুষ নামার আগেই পৃথিবীর মাটি থেকে মুছে যাবে পেট্রল, ডিজেলে চলা গাড়ি, বাস, মিনিবাস, ট্যাক্সি আর ট্রাক! শহর থেকে গ্রামের সব প্রান্তের সড়কপথই ভরে যাবে ইলেকট্রিক্যাল ভেহিকল (ইভি) বা বৈদ্যুতিক (সৌর) যানবাহনে! এক সময় রাস্তায় দাপিয়ে বেড়ানো ঘোড়ার গাড়ির মতোই পেট্রল, ডিজেলে চলা গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন শুধুই ছবি হয়ে থেকে যাবে বইয়ের পাতায়।
নতুন প্রযুক্তিতে বানিজ্যিকভাবে এই গাড়িটি তৈরি হলে, পেট্রল, ডিজেলকে ‘বাই বাই’ জানাতে বাধ্য হবে যানবাহন। আর এই পূর্বাভাস দিয়েই মাহবুবুর রহমান শাওন বলছেন, গাড়ি নির্মাতা সংস্থাগুলিকে বেঁচেবর্তে থাকার নতুন নতুন পথ ভাবতে হবে। নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পথে হাঁটতে হবে। বাজারে তেলের চাহিদা অনেকটাই কমে যাবে বলে তেল-নির্ভর অর্থনীতির দেশগুলি পড়বে গভীর সংকটে, যদি না তারা বিকল্প অর্থনীতির বিকাশের দিশা খুঁজে পায়।
শাওন বলেন, বিশেষভাবে নির্মিত গাড়িটি পূর্ব নির্ধারিত পথে চালক ছাড়াই চলতে সক্ষম। কারণ এই গাড়িতে থাকছে বিশেষ এক ধরনের সেন্সর। উঁচু-নিচু রাস্তা দেখেই সেন্সরের মাধ্যমে গাড়িটি নিয়ন্ত্রিত হবে। এই গাড়িতে অন্তত চারজন যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। ছুটবে ঘণ্টা প্রতি ৪৫ কিলোমিটার বেগে। গাড়িটিতে রয়েছে ৪টি ব্যাটারি। উপরে থাকছে সৌর প্যানেল। সব মিলিয়ে ব্যয় হয়েছে দেড় লাখ টাকা।
তিনি বলেন, গাড়িটি চলার জন্য কোনও জ্বালানির প্রয়োজন নেই, সৌর শক্তির ওপর নির্ভর করে চলবে। স্বংয়কিয়ভাবে নিজে থেকে হর্ন দিতে পারবে। গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। অন্য যে কোনও যানবাহনকে পাশ কাটিয়ে চলতে পারবে। যানবাহনকে আঘাত করবে না। গাড়িটি চুরি করাও অসম্ভব, কারণ গাড়ি নিজেই কল করে মালিককে জানাতে সক্ষম। গাড়ির মালিক গাড়িটি বন্ধ করে দিতে পারবেন, যাতে চোর গাড়ি না চালাতে পারে। গাড়ির দরজাও তালা দিয়ে দিতে পারবেন, যাতে চোর গাড়ির বাইরে বের না হতে পারে।